SIR

নথি খুঁজতে বসে দেখেন বাবার নাম ভুল, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু দিঘার হোটেলমালিকের! পরিবার দায়ী করল এসআইআর-কে

সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরি। তাঁরও দাবি, ‘‘সিরাজউদ্দিনের মৃত্যুর পিছনে এসআইআরের আতঙ্কই দায়ী।’’ বিধায়কের সংযোজন, ‘‘উনি বা ওঁর পরিবারের কেউ কোনও দিন বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে আমরা শুনিনি।’’

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ১৯:০৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

রুজিরুটির জন্য দীর্ঘ দিন কেটেছে বিদেশে। পরে দিঘায় হোটেল তৈরি করেন। সেই ব্যক্তি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার পর এসআইআর বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় স‌ংশোধনকে দায়ী করল পরিবার। একই কথা বলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এসআইআরের আবহে ‘চতুর্থ মৃত্যু’ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শোরগোল।

Advertisement

পূর্ব মেদিনীপুরের রামনগর-১ ব্লকের কাঁটাবনী গ্রামের বাসিন্দা শেখ সিরাজউদ্দিন মারা গিয়েছেন রবিবার। শেষকৃত্যও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু সেখানেও জুড়ল এসআইআর-আতঙ্কের দাবি। পরিবারের বক্তব্য, এসআইআরের কথা ভেবে বিভিন্ন নথিপত্র খুলে বসেছিলেন সিরাজ। কোনও একটি নথিতে বাবার নাম ভুল দেখে তিনি চিন্তায় পড়ে যান। বাড়ির সকলকে সেই কথা বলেন উদ্বিগ্ন প্রৌঢ়। তার পরেই তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রৌঢ়ের এক আত্মীয়ের কথায়, ‘‘নাম ভুল ছিল নথিতে। ওই নিয়ে আলোচনা করতে করতেই আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়েন উনি। আমরা ওঁকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন।’’

সোমবার মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী অখিল গিরি। তাঁরও দাবি, ‘‘সিরাজউদ্দিনের মৃত্যুর পিছনে এসআইআরের আতঙ্কই দায়ী।’’ বিধায়কের সংযোজন, ‘‘উনি বা ওঁর পরিবারের কেউ কোনও দিন বাংলাদেশ থেকে এসেছেন বলে আমরা শুনিনি। কয়েক প্রজন্ম ধরে তাঁরা রামনগরের বাসিন্দা। সিরাজ কর্মসূত্রে বহু বছর জাপানে ছিলেন। তাঁর ছেলেও জাপান থেকে পড়াশোনা করে এসেছেন। বর্তমানে তিনি দিঘার প্রতিষ্ঠিত হোটেল ব্যবসায়ী।’’

Advertisement

অখিলের দাবি, এসআইআর নিয়ে সাধারণ মানুষ চরম উদ্বগের মধ্যে। সিরাজউদ্দিন বাবার পরিচয়পত্র ঘাঁটতে গিয়ে সেখানে ভুলভ্রান্তি দেখতে পান। রবিবার তিনি ওই নিয়ে পরিবারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেন। বাবার নাম ভুল থাকলে তাঁকে সমস্যায় পড়তে হবে, এই আশঙ্কার কথাও সকলকে জানিয়েছিলেন। তার পর তাঁর মৃত্যুর ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, এই মৃত্যুর পিছনে এসআইআর-আতঙ্কই দায়ী।’’

যদিও এই বিষয়ে মৃতের পরিবার পুলিশ বা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানায়নি। পরিজনদের দাবি, তারা জানে এসআইআরের আতঙ্কই মৃত্যুর মূলে। কিন্তু এ নিয়ে আইনি লড়াই করার ইচ্ছা বা শক্তি তাদের নেই।

বস্তুত, ‘এনআরসি-এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে’ গত সপ্তাহে আত্মহত্যা করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ কর। উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ সে কথাই বলা ছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা যায়। তার পর কোচবিহারের দিনহাটায় এক জনের আত্মহত্যার চেষ্টার মূলেও এসআইআর-আতঙ্ক ছিল বলে দাবি করে তৃণমূল। মৃতের পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বছর ষাটের ওই বৃদ্ধ। সম্প্রতি বীরভূমের ইলামবাজারেও এক বৃদ্ধ এসআইআর-আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে ইলামবাজার থানায় অভিযোগও দায়ের হয়। সোমবার হুগলির ডানকুনির বাসিন্দা ৬০ বছরের হাসিনা বেগমের মৃত্যুর নেপথ্যেও এসআইআরকে দায়ী করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement