ভোগান্তি: অবরোধ ওঠার পরেও দুর্ভোগ কমেনি। খড়্গপুর স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
নিশুতি রাতে হঠাৎ তৎপরতা খেমাশুলিতে। অবরোধ মঞ্চে এক এক করে ঢুকলেন পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝা়ড়গ্রামের পুলিশ সুপারেরা। এলেন খড়্গপুরের মহকুমা শাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। ভারত জাকাত মাঝি পারগানা মহলের নেতৃত্বের সঙ্গে শুরু হল বৈঠক।
সোমবার রাত ১টা থেকে শুরু হওয়া ওই বৈঠক চলল প্রায় দু’ঘণ্টা। কাটল জট। অবরোধ তুলল আদিবাসী সংগঠন। কোন আশ্বাসে কাটল জট? খড়্গপুরের মহকুমা শাসক সুদীপ সরকার বলেন, ‘‘আমরা বলেছি, আগামী ২৮সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও পরিবহণমন্ত্রী ওই আদিবাসী সংগঠনের সঙ্গে দেখা করবেন। তাতে আশ্বস্ত হয়ে ওঁরা অবরোধ তুলেছেন।” আদিবাসী সংগঠনের দিশম পারগানা নিত্যানন্দ হেমব্রম বলেন, “দুই জেলার পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে আলোচনার পরে রাত ৩টেয় আমরা অবরোধ তুলেছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রী ও পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার পরে আমাদের দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।”
মধ্যরাতের আলোচনার আগেও অবশ্য চেষ্টা হয়েছিল। খড়্গপুর থেকে ঝাড়গ্রামমুখী ৬, জাতীয় সড়কে একটি একতলা বাড়িতে দু’ দফায় বৈঠকে বসেছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। বিকেল থেকে শুরু প্রথম বৈঠক শেষ হয় সন্ধ্যার পর। রাত ৯টায় ফের এক দফায় বৈঠকে বসেন খড়্গপুরের মহকুমা শাসক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। কিন্তু দফায় দফায় আলোচনায় জট কাটেনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, শেষপর্যন্ত গভীর রাতের বৈঠকে বার্তা দেওয়া হয়, গুরুত্বপূর্ণ কয়েক দাবি নিয়ে অর্থবহ আলোচনা করতে প্রশাসন প্রস্তুত। এরপরই বরফ গলে। মাতৃভাষায় শিক্ষায় বঞ্চনা, সমাজকর্মীদের ‘অযথা’ বদলির প্রতিবাদ-সহ একাধিক দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল আদিবাসী সংগঠন। সোমবার সকাল থেকে শুরু আন্দোলনে প্রথম থেকেই ধৈর্যের পরিচয় পুলিশ-প্রশাসন। পাশাপাশি আন্দোলনকারীদের উপর চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল।
অবরোধ উঠলেও দুর্ভোগ কাটেনি সাধারণ মানুষের। মঙ্গলবারও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দিনভর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। ছুটিতে বাড়ি এসেছিলেন পাঁশকুড়ার বাসিন্দা পুনের একটি সংস্থার মার্কেটিং কর্মী গোপাল উত্থাসিনী। কর্মস্থলে পৌঁছতে আজাদহিন্দ এক্সপ্রেসে তৎকাল টিকিট কেটেছিলেন। ফেরার দিনেই আদিবাসী ধর্মঘট। কোনও রকমে খড়্গপুর স্টেশনে পৌঁছেছিলেন। সোমবার রাতে বাতিল হয়ে যায় ট্রেন। এরপর রাত কেটেছে খড়্গপুর স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের সামনে মেঝেতে। জোটেনি খাবার। মেলেনি জল। রেলের থেকে খাবার দেওয়ার কথা ঘোষণা হতেই ছুটেছিলেন। কিন্তু গোপালবাবুর অভিজ্ঞতা, “খাবার নিতে যেতেই দেখি খাবার শেষ। শুধু একটি আধ লিটারের জলের বোতল দিয়েছে রেল। তার পর এই মেঝেতেই পড়ে রয়েছি। জানিনা ফের রাতে কখন ট্রেন আসবে!” সোমবার রাতে বেলদা-সহ বহু স্টেশনে দেখা গিয়েছে একই ছবি। রেল সূত্রে খবর, এ দিনও দুপুর পর্যন্ত ১০টি মেল-এক্সপ্রেস ও ২৮টি প্যাসেঞ্জার ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়াও বিলম্বে চলেছে প্রতিটি ট্রেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে। সময়ে ট্রেনগুলি গন্তব্যে না পৌঁছনোর কারণে কিছু ট্রেন ফের বাতিল করতে হয়েছে। বাতিল হওয়া ট্রেনের যাত্রীরা টিকিটের দাম ফেরত পাবেন।”
টিকিটের দাম হয়তো পাওয়া যাবে। ভোগান্তির দায় নেবে কে?