পাহাড়: জমছে আবর্জনা। নিজস্ব চিত্র
পুজোর ছুটিতে সপরিবারে ঝাড়গ্রাম বেড়াতে গিয়েছিলেন স্কটিশ চার্চ কলেজের শিক্ষিকা রাজ্যশ্রী ঘোষ। সবুজ ঘেরা শালের জঙ্গল আর জঙ্গলের বুক চিরে যাওয়া কালো পিচের রাস্তা তাঁর বড় ভাল লাগে। কিন্তু এ বার চক্ষু চড়ক গাছ। কলাবনি থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়ার পথে রাজ্য সড়কের ধারে ক্রমাগত জমে উঠছে জঞ্জালের স্তূপ। গাড়ি করে শহরে ঢোকার পথে তা চোখে পড়েছে তাঁর।
ঝাড়গ্রামের মানচিত্রে শুধু এই পথ চলার আনন্দটুকুর জন্যই বার বার ফিরে আসেন পর্যটকেরা। অথচ, সেখানেই বাদ সাধছে এক শ্রেণির মানুষের অসচেতনতা। রাজ্য সড়কের ধারে জঙ্গলের ভিতরে জমা আবর্জনার দুর্গন্ধে পথ চলা দায় বলে তাঁদের অভিযোগ।
লোধাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম যাওয়া রাজ্য সড়কের কলাবনি এলাকায় রাস্তার দু’পাশে বেশ কিছুটা অংশে ঘন জঙ্গল রয়েছে। অভিযোগ, অরণ্যশহরের বেশ কিছু সংস্থা জঙ্গল রাস্তার ধারে এবং জঙ্গলের মধ্যে আবর্জনা ও বাতিল জিনিসপত্র ফেলে যাচ্ছেন। দিনে দিনে শালের জঙ্গল হয়ে উঠছে ‘ডাম্পিং গ্রাউন্ড’। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী যখন জেলা সফরে আসেন তখন তড়িঘড়ি শহর এলাকার রাস্তা পরিষ্কার করা হয়। কিন্তু শহরের উপকণ্ঠে অমন শালের জঙ্গল নোংরা হয়ে যাচ্ছে, প্রশাসনের হুঁশ নেই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রাস্তা রাস্তাটি পূর্ত দফতরের আওতাধীন। দু’পাশের জঙ্গল ও বন ভূমির মালিক বন দফতর। সেখানেই বাড়ি ভাঙার আবর্জনা, প্রাইভেট চেম্বারের মেডিক্যাল বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে। বাসিন্দারাই অভিযোগ করছেন, কখনও সাত সকালে, কখনও আবার দুপুরে নিরালায় গাড়িতে করে আবর্জনা ফেলে দিয়ে যাচ্ছে কে বা কারা। অভিযোগের তির সেই সব সংস্থার দিকে যারা বাতিল জিনিসপত্রের করবার করে। আবার ব্যক্তিগত ভাবে পুরনো বাড়ি ভাঙার আবর্জনা, বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের জঞ্জালও ফেলা হচ্ছে জঙ্গল রাস্তার ধারে।
রাজ্যশ্রীদেবী বলেন, ‘‘এর ফলে শাল জঙ্গলের নিজস্ব বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ করা দরকার।’’
বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শ নীলাঞ্জনা দাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জঙ্গলের মধ্যে দূষিত আবর্জনা ও স্বাস্থ্য পরিষেবাজাত বর্জ্য ফেলা হলে তা প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্রের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।’’ তিনি সাফ জানিয়েছেন, এতে ঝাড়গ্রামের ল্যাটেরাইট মাটির ক্ষয় খুব বেশি হতে পারে। বনভূমিতে এই সব বর্জ্য মাটি ও জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। খাদ্য শৃঙ্খলেও বিষাক্ত প্রভাব পড়বে।
ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মী মৃণ্ময় সিংহের দাবি, অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি সংশ্লীষ্ট মহলে। ঝাড়গ্রামের ডিএফও বাসবরাজ হোলেইচ্চি স্বীকার করেছেন, ‘‘রাস্তার ধারে বনভূমিতে আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। মানুষ সচেতন না হলে এই প্রবণতা বন্ধ হবে না। আমরাও সচেতনতা প্রচার শুরু করেছি।’’
ঝাড়গ্রামের উপপুরপ্রধান শিউলি সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘পুরসভার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে আবর্জনা না ফেলে কারা জঙ্গলে আবর্জনা ফেলছেন, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’ পূর্ত দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার (ঝাড়গ্রাম উপভুক্তি) প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘কিছু দিনের মধ্যে রাজ্য সড়কটি সংস্কার করা হবে। তখন সব পরিষ্কার করে দেওয়া হবে।’’