সাতসকালে ট্রেন ডাকাতি, লুঠ ৬৮ লক্ষ

রাতের অন্ধকারে নয়, একেবারে সাতসকালে ঘটে গেলে ট্রেন ডাকাতি। পিস্তল আর ভোজালি দেখিয়ে পাঁচ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬৮ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। টাকা দিতে নারাজ এক ব্যবসায়ীর মাথাও ফাটল পিস্তলের ঘায়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৬ ০১:০৬
Share:

খড়্গপুর জিআরপি অফিসে জখম ব্যবসায়ীরা।নিজস্ব চিত্র।

রাতের অন্ধকারে নয়, একেবারে সাতসকালে ঘটে গেলে ট্রেন ডাকাতি। পিস্তল আর ভোজালি দেখিয়ে পাঁচ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ৬৮ লক্ষ টাকা নিয়ে চম্পট দিল দুষ্কৃতীরা। টাকা দিতে নারাজ এক ব্যবসায়ীর মাথাও ফাটল পিস্তলের ঘায়ে।

Advertisement

মঙ্গলবার সকাল ৮টা নাগাদ ডাউন ভদ্রক-হাওড়া প্যাসেঞ্জারের এই ঘটনায় আরও এক বার প্রশ্নের মুখে পড়ল ট্রেনের যাত্রী সুরক্ষা। জখম ব্যবসায়ী থেকে ওই ট্রেনের যাত্রী— সকলেরই অভিযোগ, ট্রেনে কোনও আরপিএফ ছিল না। খড়্গপুরে রেলের সিনিয়র ডিভিশনাল কর্মাশিয়াল ম্যানেজার কুলদীপ ত্রিপাঠির বক্তব্য, ‘‘সব এক্সপ্রেস ট্রেনে আরপিএফ থাকে। প্যাসেঞ্জার ট্রেনেও থাকার কথা। তবে আরপিএফের কর্মী কম। এই ট্রেনটিতে নিরাপত্তার কী ব্যবস্থা ছিল তা দেখছি।’’

ট্রেনে উঠে যাত্রীদের মারধর করে টাকা-গয়না লুঠের ঘটনা নতুন নয়। মাদক খাইয়ে বেহুঁশ করে ট্রেন যাত্রীর জিনিপত্র নিয়ে চম্পট দেওয়ার ঘটনাও ঘটে আকছার। তবে সাতসকালে প্যাসেঞ্জার ট্রেনে এমন ডাকাতির নজির খুব বেশি নেই।

Advertisement

এ দিন ডাকাতির ঘটনাটি ঘটে ভদ্রক-খড়্গপুর শাখায় বেলদা ও বাখরাবাদ স্টেশনের মাঝে। বেলদা থেকে একসঙ্গে ওই ট্রেনে উঠেছিলেন পাঁচ জন ব্যবসায়ী— পরেশ দাস, দীপক দেবনাথ, প্রিয়লাল দাস, শ্রীকৃষ্ণ দাস ও বিশ্বনাথ কর্মকার। এঁরা সকলেই বেলদার কলাবনির বাসিন্দা। কারও মুদি দোকান রয়েছে। কেউ বা সুপুরির পাইকারি ব্যবসায়ী। ব্যবসার কাজে তাঁরা হাওড়া যাচ্ছিলেন।

অভিযোগ, ট্রেন বেলদা স্টেশন ছাড়ার পরই ১০-১২ জন দুষ্কৃতীর একটি দল ওই ব্যবসায়ীদের কাছে আসে। তাদের হাতে ছিল পিস্তল ও ধারালো অস্ত্র। দীপক, প্রিয়লাল, বিশ্বনাথরা জানালেন, এরপর তাঁদের দিকে পিস্তল তাক করে দুষ্কৃতীরা। কয়েক ঘা মারধর দিয়ে দুষ্কৃতীরা বলে, ‘‘যার কাছে যা টাকা আছে দিয়ে দে। না হলে কিন্তু প্রাণে বাঁচবি না।’’

ভয়ে দীপক, প্রিয়লাল, বিশ্বনাথরা যাঁর কাছে যা নগদ টাকা ছিল, তা দিয়ে দেন। একমাত্র পরেশ টাকা দিতে রাজি হননি। তাই তাঁকে বেধড়ক মারধর করে দুষ্কৃতীরা। পিস্তল দিয়ে তাঁর মাথায় আঘাত করা হয়। মাথা ফেটে রক্ত ঝরতে থাকে। ওই অবস্থায় পরেশের কাছ থেকে টাকার ব্যাগ ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতীরা। এ সব দেখে ভয়ে গুটিয়ে যান অন্য যাত্রীরা। কেউ আর রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেখাননি। ‘অপারেশন’ শেষে পাঁচ ব্যবসায়ীকে ট্রেনের শৌচাগারে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয় দুষ্কৃতীরা। তারপর বাখরাবাদ স্টেশনে নেমে পালিয়ে যায় তারা। সকালবেলা হলেও প্রত্যন্ত এই স্টেশন ফাঁকাই ছিল। আরপিএফ-ও ছিল না। ফলে, দুষ্কৃতীরা নিশ্চিন্তেই চম্পট দেয়।

দুষ্কৃতীরা ট্রেন থেকে নামতেই কামরায় আলোড়ন পড়ে। সহযাত্রীরাই শৌচাগারের দরজা খুলে ওই ব্যবসায়ীদের বের করে আনেন। পরে নারায়ণগড় স্টেশনে নেমে ওই পাঁচ জন গাড়ি নিয়ে খড়্গপুরে আসেন। রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ততে জানানো হয়েছে, পাঁচ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে মোট ৬৮ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে ডাকাত দল। খড়্গপুরে প্রাথমিক চিকিৎসাও করান জখম ব্যবসায়ীরা।

ওই ব্যবসায়ীদের ধারণা, বেলদা থেকে এই ট্রেনে তাঁরা যে হাওড়া যাবেন তার আগাম খবর দুষ্কৃতীদের কাছে ছিল। সেই মতো ‘অপারেশন’-এর ছক কষেছিল তারা। তবে দুষ্কৃতীদের মুখ ঢাকা না থাকলেও কাউকেই চিনতে পারেননি ওই পাঁচ ব্যবসায়ী। জখম ব্যবসায়ী পরেশ বলেন, “ওরা নিশ্চয়ই আগাম খবর নিয়েছিল। না হলে দিনের আলোয় প্যাসেঞ্জার ট্রেনে উঠে এমন কাণ্ড ঘটানো সম্ভব নয়।” আর এক ব্যবসায়ী বিশ্বনাথের কথায়, “ব্যবসার কাজে মাঝেমধ্যে হাওড়া যাই। এরপর তো ট্রেনে উঠতেই ভয় করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন