জয়ের শংসাপত্র নিচ্ছেন শিিশর অধিকারী। নিজস্ব চিত্র
বরাবর এই এলাকা তাদের লিড দিয়ে এসেছে। যা নিয়ে গর্ব ছিল শাসক দলের। কিন্তু ২০১৯-এ যে সে এমন ভাবে মুখ ফেরাবে তা ভাবনায় আনতে পারেনি শাসক দল। এ বার সেই তাল কাটাকে একেবারেই মানতে পারছেন না জেলায় শাসক দলের নেতারা।
তৃণমূল সূত্রে খবর, এ বার লোকসভা ভোটে আড়াই লাখের ব্যবধান ‘টার্গেট’ ছিল কাঁথি কেন্দ্রে। আশা ছিল খেজুরি থেকে হাজার তিরিশেক ভোটের ব্যবধান আসবে। কিন্তু সাত হাজারের সামান্য বেশি লিডেই থমকে গেল শাসকের রথ। বৃহস্পতিবার লোকসভা ভোটের ফল গণনার পর দেখা গেল খেজুরি বিধানসভার বেশ কয়েকটি গ্রাম পঞ্চায়েত ‘দখল’ করেছে গেরুয়া শিবির। খেজুরি-১ ব্লকের ৬টি পঞ্চায়েত শাসকের দখলে থাকলেও শোচনীয় পরিস্থিতি খেজুরি-২ ব্লকে। এখানে পাঁচটি পঞ্চায়েতের চারটিতেই হেরেছে শাসক দল। খেজুরি বিধানসভা এলাকায় মাত্র ৭,৭০০ ভোটের লিড মানতে পারছে না জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।
শাসক দলের অবশ্য দাবি, মূলত তিনটি কারণে তাদের ফল খারাপ হয়েছে। প্রথমত, কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা গ্রামে গ্রামে গিয়ে মহিলা ভোটারদের ভোট দিতে না যাওয়ার হুমকি দেয়। দ্বিতীয়, স্থানীয় এলাকার বেশ কিছু ক্লাব যারা রাজ্য সরকারের অনুদান পায়নি, সেই সব ক্লাবকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে মোটা অঙ্কের আর্থিক সহায়তা করা হয়। তারাই বিজেপিকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রচার করেছে। তৃতীয়, সিপিএমের যে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছে, তার পুরোটাই চলে গিয়েছে গেরুয়া শিবিরের দিকে।
এক নজরে খেজুরি বিধানসভা এলাকার পঞ্চায়েত ভিত্তিক ফল— কামারদা ৩৫০, হেঁড়িয়া ২১৩, লাখি ৫৫০, বারা তলা ২৭৬৪, হলুদ বাড়ি ৯৬৫, গরবাড়ি -১ নম্বর ৮৬৭, টিকাশি ১২১৫ এবং বীরবন্দরে ৮০০ ভোট বেশি পেয়েছে শাসক দল। কিন্তু খেজুরি-২ ব্লকের খেজুরি, জনকা, নিচ কসবা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়গুলি অনেক ব্যবধানে পিছিয়ে গিয়েছে তারা।
২০১৪ সালের লোকসভায় এই কেন্দ্র থেকে শিশিরবাবু ৩৮ হাজারের বেশি লিড পান। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে সেটা দাঁড়ায় ৪৩ হাজারে। স্থানীয়দের দাবি, খেজুরিতে অধিকাংশ বুথস্তরে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল বড় প্রভাব ফেলেছে। ভোটের কয়েকদিন আগে থেকে দলের স্থানীয় এক নেতাকে ‘বসিয়ে’ রাখা নিয়েও কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ছিল বলে তৃণমূলের একটি শিবির সূত্রে খবর। যে কারণেই খেজুরি এ বার দলকে অক্সিজেন দিতে পারেনি বলে মনে করছে দলের তৃণমূলের একাংশ।
লিড কমার বিষয়ে তৃণমূল বিধায়ক রঞ্জিত মণ্ডলের যুক্তি, ‘‘ধর্মীয় আবেগকে গোটা বিধানসভা এলাকায় কাজে লাগিয়েছে বিজেপি। টাকা দিয়ে মানুষকে প্রলোভন দেখানো হয়েছে। অনেক বিজেপির সেই পাঁদে পা দিয়েছেন।’’
সেদিক থেকে শাসক দলের জয়ের ব্যবধান কমার মানচিত্রে একমাত্র উজ্জ্বল ভগবানপুর। গতবারের তুলনায় কেবলমাত্র এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে শিশিরবাবুর লিড বেড়েছে। এর কারণ হিসাবে এলাকার তৃণমূল নেতা মানব পড়ুয়া বলেন, ‘‘দলের সমস্ত নেতা, কর্মীদের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়টিতে এখানে প্রথম থেকেই জোর দেওয়া হয়েছিল। তা ছাড়া এই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে একেবারেই মাথা তুলতে দেওয়া হয়নি। যেখানেই কোনও কোন্দল দেখা গিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে তা আলোচনায় মিটিয়ে ফেলা হয়েছে। যার ফলে এখানে দল এক কাট্টা হয়ে লড়াই করেছে।’’