অপরিষ্কার: নিয়মিত সাফাই না হওয়ায় জমেছে জঞ্জাল। ছড়াচ্ছে দূষণ। অবরুদ্ধ নিকাশি নালাও। খড়্গপুরের ইন্দার টাকুরচকে । ছবি: দেবরাজ ঘোষ
দুর্গাপুজোর আগেই খড়্গপুর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা একশো ছাড়িয়েছিল। মশাবাহিত এই রোগ প্রতিরোধে তখন অভিযানে নামে পুরসভা। ব্যস, এই পর্যন্তই। পুজো মিটে গেলেও মশা নিধনে গত একমাসে পুরকর্মীদের তৎপরতা আর চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ শহরের বাসিন্দাদের। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে। গত এক মাসে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৭৭।
ডেঙ্গি রোধে পুজোর আগে বিশেষ সাফাই অভিযানে নামে পুরসভা। সেই সময় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ব্লিচিং পাউডার ও মশানাশক তেল ছড়ানো হয়েছিল বলে দাবি করে পুরসভা। যদিও শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একদিনই ব্লিচিং, তেল ছড়িয়ে দায়সারা হয়েছিল। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি, এমন এলাকাগুলোতেও নিয়মিত ব্লিচিং, তেল ছড়ানো হয়নি বলে অভিযোগ। যদিও পুজোর আগে পুরসভাকে সাফাই অভিযানে নামতে দেখে অনেকটাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলেন শহরবাসী। ফের প্রশাসনের উদাসীনতা বাড়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।
গত বছর শহরে ২৩জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৩৯৯জনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১৭৭ জনই খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা। দুর্গাপুজোর পর থেকে শনিবার পর্যন্ত গত এক মাসে প্রায় ৬৭ জন নতুন করে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন হাসপাতাল, নার্সিংহোমেও ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে অনেকে চিকিৎসাধীন। এর পরেও শহরে ঘুরলে চোখে পড়বে, বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার ধারে আবর্জনার স্তূপ। জঞ্জাল থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অনেক নিকাশি নালাও অবরুদ্ধ। মশার দাপটে অতিষ্ঠ শহরের বাসিন্দারা। শহরে দু’বার আবর্জনা পরিষ্কারের দাবি উঠলে হুঁশ নেই পুরসভার।
স্বাস্থ্য দফতরের তথ্য অনুযায়ী, খড়্গপুর শহরের সুভাষপল্লি, ভবানীপুর, ইন্দা, মালঞ্চ, পাঁচবেড়িয়া, নিমপুরা, খরিদায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ইন্দার বাসিন্দা অন্তরা আচার্যের কথায়, “আবর্জনা পরিষ্কার হলেও জল জমে থাকে। মশায় ভরে গিয়েছে এলাকা। তারপরেও পুজোর আগে থেকে এখনও কোনও মশানাশক তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে না। আমরা আতঙ্কে রয়েছি।” একই বক্তব্য কৌশল্যার বাসিন্দা প্রধান শিক্ষক মদনকুমার নাগেরও। তিনি বলেন, “এলাকায় আবর্জনা সাফাই হচ্ছে। বাড়ি-বাড়ি সমীক্ষাও চলছে। কিন্তু মশার উপদ্রব কমাতে ব্লিচিং পাউডার, তেল ছড়াতে দেখছি না।” ‘‘পুজোর আগে থেকেই মশানাশক তেল, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো বন্ধ। মশা মারতে আমরাই বাড়িতে তেল ছড়াচ্ছি। কিন্তু বাইরে থেকে মশা বাড়িতে ঢুকলে বাঁচার উপায় কী হবে জানি না।’’
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “পুজোর সময়ে কয়েকদিন ফাঁক হয়েছে ঠিকই। তবে দিনকয়েক আগে জেলাশাসকের সঙ্গে বৈঠকে পুরসভাকে ফের ডেঙ্গি মোকাবিলায় বিশেষ অভিযান শুরু করতে বলা হয়েছে। সমীক্ষাও শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকাতেও মশার লার্ভা মারার তেল, ব্লিচিং দিতে হবে পুরসভাকে।” জেলা উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা মশাবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধান বলেন, “শুধু বর্ষা নয়, এখন সারা বছরই ডেঙ্গির জীবাণুবাহক মশা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই আমরা জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর, সারা বছরই সজাগ থাকার স্লোগান দিচ্ছি। ডেঙ্গি প্রবণ এলাকায় দু’-তিন সপ্তাহে অন্তত একবার মশার লার্ভা মারার রাসায়নিক স্প্রে করতে হবে।”