গত বছর তাজপুরের রিসর্টে কাজের সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় এক নির্মাণ শ্রমিকের। মৃত সন্দীপ খাটুয়ার (২৪) স্ত্রী পার্বতী খাটুয়া থানায় অভিযোগ জানাতে গেলে হয়রানির শিকার হন বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। সম্প্রতি আদালত ওই ঘটনায় রামনগর থানাকে চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ২০ অক্টোবর তাজপুরের রিসর্টে ঠিকা শ্রমিকের কাজ করছিলেন সন্দীপবাবু। ছাদে একটি লোহার রড তোলার সময় রিসর্টের পাশের হাইটেনশন বিদ্যুতের তারে লেগে যায়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। প্রশাসন সূত্রে খবর, নিয়ম লঙ্ঘন করে রিসর্টটি তৈরি হচ্ছিল। ঘটনার পরে মৃতের স্ত্রী অভিযোগ জানাতে প্রথমে মন্দারমণি থানায় যান। সেখান থেকে বলা হয় রামনগর থানায় যেতে। রামনগর থানায় গেলে তাঁকে ফের মন্দারমণি থানায় পাঠানো হয় বলে অভিযোগ।
অভিযোগ, মৃতের স্ত্রী পার্বতীদেবী সমস্যার সুরাহা চেয়ে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ একাধিক প্রশাসনিক আধিকারিকের কাছে গেলেও কোনও কাজ হয়নি। পার্বতীদেবীর দাবি, ‘‘ঘটনার পর বিধায়ক অখিল গিরি বাড়িতে এসে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখা করলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন কিছু করতে পারবেন না।’’
যদিও অখিলবাবু বলছেন, ‘‘মৃত্যুর পর ওনাদের বাড়িতে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম। যতটুকু জানি স্থানীয় পঞ্চায়েত তাঁকে সাহায্য করেছে। আমি আর কী সাহায্য করব। ওঁরা ভুল বলছে।’’
সুবিচার পেতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মৃতের স্ত্রী। এই মামলায় গত ২৭ এপ্রিল রামনগর থানাকে আদালত নির্দেশ দেয়, আগামী ২০ মে আদালতে গরমের ছুটি পড়ছে। ওই দিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে হবে।
মৃতের ভাই জ্যোতির্ময় খাটুয়ার অভিযোগ, “ঘটনার সময়ই বিডিও বলেছিলেন, সেটি বেআইনি হোটেল। ওই হোটেলের গা ঘেঁষে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার গিয়েছে। অথচ সেই হোটেল এখনও রমরমিয়ে চলছে। যে কোনও ফের বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’’ সন্দীপবাবুর বাবা সুবোধ খাটুয়া বলেন, ‘‘ছেলের মৃত্যুর পর ওই রিসর্টের লোক এসে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছিল। আমরা নিতে না চাইলেও জোর করে ওঁরা টাকা দিয়ে যায়। আমার ছেলের জীবন কি এতই ঠুনকো।’’
তাজপুরের ওই রিসর্টের অন্যতম মালিক স্বপন দোলই বলছেন, ‘‘হোটেল বেআইনি কি না সেটা প্রশাসন বিচার করবে। হোটেল নির্মাণের জন্য আমরা উত্তম জানাকে টেন্ডার দিয়েছিলাম। উত্তমবাবুই কাজের জন্য সন্দীপ খাটুয়াকে নিয়ে এসেছিলেন। এই বিষয়টি উত্তমবাবুর দেখার কথা।’’
তাঁর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েতের মাধ্যমে আমরা ওদের টাকা দিতে চেয়েছিলাম। ওনারা টাকা নিতে চাননি।’’ এ বিষয়ে রামনগর-১ ব্লকের বিডিও অনুপম বাগ বলেন, “ঘটনাটি জানি। ক্ষতিপূরণের জন্য পার্বতীদেবী আমার কাছেও এসেছিলেন। কিন্তু সরকারি নিয়ম অনুযায়ী কোনও ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব হয়নি।’’ তিনি বলছেন, ‘‘ওই রিসর্টের পাশ দিয়ে বিদ্যুতের হাইটেনশন তার গিয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে পর্যটকেরাও দুর্ঘটনায় পড়তে পারেন। তাই ওই হোটেলের মালিককে নোটিস পাঠানো হবে।’’