স্বমহিমায়: মাস খানেক আগেই প্রশাসনের উদ্যোগে ঘাটালের একটি গ্রামে ভেঙে দেওয়া হয়েছিল চোলাইয়ের ঠেক। দাসপুরের একটি গ্রামে ফের প্রকাশ্যেই চলছে চোলাই তৈরি। নিজস্ব চিত্র
বারুইপুরে কাণ্ডের পরেও হুঁশ ফেরেনি প্রশাসনের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা জুড়ে প্রকাশ্যে চলছে চোলাই মদ তৈরি।
প্লাস্টিকের প্যাকেট বন্দি হয়ে চোলাই পাচারও হচ্ছে দিব্যি। চোলাই কারবারিদের কথায়, ‘‘চোলাই তৈরির জন্য লাইসেন্স হয় না। আবগারি দফতরের সম্মতিই যথেষ্ট।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, বিষমদ খেয়ে বারুইপুরে ১১জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও খেজুরি, মগরাহাট-সহ রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চোলাই মদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে ভেঙে ফেলা হয়েছে চোলাই ঠেক। নষ্ট করা হয়েছে কয়েক হাজার লিটার চোলাই। তবু বিষমদ তৈরিতে দাঁড়ি পড়েনি একেবারেই।
চোলাই কারবারিদের অভিযোগ, আবগারি দফতরের মদতে চলছে কারবার। তাই আড়ালে-আবডালে নয়, প্রকাশ্যেই চলে বিষমদ তৈরি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা আবগারি দফতরের সুপারিনটেনডেন্ট সুব্রত দাশগুপ্তের দাবি, “ধারাবাহিক অভিযানের জেরে জেলায় চোলাইয়ের রমরমা অনেকটা বন্ধ হয়েছে। তবে একেবারে নির্মূল হয়নি। আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গেও আলোচনা করছি। যৌথ ভাবে অভিযান শুরু হবে।”
আবগারি দফতরের এই দাবি যে কতটা অমূলক বুধবার দাসপুরের চাঁদপুর গ্রামের মালিক পাড়ায় ঢুকতেই তা টের পাওয়া গেল। ওই গ্রামের একটি পাড়ার রাস্তার দু’ধারেই পুকুর। আর সেই পুকুর পাড়ে পড়ে রয়েছে নানা বর্জ্য পদার্থ। চোলাই তৈরির পর এগুলি ফেলে দেওয়া হয়। তার থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। পাড়ায় ঢুকে দেখা গেল মদ তৈরিতে ব্যস্ত মহিলারাও। মাটির উনুনের সামনে জ্বালানি। প্লাস্টিকের ড্রাম ভর্তি চিটে গুড়। পাশে পড়ে রয়েছে অনেকগুলো কৌটো।
গ্রামের এক মহিলার কথায়, ‘‘চোলাইয়ের সঙ্গে এই রাসায়নিক মেশালে অল্প খেলেই নেশা হয়ে যায়। না হলে টাকা দিয়ে লোকে খাবে কেন এই মদ? সবাই তো বিলিতি মদই খাবে না কি?” যদিও দফতরের জেলার সুপারিটেন্ডডেন্ট সুব্রত দাশগুপ্তর দাবি, ‘‘এই জেলায় চোলাইতে রাসায়নিক মেশানো হয় না। অন্য জেলায় হয়।”
একই ছবি সুন্দরপুর, কাকদাড়ি, মনসুকা, বাসুদেবপুর, নন্দনপুর সহ দশ-বারটি গ্রামেও। চোলাই কারবারিদের একাংশের দাবি, পিরিডিন জাতীয় জৈব খার, কীটনাশক বিষ থেকে মিথানল, ইউরিয়া-সহ নানা রাসায়নিক মেশানো হয়। যদিও এক চোলাই ব্যবসায়ীর ক্ষোভের সুরেই বলেন, “আমরাও জানি এই সব মেশানো ঠিক নয়। কিন্তু ব্যবসার মোট আয়ের সত্তর ভাগই তো দিয়ে দিতে আবগারি-বাবু সহ অনান্যদের। আর রাসায়নিক মেশানো এই চোলাইয়ের বিক্রি বেশি। তাই বিক্রি করছি।’’
চোলাই বন্ধের জন্য সম্প্রতি ঘাটালের গোপমহলে প্রমীলা বাহিনীর আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনের জেরে এখন ওই গ্রামগুলিতেও চোলাই কারবার প্রায় বন্ধের মুখে। এছাড়াও ঘাটালেরই কামারডাঙা, মহারাজপুর সহ বিভিন্ন গ্রামেও মহিলারা একত্রিত হয়ে আন্দোলন চালাচ্ছেন। বারুইপুরের বিষমদ কাণ্ডের খবর শুনেছে সেই প্রমীলা বাহিনীও।
বাহিনীর পক্ষে দুর্গা মালিক বললেন, “আমাদের লক্ষ্য গোটা মহকুমা থেকেই চোলাই নির্মূল করা। কিন্তু এতটুকু জায়গা তো নয়। গোটা মহকুমা ঘুরে আন্দোলন চালাতে হলে প্রয়োজন টাকাও। সঙ্গে আমাদের সংসারও রয়েছে। যদি প্রশাসন আমাদের সঙ্গে থাকে, তাহলে নিশ্চয়ই গোটা মহকুমা চষে বেড়াব।’’