ডেঙ্গি অভিযানে ভাটা
Dengue

মশা মারার তেল নেই, কামানও কম

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অথচ, মশা মারার তেলই অপ্রতুল। ছবিটা জেলার সদর শহর মেদিনীপুরের। কোনও ওয়ার্ডে সপ্তাহে একশো মিলিলিটার তেল দেওয়া হচ্ছে তো কোনও ওয়ার্ডে বরাদ্দ আরও কম। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ডেঙ্গি দমন অভিযান।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৭ ০১:২৬
Share:

ফাইল চিত্র।

ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। অথচ, মশা মারার তেলই অপ্রতুল। ছবিটা জেলার সদর শহর মেদিনীপুরের। কোনও ওয়ার্ডে সপ্তাহে একশো মিলিলিটার তেল দেওয়া হচ্ছে তো কোনও ওয়ার্ডে বরাদ্দ আরও কম। ফলে ব্যাহত হচ্ছে ডেঙ্গি দমন অভিযান।

Advertisement

মেদিনীপুরের কাউন্সিলর সৌমেন খান সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, “একশো মিলিলিটার তেলে কী হবে? এত বড় এলাকা। এক-দু’দিনেই এই তেল শেষ হয়ে যাচ্ছে।’’ তাঁর মতে, ওয়ার্ড পিছু মশা মারার তেলের বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। একবার নয়, সপ্তাহে অন্তত দু’- তিনবার তেল দেওয়া উচিত। না হলে এলাকায় মশার আঁতুড়ঘর ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কেন এত কম বরাদ্দ? সদুত্তর এড়িয়ে মেদিনীপুরের পুর-পারিষদ (জঞ্জাল) শিপ্রা মণ্ডলের জবাব, “মাঝে একটু সমস্যা ছিল। তবে এখন আর সেই সমস্যা নেই। ওয়ার্ডগুলোয় দেড়শো- দু’শো মিলিমিটার করে মশা মারার তেল দেওয়া হচ্ছে। সপ্তাহে একাধিকবার দেওয়ারই চেষ্টা হচ্ছে।”

মশার বংশ ধ্বংস করতে এক সময় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কেরোসিন তেল দেওয়া হয়েছিল। ওয়ার্ডপিছু পাঁচ লিটার কেরোসিন বরাদ্দ হয়েছিল। অবশ্য ওই একবারই, পরে আর কেরোসিন দেওয়া হয়নি। কেন? শিপ্রাদেবী বলেন, “ওই সময় জেলা থেকে কেরোসিন তেল এসেছিল। সেই তেলই বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেওয়া হয়। পরে আর আসেনি।’’

Advertisement

মশা মারার তেলের সঙ্কট পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন ব্লক এবং শহর জুড়েই। তেলের পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় জেলায় মশা দমন অভিযান ব্যাহত হচ্ছে বলেই বিভিন্ন মহলের মত। সর্বত্র তেল ছড়ানো যাচ্ছে না। পশ্চিম মেদিনীপুরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ৪৭৮ জন মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। বেসরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, সংখ্যাটা আরও বেশি। অসময়ের বৃষ্টি পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে। প্রশাসনের একাংশের মতে, হাল্কা বৃষ্টিকে তেমন অনেকে আমল দেননি। কিন্তু এর ফলে ফুলের টবে কিংবা ফাঁকা পাত্রে জল জমেছে। যাতে ডেঙ্গির জীবাণুবাহী মশা বংশবিস্তার করছে। তাপমাত্রা নামতে থাকায় ডেঙ্গির বিপদ কাটার আশা করছিলেন অনেকে। কিন্তু নিম্নচাপের বৃষ্টি সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় সব পঞ্চায়েত এবং পুরসভাকে রাস্তায় নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমা জলা এবং আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যাপারে আরও তত্পর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে সতর্কও করা হয়েছে।

শুধু তেল নয়, মশা তাড়াতে ধোঁয়া দেওয়ার জন্য যে কামান ব্যবহার করা হয়, জেলায় সেই কামানের সংখ্যাও কম। গতবার চারটি নতুন কামান কেনা হয়েছিল। সবগুলোই এখন অকেজো। অগত্যা স্প্রে মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের আশ্বাস, অকেজো মেশিনগুলো মেরামতের চেষ্টা চলছে। কয়েকটি পুরসভাকে নতুন মেশিন কেনার কথাও বলা হয়েছে। সেই মতো পুরসভাগুলো পদক্ষেপ শুরু করেছে। কামান অর্থাৎ ফগিং মেশিন দিয়ে ধোঁয়া ছড়ানোর কাজ হয়। সাধারণ ভাবে যে মেশিন ব্যবহৃত হয় সেগুলো স্প্রে মেশিন অর্থাৎ হ্যান্ড পাম্প মেশিন। হ্যান্ড পাম্প মেশিন যে কেউ চালাতে পারেন। তবে ফগিং মেশিন চালাতে প্রশিক্ষিত কর্মী প্রয়োজন। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার স্বীকারোক্তি, “নতুন মেশিন আসার ফলে গতবার কাজে সুবিধেই হয়েছিল। একসঙ্গে অনেকটা এলাকা জুড়ে ধোঁয়া ছড়ানো গিয়েছিল।’’ এখন অবশ্য সেই ভাবে ধোঁয়া ছড়ানোর কাজ হচ্ছে না। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরার কথায়, “ধোঁয়ায় মশা তাড়ানো সম্ভব। তবে সব দিক দেখে মশার লার্ভা মারতে তেল ছড়ানোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে।’’ কিন্তু এই তেলই তো অপ্রতুল? গিরীশচন্দ্রবাবুর জবাব, “এমনটা হওয়ার কথা নয়। খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন