খড়্গপুরের ছোট ট্যাংরায় কংগ্রেস প্রার্থী রবিশঙ্কর পাণ্ডের সমর্থনে মিছিল। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
লড়াইটা এ বার ‘কঠিন’।
গত পুরভোটে খড়্গপুরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ক্লিন সুইপে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। জামানত জব্দ হয় প্রতিপক্ষ সিপিআই প্রার্থীর। গত লোকসভা ভোটের পর রেলশহরে গেরুয়া ঝড় নিয়ে অল্পবিস্তর চিন্তিত সব রাজনৈতিক দলই। যদিও এ বিষয়ে ভাবতে নারাজ খড়্গপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে। জয় নিয়ে প্রত্যয়ী ২৫ বছরের কাউন্সিলর রবিশঙ্করবাবুর দাবি, তিনি না কি লড়াই করার প্রতিপক্ষই খুঁজে পাচ্ছেন না। যদিও ঘনিষ্ট মহলে বিজেপি প্রার্থীর সঙ্গে লড়াইয়ের কথা স্বীকার করেছেন তিনি।
ছাত্র জীবনেই রাজনীতির শুরু। কংগ্রেসের হয়ে ভোটে লড়ে ১৯৯০ সালে প্রথম কাউন্সিলর হন। ১৯৯৩ সালে পুরবোর্ডে বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পান। আর রবিশঙ্করবাবুর নেতৃত্বেই ১৯৯৫ সালের পুরভোটে সাফল্য পায় কংগ্রেস। ১৯৫৪ সালে পুরসভার জন্মলগ্ন থেকে খড়্গপুরে ছিল বামেদের আধিপত্য। বামফ্রন্টকে পর্যুদস্ত করে সে বারই প্রথম রেলশহর দখল করে কংগ্রেস। টানা ১৫ বছর পুরপ্রধানের রবিশঙ্করবাবু।
গত বার প্রতিপক্ষ সিপিআই প্রার্থীকে ১৪৫৯ ভোটের ব্যবধানে হারান। তবে কংগ্রেসের ফল আশাব্যঞ্জক ছিল না। পুরসভার ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল। যদিও সাড়ে তিন বছর পরেই অনাস্থা এনে রবিশঙ্কর পাণ্ডের নেতৃত্বে বোর্ড পুনর্দখল করে কংগ্রেস। এ বারও রবিশঙ্করবাবুকে সামনে রেখেই রেলশহরে লড়াই করছে কংগ্রেস। খড়্গপুরের বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল (চাচা) আস্থা রাখছেন রবিশঙ্করের উপরই। চাচার কথায়, “রবি এত বছর ধরে দক্ষতার সঙ্গে পুরবোর্ড চালিয়েছে। ওঁর মতো যোগ্য পুরপ্রধান খুঁজে পাওয়া কঠিন।”
শুধু নিজের ওয়ার্ড নয়, খড়্গপুরের অন্য ওয়ার্ডে কংগ্রেস প্রার্থীদের হয়ে প্রচারেও দিন-রাত এক করছেন শহরের বিদায়ী পুরপ্রধান। রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “সারাবছর যাঁরা কাজ করে তাঁদের কাছে লড়াই কখনও কঠিন নয়। কিন্তু বিষয়টা খুব সহজও নয়”
যদিও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ওড়িয়া বস্তিতে অনুন্নয়ন নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। এই ক্ষোভের ফায়দা তুলতে চাইছেন ওই ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী আকাশ কুমার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই ওয়ার্ডের ঝাপেটাপুরে বসবাসকারী অবাঙালি ভোটারদেরই পাখির চোখ করছে বিজেপি। যদিও রবিশঙ্কর পাণ্ডের বক্তব্য, “আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনেই করছি না। এক থেকে দেড় হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়ী হব। কারণ, আমি সারাবছর কাজ করেছি।”
রেলশহরে একমাত্র কংগ্রেসই পুরপ্রধানের নাম ঘোষণা করে লড়াইয়ে নেমেছে। যদিও এ বিষয়ে জেলা বিজেপি-র সভাপতি তুষার চৌধুরী বলছেন, “রবিশঙ্কর পাণ্ডে দল ভাঙাতে পারে, তাইে তাঁকে খুশি করতেই এই নাম ঘোষণা।” তৃণমূলের এক জেলা নেতার কটাক্ষ, “বাঁশ বনে শেয়াল রাজার মতো কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডের অবস্থা।”
প্রথমে হেভিওয়েটদের প্রচারে আনার কথা বললেও পরে অধীর চৌধুরী ও মানস ভুঁইয়া ছাড়া আর কাউকেই প্রচারে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে রবিশঙ্করাবাবু বলেন, “তারকা প্রচারে বিশ্বাসী নই। কারণ সন্ধ্যা রায়কে বাবা তারকনাথে শেষবার দেখেছিলাম। মানুষের ভোটে জয়ী হলেও পুরভোটের আগে তিনি শহরে আসেননি।’’