জীবন বাজি/২

থানার নাকের ডগাতেই মজুত নিষিদ্ধ সরঞ্জাম  

উৎসবের মরসুম আসতেই বেড়েছে আতসবাজির চাহিদা। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে তৈরি হয় ওই সব আতসবাজি। দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তাতেও কি হুঁশ ফিরেছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।উৎসবের মরসুম আসতেই বেড়েছে আতসবাজির চাহিদা। পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বেআইনিভাবে তৈরি হয় ওই সব আতসবাজি। দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রাণহানিও হয়েছে। তাতেও কি হুঁশ ফিরেছে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:১০
Share:

প্রতীকী ছবি।

পাকা রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া এবড়ো খেবড়ো মোরাম রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই ছুটে এল প্রশ্ন, ‘‘এদিকে কোথায় যাবেন?’’ এক বাজি কারবারির সঙ্গে দেখা করার নাম কারখানার মালিকের নাম বলতেই সটান জবাব, ‘‘উনি এখন নেই। বাইরে গিয়েছেন। ফিরে যান।’’

Advertisement

এ রকমই রাস্তায় ‘পাহারা’র ব্যবস্থা কোলাঘাটের পয়াগ গ্রামের বান্দার পাড়ায়। কোলাঘাটের দেউলিয়া বাজার থেকে খন্যাডিহি বাজারগামী পাকা রাস্তা ধরে দু’কিলোমিটার এগোলেই পয়াগ গ্রামের মাইতি পাড়ার প্রবেশ পথ। অভিযোগ, ওই পাড়ার ৩০টি পরিবারের অধিকাংশই দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে বাজি তৈরির কাজে যুক্ত। অন্য এলাকার বাসিন্দাদের কাছে ওই এলাকা বান্দার পাড়া নামেও পরিচিত।

প্রতিবছর পুজোর মরসুমে গোটা পাড়া জেগে ওঠে। ঘরে ঘরে দেখা যায়, বাজি তৈরির ব্যস্ততা। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ওই পাড়ায় বাজি তৈরির কাজ চলে সারা বছর ধরেই। তবে আড়ালে আবডালে। স্থানীয়েরাই জানাচ্ছেন, দিনের বেলায় অধিকাংশ বাড়ির সামনে মহিলারা হোসিয়ারি, সেলাই বা ফিনিশিংয়ের কাজ করেন। আর বাড়ির ভিতরে বা কিছুটা দূরে মাঠের মধ্যে ছাউনি দিয়ে অবাধেই তৈরি হয় বাজি।

Advertisement

ওই এলাকার থেকে বড় জোর দু’কিলোমিটার দবরে রয়েছে কোলাঘাট থানা। প্রতি বছরই কালী পুজোর কিছুদিন আগে পাড়ায় গিয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বহু শব্দবাজি উদ্ধার করে। কিন্তু তাতেও বাজি কারবারের কোনও লাগাম পড়ে না বলে দাবি। এক ব্যক্তির কথায়, ‘‘উঠোনে রং মশাল, তুবড়ি, ফুলঝুরির মত আতসবাজি সাজিয়ে রাখে। কিন্তু একটু খোঁজ নিলেই বাড়ির ভিতরে ডেকে বিক্রেতারা জানতে চাইবেন, কি চাই? চকলেট বোমা, হাঁড়ি, আলু, কালী পটকা সব মিলবে।’’

স্থানীয় সূত্রের খবর, বেআইনি ওই ব্যবসার জন্য অনেককেই প্রাণ গিয়ে খোসারত দিতে হয়েছে। একাধিক বার বাজি তৈরির সময় ঘটেছে বিস্ফোরণ। মৃত্যুও হয়েছে ওই পাড়ায়। ২০১০ সালে কালী পুজোর ঠিক আগেই পরিতোষ মাইতি নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় তিন বাজি কারিগরের। কিন্তু ঘটনা থিতিয়ে যেতেই বান্দার পাড়া যথারীতি ফিরে গিয়েছে সেই পেশাতেই।

এমন কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাজি কারিগর বলেন, ‘‘পাড়ার কিছু পরিবার বংশ পরম্পরায় বাজি তৈরির পেশায় যুক্ত। এ জন্য তাদের লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু ওদের দেখে পাড়ার অন্য পরিবারও বাজি তৈরি করে। এখন তো গ্রামের মান্না পাড়া ও বেরা পাড়ার বাসিন্দারা বাজি তৈরি করে। আর সামান্য খরচেই তো চার-পাঁচগুণ বেশি লাভ পাওয়া যায়।’’

এ প্রসঙ্গে কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি তপন ঘড়া বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে ওই পাড়ায় বাজি বিস্ফোরণে কয়েক জন মারা যান। এতে পুলিশ পদক্ষেপ করে। তবে ওই এলাকায় বাজি তৈরির কাজে আরও পরিবার যুক্ত হচ্ছে, তা জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’’

কোলাঘাট থানার এক পুলিশ আদিকারিকের অবশ্য দাবি, ‘‘পয়াগ গ্রামে আতসবাজির পাশাপাশি শব্দবাজি তৈরির অভিযোগ পেলেই তল্লাশি অভিযান চালানো হয়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।’’ পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ঠিক নয় বলে তাদের দাবি।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন