পাঠ: ভাষা দিবসে ঝাড়গ্রামের শিরষি গ্রামে। নিজস্ব চিত্র
কোনও দিনই স্কুলে যাওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁদের। চাষাবাদ ও দিনমজুরি করেই দিন গুজরান। ভাষা দিবসে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়া নাতি-নাতনিদের কাছে সাক্ষরতার পাঠ নেওয়া শুরু করলেন ঝাড়গ্রামের গড়শালবনি অঞ্চলের শিরষি গ্রামের জনা কুড়ি প্রবীণ-প্রবীণা।
ঝাড়গ্রাম শহর থেকে প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে জঙ্গলে ঘেরা শিরষি গ্রামে একসময় ছিল মাওবাদীদের ডেরা। গ্রামের ১২০টি পরিবারের বেশির ভাগ অনগ্রসর কুড়মি সম্প্রদায়ের। গ্রামে একটিই সরকারি প্রাথমিক স্কুল রয়েছে। আগে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরনোর পরেই স্কুল ছেড়ে দিত অধিকাংশ পড়ুয়াই। এখন অবশ্য পরিস্থিতি বগলেছে। কলেজ ছাত্রী বাণী মাহাতোর মতো গ্রামের তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এখন ঝাড়গ্রামের কলেজে পড়ছেন। কিন্তু গ্রামে এখনও অনেকে নিরক্ষর। ভাষা দিবসে নাতি নাতনির কাছে ‘হাতেখড়ি’ হল সরলা, চূড়ারানি, শকুন্তলা, নরেশ মাহাতোদের। অশীতিপর নরেশ পাত্র বলছেন, “লেখাপড়া জানি না বলে পঞ্চায়েতের সুযোগ সুবিধা গুলোও কীভাবে পেতে হয় বুঝতে পারিনা। লেখাপড়া শেখাটা জরুরি এতদিনে বুঝেছি।” প্রবীণা বাসন্তী মাহাতো, কমলা মাহাতোদের কথায়, “এই বয়সে লেখাপড়া শিখতে হবে ভেবে প্রথমে খুবই লজ্জা হয়েছিল।”
নরেশবাবু, কমলাদেবীদের সেই লজ্জা ভাঙিয়ে দিয়েছেন শিরষি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার-ইনচার্জ হিমাংশুশেখর মাহাতো ও দুই সহ-শিক্ষক আশিস সরকার ও দিপালি হাঁসদা। হিমাংশুবাবু, আশিসবাবুদের জানান, স্কুল ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় স্কুলে একটি পাঠাগার চালু করা হয়েছে। তাঁদের উদ্দেশ্য গ্রামের বয়স্করাও পাঠাগারে এসে বই পড়ে সময় কাটান। তখনই দেখা যায় গ্রামের বেশ কিছু মানুষ এখনও নিরক্ষর। তখনই সিদ্ধান্ত হয় স্কুলের পড়ুয়াদের দিয়েই বাড়ির বয়স্কদের সাক্ষর করানোর কর্মসূচি চালু করা হবে। প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের অনুমতি নিয়ে গ্রাম ঘুরে সমীক্ষা করে দেখা যায়, গ্রামের মোট ৭৫ জন নিরক্ষর আছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবাইকে পড়তে আসার অনুরোধ করা হয়।
বুধবার ভাষা দিবসে স্কুল প্রাঙ্গণে খুদে পড়ুয়াদের কাছে ভাষা শহিদ দিবসের কথা শোনেন প্রবীণ প্রবীণারা। এরপর শতরঞ্চি বিছিয়ে স্কুলপড়ুয়া নাতি অবিন মাহাতো, অঙ্কন মাহাতো, নাতনি রুম্পা মাহাতোদের কাছে অক্ষর লিখতে ও চিনতে শিখলেন বাসন্তী মাহাতো, চূড়ারানি মাহাতো, নরেশ মাহাতোরা। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ হিমাংশুশেখর মাহাতো জানান, সপ্তাহে দু’দিন চলবে বয়স্কদের সাক্ষর করার এই কর্মশালা। তিনি বলেন, ‘‘এ দিন সবাই আসেননি। আশা করছি ধীরে ধীরে বাকিরাও আসবেন।” ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ অমিয় মাহাতোর বাড়ি শিরষি গ্রামে। তিনি বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্যোগ ফলপ্রসূ করতে গ্রামের সবাই সহযোগিতার করছেন।”