ঠাকুরমণি মুর্মু।
এই তো সেদিনের কথা। লালমাটির জঙ্গল ঘেরা মাঠে পায়ে বল পেটাতে দেখে অনেকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতেন। তাঁকে শুনতে হয়েছে, ‘‘এই মেয়ে না কি খেলুড়ে হবে!’’
মন খারাপ করত। উপেক্ষার জবাব দিতে সব ভুলে অনুশীলনে আরও মন দিতেন শালবনির আসমানচকের ঠাকুরমণি মুর্মু। নিজেই নিজেকে বলতেন, ‘‘আমাকে পারতেই হবে।’’ পেরেছেন ঠাকুরমণি। ফুটবল মাঠে একের পর এক দুরন্ত পারফরম্যান্স দিয়েছেন। সেই সুবাদে মিলেছে চাকরিও। এখন তিনি পুলিশের সিভিক ভলান্টিয়ার। পরিজনদের চোখে ‘লক্ষ্মী’। তাঁকে দেখে উৎসাহ পেয়েছেন আরও অনেকে।
বাবা জগদীশ মুর্মু দিনমজুর। সামান্য জমিতে সংসার চলে না। তাই অন্যের জমিতে মজুর খাটতে হয়। মা কাজল সংসার সামলান। দুই ছেলে, এক মেয়ের মধ্যে ঠাকুরমণিই ছোট। বয়স কুড়ি পেরিয়েছে। সে দিনের কথা মনে রয়েছে ঠাকুরমণির। তাঁর কথায়, ‘‘অনেকে অনেক কিছু বলতেন। কখনও মন খারাপ করত। আমি জানতাম, পারব।’’
২০১২ সালে জঙ্গলমহল কাপে খেলেন ঠাকুরমণি। ফরওয়ার্ড পজিশনে খেলে সকলের নজর কাড়েন। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বছর দুয়েক আগে জঙ্গলমহল কাপে শালবনির মেয়েদের দল রাজ্যস্তরে রানার্স হয়েছিল। পুরস্কৃত করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, যাঁরা ভাল খেলেছেন, তাঁদের চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। চাকরি পেয়েছেন ঠাকুরমণি। অভাবের ঘরে হাসি ফুটেছে। অবশ্য অনুশীলনে ছেদ পড়েনি। সেদিনও যাঁরা বলতেন, ‘‘এই মেয়ে না কি খেলুড়ে হবে!’’ আজ তাঁরাই বলেন, ‘‘মেয়েটা দাপুটে খেলুড়ে হয়েছে।’’