শিল্পের চাকা ঘুরবে কবে, প্রশ্ন গড়বেতার

জমি রয়েছে। রয়েছে নতুন শিল্প গঠনের উপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থাও। তবুও শিল্পক্ষেত্রে আজও জেলায় পিছনের সারিতে গড়বেতা। আলু চাষ গড়বেতার অর্থনীতির ভিত্তি। আলু সংরক্ষণের জন্য এলাকায় রয়েছে অনেক হিমঘরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাষকে কেন্দ্র করে এলাকার অর্থনীতিকে মজবুত করতে সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি সরকার। ফলে দিনে-দিনে চাষের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরও আলু বা অন্যান্য সব্জি থেকে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি।

Advertisement

সুমন ঘোষ

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৫ ০১:০১
Share:

শেষমেশ এই হিমঘরই গতি। — নিজস্ব চিত্র।

জমি রয়েছে। রয়েছে নতুন শিল্প গঠনের উপযোগী পরিবহণ ব্যবস্থাও। তবুও শিল্পক্ষেত্রে আজও জেলায় পিছনের সারিতে গড়বেতা।
আলু চাষ গড়বেতার অর্থনীতির ভিত্তি। আলু সংরক্ষণের জন্য এলাকায় রয়েছে অনেক হিমঘরও। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, চাষকে কেন্দ্র করে এলাকার অর্থনীতিকে মজবুত করতে সে ভাবে উদ্যোগী হয়নি সরকার। ফলে দিনে-দিনে চাষের প্রতি নির্ভরতা বেড়েছে। রাজ্যে পালাবদলের পরও আলু বা অন্যান্য সব্জি থেকে কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠেনি।
গড়বেতার এক চাষির কথায়, ‘‘চাষে লাভ-ক্ষতির উপরই আমাদের খাওয়া-পরা নির্ভর করে। কোনও বছর লাভের মুখ দেখি। আবার কোনও বছর আলু মাঠে পড়েই নষ্ট হয়।’’ তিনি বলেন, ‘‘চাষকে কেন্দ্র করে শিল্পের বিকাশ ঘটা প্রয়োজন। না হলে আমাদের এই একই পরিস্থিতির মধ্যে সারা জীবন কাটাতে হবে।’’ গড়বেতার একাধিক বাসিন্দারই বক্তব্য, বেশি দিন আগের কথা ভাবতে হবে না, চলতি বছরের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিলেই ভবিষ্যতে ফল পাওয়া যাবে। এ বছর আলুর ফলন ভাল হওয়ায় তেমন লাভ হয়নি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে জমিতে পড়েই নষ্ট হয়েছে আলু। এলাকায় আলুর চিপস্‌ বা টম্যাটো সস তৈরির কারখানা গড়ে উঠলে এলাকার অর্থনীতিরই উন্নতি হবে।

Advertisement

স্থানীয় আলু চাষি অরুণ মাইতির কথায়, “দাম না থাকলে আলু নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। কিন্তু আলু থেকে কোনও কিছু উত্‌পাদন করার জন্য শিল্প তৈরি হলে দুশ্চিন্তা কমে।” একই ভাবে, গড়বেতার এক সব্জি চাষি সুশান্ত মালাকারেরও বক্তব্য, “এখন সর্বত্রই ‘ফাস্ট ফুড’-এর চল। স্বাভাবিক কারণেই বাড়ছে সসের চাহিদাও। টম্যাটো সস তৈরি করা গেলে কিছু বেকার ছেলের কর্মসংস্থান যেমন হবে, তেমনই আমাদের মতো সব্জি চাষিরাও দাম সম্বন্ধে নিশ্চিত থাকতে পারব।”

বিগত কয়েক বছরে শিল্পক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে পিছিয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর। শালবনিতে জিন্দলদের প্রস্তাবিত ইস্পাত কারখানা বিশ বাঁও জলে। খড়্গপুরের শিল্প তালুকেও সে ভাবে বড় কারখানা গড়ে ওঠেনি। পিছিয়ে পড়ার তালিকায় নাম রয়েছে গড়বেতারও। শিল্পের প্রয়োজনীয়তার কথা স্বীকার করে গড়বেতা-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, “গড়বেতায় জমি রয়েছে। রয়েছে শিল্পের উপযোগী যাতায়াত ব্যবস্থাও। এক দিকে জাতীয় সড়ক ও অন্য দিকে রেলপথ। তাই এ বার শিল্প স্থাপনে রাজ্য সরকার যাতে উদ্যোগী হয় সে জন্য আবেদন জানাব।”

Advertisement

গড়বেতা চেম্বার অব কমার্স-এর সাধারণ সম্পাদক সুব্রত মহাপাত্রও বলে ন, আমরা সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছি, যাতে এলাকায় একটি হাব তৈরি করা হয়। যেখানে উদ্যোগপতিরা তাঁদের সামর্থ্য অনুযায়ী প্রথমে ছোট পরিসরে হলেও উত্‌পাদন করতে পারবেন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হাবে উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহেরও ব্যবস্থা থাকবে। ফলে এক দিকে যেমন কাঁচামালের পরিবহণ খরচ লাগবে না, তেমনই উৎপাদন ব্যয়ওকমবে।”

বছর কুড়ি আগে গনগনিতেই একটি দুগ্ধ উত্‌পাদন প্রকল্প চালু হয়। তত্‌কালীন জেলাশাসক এম ভি রাওয়ের উদ্যোগে এই প্রকল্প চালু হয়। তৈরি করা হয়েছিল শেড। দেওয়া হয়েছিল গরুও। গড়বেতা ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামের মানুষকে দুগ্ধ উত্‌পাদনের কাজে লাগানোর পরিকল্পনা ছিল। ঠিক হয়েছিল, গ্রামের মানুষ সারাদিন গ্রামে চাষের কাজ করবেন। তারই মাঝে গো-পালনেও কিছুটা সময় দেবেন। প্রথম দিকে কিছুদিন চললেও ধীরে ধীরে প্রকল্পের অবস্থা খারাপ হতে থাকে।

প্রকল্প সফল না হওয়ার কারণ কী?

পঞ্জাব থেকে গরু আনা হলেও তাদের খাবারের খরচ দিনে-দিনে বাড়তে থাকে। অথচ দুধ বিক্রি করে খরচের বহর পোষানো যাচ্ছিল না। তাছাড়া গরুর কোনও রোগ হলে সে ভাবে চিকিত্‌সার সুযোগও ছিল না। প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই সময় গনিগনি থেকে দুধ নিয়ে আসার মতো পরিকাঠামোও ছিল না। সাধারণত, দুধ উত্‌পাদনকারীরা মিষ্টির দোকান, চায়ের দোকান বা বাড়ি বাড়ি দুধ পৌঁছে দিয়ে আসে। এ ক্ষেত্রে কে ওই জায়গায় গিয়ে দুধ কিনতে যাবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন প্রকল্প চালুর পর তা টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে তেমন ভাবে তৎপর হয়নি। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, “প্রকল্পের ভবিষ্যত্‌ না ভেবেই সেটি ওই জায়গায় তৈরি করায় বহু বেকার যুবক ক্ষতির শিকার হন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” তাই এ বার নতুন কোনও প্রকল্প তৈরির আগেই সব দিক বিবেচনা করা উচিত বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন