বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ শেঠের সংস্থা ‘আই কেয়ার’-এর বিরুদ্ধে কয়েক কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করল ‘হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ’ (এইচডিএ)। বৃহস্পতিবার রাতে এইচডিএ-র অধীনস্থ সংস্থা ‘হলদিয়া ইন্টিগ্রেটেড ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি লিমিটেড’ (হিডাল)-এর পক্ষ থেকে হলদিয়ার ভবানীপুর থানায় আর্থিক তছরুপের অভিযোগ দায়ের হয়।
এইচডিএ সূত্রে খবর, ২০০৭ সালে লক্ষ্মণ শেঠ এইচডিএ-র চেয়ারম্যান থাকাকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্পের টেন্ডার পায় ‘আই কেয়ার’। ওই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ১০ কোটি টাকা ‘আই কেয়ার’কে দেয় ‘হিডাল’। এই প্রকল্পে বিভিন্ন শিল্প সংস্থার জন্য ‘টুল রুম’, ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ তৈরির দায়িত্ব পায় ‘আই কেয়ার’। ২০১২ সালে দিল্লি থেকে কেন্দ্রীয় শিল্প-বাণিজ্য মন্ত্রকের একটি প্রতিনিধিদল হলদিয়ায় পরিদর্শনে গিয়ে ওই প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বলে অভিযোগ।
এইচডিএ সূত্রে খবর, এরপরই ২০১৩ সালে ‘হিডাল’ ও ‘আই কেয়ার’-এর মধ্যে হওয়া দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বাতিল করে দেয় এইচডিএ। প্রকল্প রূপায়িত না হওয়ায় ‘আই কেয়ার’-এর থেকে টাকাও ফেরত চায় এইচডিএ। অভিযোগ, সেই সময় ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ফেরত দেয় ‘আই কেয়ার’। বাকি ৬ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা ‘আই কেয়ার’ বকেয়া রাখে বলে অভিযোগ। সে জন্য একাধিকবার ‘আই কেয়ার’কে আইনি নোটিস দেওয়া হয় বলেও দাবি। যদিও ‘আই কেয়ার’ কর্তৃপক্ষ তাতে কর্ণপাত করেননি বলে দাবি। অবশেষে থানায় আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগ দায়ের করা হয়।
এইচডিএ-র সিইও উজ্জ্বল সেনগুপ্তর অভিযোগ, “প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের টাকা নিয়ে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়নি। বারবার চিঠি দিয়ে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তারপরেও ‘আই কেয়ার’ কর্তৃপক্ষের সাড়া পাওয়া যায়নি। তিন বছর অপেক্ষা করার পর অবশেষে আইনি পদক্ষেপ করা হয়েছে।”
যদিও এই অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি ‘আই কেয়ার’-এর কর্ণধার লক্ষ্মণ শেঠের। তাঁর দাবি, “কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলেও শিল্প সংস্থাগুলির পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। চুক্তি অনুযায়ী ঠিক ছিল, বাণিজ্যিক ভাবে ‘টুল রুম’, ‘রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার’ ব্যবহারের পর শিল্পসংস্থাগুলি যে টাকা দেবে তা থেকে ‘আই কেয়ার’ ধার শোধ করবে। যদিও ‘হিডাল’ সেই কথা এখন মানতে চাইছে না।’’ লক্ষ্মণ শেঠের আরও দাবি, ‘‘এই প্রকল্পে আমাদের সংস্থাও চার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। ‘হিডাল’ সেই টাকার বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমাদের কোন প্রস্তাবও শোনা হচ্ছে না। যে চুক্তির অস্তিত্ব নেই, সেখানে আমি টাকা দেব কী করে? যৌথ প্রকল্পের দায় দু’জনেরই। এখন শুনছি ‘আই কেয়ার’-এর নামে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।”
এ বিষয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘বেশ কয়েক মাস ধরে চিঠি পাঠানো হলেও ‘আই কেয়ার’ কর্তৃপক্ষ টাকা শোধ করেননি। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের সিইও প্রায় ১০ কোটি টাকা ফেরত না দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে।”