জল নেই, বন্ধ মিড-ডে মিল

ছোট্ট পেটে খিদের জ্বালা,  স্কুলে অনীহা

জল নেই স্কুলে। মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ প্রায় চার মাস। তাই আর স্কুলে যেতেও ইচ্ছে করে না খুদেগুলোর। ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের মধ্যে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

লালগড় শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share:

চাতক-দৃষ্টি: ট্যাঙ্ক আছে, জলে নেই। নিজস্ব চিত্র

জল নেই স্কুলে। মিড-ডে মিল রান্না বন্ধ প্রায় চার মাস। তাই আর স্কুলে যেতেও ইচ্ছে করে না খুদেগুলোর। ক্ষোভ বাড়ছে অভিভাবকদের মধ্যে।

Advertisement

নিতান্ত সাধারণ এক গ্রামের প্রাথমিক স্কুল। তবে, একেবারেই সাধারণ নয়। লালগড় ব্লকের দামুজানা গ্রামটিতে এক সময় দাপিয়ে বেড়াত মাওবাদীরা। তাই এখন মুখ্যমন্ত্রী যেখানে উন্নয়নের প্রচার করছেন, উন্নয়নের ঢেউয়ে মাও-প্রভাব খর্ব করার চেষ্টা চলছে, সেখানে দামুজানা হাঁটছে অন্য পথে।

স্রেফ পরিস্রুত জলের অভাবে সেপ্টেম্বর মাস থেকে মিড-ডে মিল রান্না হচ্ছে না দামুজানা আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুল চত্বরের সৌরশক্তি চালিত জল প্রকল্পটি খারাপ হয়ে গিয়েছে গত অগস্টে। সেটি মেরমতির জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে একাধিক বার অবেদন করেছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষ ও গ্রামবাসী। কাজ হয়নি।

Advertisement

প্রধান শিক্ষক অসীমকুমার দাঁ বলেন, ‘‘প্রশাসনিক মহলে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারপর স্থানীয় বাড়ি থেকে জল এনে মাস খানেক মিড-মিল রান্না করা হত। কিন্তু দূর থেকে জল বয়ে এনে রান্না করা, বাসন মাজার কাজ করতে ভীষণই সমস্যা হচ্ছিল। বিরক্ত হচ্ছিলেন আশপাশের বাসিন্দারাও।’’ ফলে সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রান্না।

রান্নার দায়িত্ব প্রাপ্ত স্বনির্ভর গোষ্ঠির যশোদা মুর্মু, কল্পনা গড়াই বলেন, “জল বয়ে এনে রান্না করা। তার উপর বাসন মাজা, পড়ুয়াদের এতগুলো থালা ধোয়া— জল জোগাড় করতে খুবই সমস্যা হচ্ছিল।’’ তাঁদের দাবি, ভাঁড়ারে পর্যাপ্ত চাল রয়েছে। শুধু জলের অভাবে রান্না বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

জঙ্গলমহলের অশান্তি পর্বে লালগড়ে ধরমপুর পঞ্চায়েতের আদিবাসী গ্রাম দামুজানা মাওবাদী অধ্যুষিত ছিল। প্রাথমিক স্কুলটির সিংহভাগ পড়ুয়াই আদিবাসী ও অনগ্রসর সম্প্রদায়ের। আগে হ্যান্ড টিউবওয়েলের আয়রন যুক্ত জলে মিড-ডে মিল রান্না হত। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে ২০১৪ সালে স্কুল চত্বরে ‘সোলার এনার্জি বেসড্ ওয়াটার পাম্পিং সিস্টেম’ বসানো হয়। পড়ুয়াদের পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা মেটে। ওই প্রকল্পে সৌরশক্তিচালিত ব্যবস্থায় পাম্পের মাধ্যমে ট্যাঙ্কে জল ভর্তি হয়। তারপর পাইপ লাইনের মাধ্যমে রান্নাঘরের ট্যাপে জল পাওয়া যায়। গত বছর তা খারাপ হয়েছে। কিন্তু টনক নড়েনি প্রশাসনের। অভিভাবক গোপীনাথ হেমব্রম, গুরুচরণ মাণ্ডিরা বললেন, “স্কুলে মিড-ডে মিল হয় না। তাই ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যেতে চায় না।’’ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভ নেই।

ধরমপুরের পঞ্চায়েতের প্রধান দ্রৌপদী চালক অবশ্য বলেন, “প্রকল্পটি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের। ব্লক প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে পাম্পটি সারানোর বিষয়ে উদ্যোগী হব।” লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী আবার বলছেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরী দফতরকে পাম্পটি অবিলম্বে মেরামতির জন্য বলা হয়েছে। স্কুলে বিকল্প জলের ব্যবস্থা করার জন্য ব্লক প্রশাসন উদ্যোগী হচ্ছে।”

ঝাড়গ্রাম জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের (খনন) অ্যাসিস্টান্ট ইঞ্জিনিয়ার রাহুল গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু পাম্প খারাপ। অভিযোগের ক্রমানুসারে সেগুলি সারানো হচ্ছে। ওই স্কুলের পাম্পটিও শীঘ্র সারিয়ে দেওয়া হবে।” উপরন্তু দফতর সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ওই ধরনের সৌরচালিত পাম্পের যন্ত্রাংশ বেঙ্গালুরু থেকে আনাতে হয়। তাই দেরি হচ্ছে।

যদিও এ সব যুক্তি-তর্ক বোঝে না ফাগু কিস্কু, শীতল কিস্কু, দুর্গামণি সরেনরা। তাদের ছোট্ট পেটে খিদের জ্বালা প্রবল। ওরা বলে, “অনেকদিন ধরে স্কুলে খাবার দেওয়া হচ্ছে না। খিদে নিয়েই সারাদিন ক্লাস করি।” অনেকে আবার স্কুলে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন