হোমিও করেন অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা

দু-এক বছর নয়, এক দশকের বেশি সময় ধরে এ ভাবেই ওষুধ দিচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার পলাশচাবড়ির একটি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের দোকানে দেখা মিলল বসন্তবাবুর। ওই দোকানেই রোগী দেখে ২০০ টাকা ফি নেন তিনি। রমরমিয়ে চলে ‘ডাক্তারি’। ওষুধের দোকানের পাশাপাশি ‘মাইতি ডায়াগনস্টিক’ নামে একটি প্যাথলজি সেন্টারও রয়েছে তাঁর। সেখানে ইসিজি, রক্ত-সহ যাবতীয় পরীক্ষাই হয়

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০২:৫৮
Share:

এ-ও এক চিকিৎসা বিভ্রাট!

Advertisement

চিকিৎসকের শিক্ষাগত যোগ্যতা, রেজিস্ট্রেশন নম্বর নিয়ে হঠাৎই নড়ে বসেছে প্রশাসন। রাজ্য জুড়ে অভিযানে একের পর এক ধরা পড়েছেন ‘ভুয়ো চিকিৎসক’। কিন্তু গাঁ-গঞ্জে কে ভুয়ো, কে হাতুড়ে— তার খবর রাখে কে? এমন বহু চিকিৎসক আছেন, যাঁদের হোমিওপ্যাথি ডিগ্রি রয়েছে। কিন্তু তাঁরা চুটিয়ে প্র্যাকটিস করেন অ্যালোপ্যাথি পদ্ধতিতে। রীতিমতো প্রেসক্রিপশন লিখে রোগীকে পরামর্শ দিচ্ছেন অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খাওয়ার।

এ ভাবেই চিকিৎসা করছেন চন্দ্রকোনার পলাশচাবড়ির বসন্তকুমার মাইতি। দু-এক বছর নয়, এক দশকের বেশি সময় ধরে এ ভাবেই ওষুধ দিচ্ছেন তিনি। মঙ্গলবার পলাশচাবড়ির একটি অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের দোকানে দেখা মিলল বসন্তবাবুর। ওই দোকানেই রোগী দেখে ২০০ টাকা ফি নেন তিনি। রমরমিয়ে চলে ‘ডাক্তারি’। ওষুধের দোকানের পাশাপাশি ‘মাইতি ডায়াগনস্টিক’ নামে একটি প্যাথলজি সেন্টারও রয়েছে তাঁর। সেখানে ইসিজি, রক্ত-সহ যাবতীয় পরীক্ষাই হয়।

Advertisement

প্রশ্ন করতেই বসন্তবাবু বললেন, “আমি কী করে ভুয়ো ডাক্তার হলাম? আমার ডিগ্রি তো আছে।”

কী ডিগ্রি? রীতিমতো ডিএমএস।

কিন্তু সে তো হোমিওপ্যাথির জন্য!

এ বার ‘ডাক্তারবাবু’ বললেন, “আমি কোনও অন্যায় করিনি। কত লোকই তো করে!” কথাবার্তার মধ্যেই চিকিৎসকের লোকজন মোবাইলে প্রতিবেদকের ছবি তুলতে শুরু করেন। কেন ছবি তুলছেন? সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক বললেন, তিনি জানতেনই না উনি হোমিওপ্যাথি ডিগ্রিধারী। চোখ কপালে তুলে তিনি প্রশ্ন করলেন, “তা হলে প্রকাশ্যে অ্যালোপ্যাথিক প্র্যাকটিস করছেন কী করে?’’ তারপরেই জানালেন একগুচ্ছ অভিযোগ, ‘‘বসন্ত মাইতির কাছে চিকিৎসা করালে, ওঁর দোকান থেকেই ওষুধ কিনতে বাধ্য করা হয়। প্রয়োজনে, অপ্রয়োজনে নানা রকমের রক্ত পরীক্ষা দেওয়া হয়।’’

ভগবন্তপুর গ্রামের এক মহিলা আবার শোনালেন অন্য কথা। বললেন, “কিছুদিন আগেই কলকাতা থেকে এক আত্মীয় এসেছিল। তিনি হোমিওপ্যাথিতে বিশ্বাসী। তাই মাইতিবাবুর চেম্বারে গিয়েছিলাম। কিন্তু তিন বললেন ‘এখন কেউ হোমিওপ্যাথিক ওষুধ খায় না। অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খান রোগ ভাল হয়ে যাবে।’ শুনে তো তাজ্জব আমার আত্মীয়!” তবে বসন্ত মাইতি একা নন। চন্দ্রকোনা শহরেই ডিগ্রি ছাড়া রোগী দেখেন স্বপনকুমার রায়ও। প্রেসক্রিপশন বলছে তিনি নাকি নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ। কিন্তু ডিগ্রির প্রসঙ্গ উঠতেই কাঁচুমাচু গলায় স্বপনবাবু বললেন, “এ ভাবে রোগী দেখা ঠিক নয় জানি। তবে আমার একটা হোমিওপ্যাথি ডিগ্রি আছে।” কোথায় সে ডিগ্রি? তদন্ত প্রয়োজন।

স্বপনবাবুর অবশ্য ওষুধের দোকান বা প্যাথলজি সেন্টার নেই। তিনি সর্দি-কাশি, জ্বর-জ্বালায় ওষুধ লিখে দেন। স্থানীয় কয়েকজন জানালেন, ওষুধে তো কাজও হয়। তাই ওঁর কাছে যাই। তবে উনি যে ডাক্তারি পাশ করেননি, তা তো জানতাম না!

চন্দ্রকোনার এই দুই চিকিৎসকের খবর শুনেই তদন্ত শুরু করেছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “বিষয়টি আমি হোমিওপ্যাথিক কাউন্সিলে জানাচ্ছি। দুই চিকিৎসকের চেম্বারেই অভিযান করা হবে।” পাশাপাশি বসন্ত মাইতির ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অনুমতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা মালিকের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থার আশ্বাসও দেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন