Panskura

বোমায় দৃষ্টি হারিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুল-সেরা

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মেচগ্রামে সরকারি গুদামঘরের শ্রমিক সংগঠন কার দখলে থাকবে তা দু’টি রাজনতিক দলের মধ্যে শুরু হয় লড়াই

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৪:৪০
Share:

রাহুল দে। নিজস্ব চিত্র

রাজনীতির ক্ষমতা দখলের লড়াই করতে গিয়ে বোমা মজুত করেছিল দুষ্কৃতীরা। সেই বোমা ফেটে দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায় পাঁশকুড়ার কিশোর রাহুল দে’র। চোখের আলো নিভে গেলেও শিক্ষার আলোয় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে মনের জোরকে সম্বল করে প্রাণপণ লড়াই করেছিল সে। বৃথা যায়নি রাহুলের সেই লড়াই। ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে শুধু পাশই করেনি সে। স্কুলে সেরা হয়েছে হলদিয়ার হাতিবেড়্যা অরুণচন্দ্র হাইস্কুলের কলাবিভাগের ছাত্রটি।

Advertisement

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে মেচগ্রামে সরকারি গুদামঘরের শ্রমিক সংগঠন কার দখলে থাকবে তা দু’টি রাজনতিক দলের মধ্যে শুরু হয় লড়াই। অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক মদতপুষ্ট রাখা বোমাগুলি অন্যত্র সরানোর সময় কিছু বোমা ধানখেতে ফেলে যায়। দক্ষিণ মেচগ্রামের বাসিন্দা রাহুল তখন গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। দিনটা ছিল ১২ জানুয়ারি। মা-কাকিমা-সহ আরও অনেকের সঙ্গে মাঠে গিয়েছিল রাহুল। ফেরার সময় খেলার জন্য মাঠ থেকে কাচের বোতনের উপর রাখা মাটির ঢেলা কুড়োতে যায় সে। তখনই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ফেটে যায় বোতলটি। রাহুলের গোটা মুখ ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়। সেখানকার হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। চিকিৎসায় প্রাণ বাঁচলেও নষ্ট হয়ে যায় রাহুলের দুটি চোখই। ঘাটালে একটি সরকারি প্রতিবন্ধী স্কুলে দু’বছর ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা রপ্ত করার পর ২০১৫ সালে বিবেকানন্দ মিশন আশ্রম আবাসিক দৃষ্টিহীন শিক্ষায়তনে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। ২০১৮ সালে ওই স্কুল থেকে ৮৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে হলদিয়ার হাতিবেড়্যা অরুনচন্দ্র হাইস্কুলে একাদশে কলা বিভাগে ভর্তি হয় রাহুল। কিন্তু এখানে ব্রেইল পদ্ধতি না থাকলেও অডিও রেকর্ডারের মাধ্যমে ক্লাসের পড়াশোনা রেকর্ডিং করে তা শুনে শুনে মনে রাখত রাহুল।

শিক্ষা দফতরের অনুমতি সাপেক্ষে ‘রাইটার’ নিয়ে এ বছর উচ্চ মাধ্যমিকে বসেছিল রাহুল। ৮৭ শতাংশ নম্বর পেয়ে স্কুলের মধ্যে সেরা হয়েছে সে। প্রধান শিক্ষক স্নেহাশিস আচার্য বলেন, ‘‘ও সত্যিই দৃষ্টান্ত। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা ওকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছিলেন পড়াশোনার ব্যাপারে।’’ বড় হয়ে শিক্ষক হতে চান রাহুল। কিন্তু সে পথে প্রধান বাধা অর্থ। বাবা খোকন দে দিনমজুর। মা অপর্ণা পরিচারিকার কাজ করেন। ছেলের পড়াশোনা কী ভাবে এগোবে তা ভেবেই আকুল তাঁরা। মায়ের কথায়, ‘‘ভালভাবে পাশ করলেও আরও পড়ার জন্য অনেক টাকা দরকার। জানি না, কী ভাবে তার জোগাড় হবে।’’

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন