বলি: শালগাছে কোপ অরণ্যশহরে। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য জুড়ে ঘটা করে পালন করা হবে বন মহোৎসব। আজ, শনিবার ওই উৎসবের মূল অনুষ্ঠানটি হবে ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুরের ছাতিনাশোলে। অথচ এই ঝাড়গ্রামেই নির্বিচারে সবুজ ধ্বংসের অভিযোগ উঠছে। গত দু’তিন বছর আগে যে পর্যটক অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রামে ঘুরে গিয়েছেন, তাঁরাই এখন পুরনো স্মৃতির সঙ্গে বর্তমানের মিল খুঁজে পাচ্ছেন না।
পুরসভার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৮ সালে ২১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ঝাড়গ্রাম শহরে সবুজের পরিমাণ ছিল ৮ বর্গ কিলোমিটার। ২০০৬ সালে তৎকালীন বাম পুরবোর্ড একটি সমীক্ষা করিয়েছিল। সেই সমীক্ষা অনুসারে, ২০০৬ সালে অরণ্য শহরে সব মিলিয়ে সবুজের পরিধি ছিল মাত্র ৩ বর্গ কিলোমিটার।
এর পরে রাজ্যে শাসকের বদল হয়েছে। জেলার শহরের তকমা পেয়েছে ঝাড়গ্রাম। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা রূপায়ণ করতে গিয়ে ঝাড়গ্রাম শহর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে সরকারি ভাবে কয়েক হাজার শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঝাড়গ্রামের বাসিন্দা সৌরভ মুদলি বলেন, ‘‘কয়েক বছরে যে হারে শহর এবং আশেপাশের এলাকা থেকে শালগাছ কেটে ফেলা হয়েছে এবং কৌশলে মেরে ফেলা হয়েছে, তাতে সবুজের পরিমাণ কমে গিয়েছে।” সরকারি সূত্রের খবর, প্রায় ২০০টি বহু পুরনো শাল গাছ কেটে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের সম্প্রসারণ ও স্পোর্টস কমপ্লেক্স করা হয়েছে। হাসপাতাল চত্বরে নার্সিং ট্রেনিং স্কুল ভবন এবং সিএমওএইচ অফিস তৈরির জন্য আড়াইশোরও বেশি শালগাছ কাটা হয়েছে। ঝাড়গ্রামের কদমকানন এলাকায় পুলিশ সুপারের অফিস তৈরির জন্য ৬ হেক্টর শাল জঙ্গল কেটে ফাঁকা করে দেওয়া হয়েছে।
এক পর্যটক বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে যখন ঝাড়গ্রামে এসেছিলাম, তখন হাসপাতাল লাগোয়া একটি রাস্তায় দেখেছিলাম, শালগাছ চাঁদোয়ার মতো হয়ে রয়েছে। এখন দেখছি সেই সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। আবার, ডিয়ার পার্ক যাওয়ার পথে রাস্তার বাঁ’দিকের জঙ্গলে যেভাবে গাছ কাটা হয়েছে, তাতে খারাপই লাগছে।’’
সম্প্রতি দক্ষিণ-পূর্ব রেলের টাটা-খড়্গপুর তৃতীয় লাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। সে কাজের জন্যও ঝাড়গ্রাম জেলার মধ্যে রেলের জমিতে থাকা দু’হাজারের বেশি শালগাছ কাটার কাজ চলছে। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য রাস্তার দু’পাশের প্রায় ১২ হাজার গাছ কাটা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
সরকারি ভাবে একটি গাছ কাটা হলে সেই গাছের চরিত্র অনুযায়ী দ্বিগুণ বা পাঁচগুণ বেশি গাছ রোপণের কথা বন-আইনে রয়েছে। পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না। আবার, কিছু ক্ষেত্রে গাছ লাগানো হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলি মারা যাচ্ছে।
ঝাড়গ্রামের এডিএফও (সহকারি বনাধিকারিক) সমীর মজুমদার অবশ্য বলেন, ‘‘বনাঞ্চলের ঘনত্ব বেড়েছে। সেই কারণে হাতিদের গতিবিধিও বেড়ে গিয়েছে। এখন সারা বছর জঙ্গলে হাতিরা থাকছে।” কিন্তু এলাকাবাসীর প্রশ্ন, বনাঞ্চল না হয় বাড়ছে, কিন্তু শহরের সবুজায়নের কী হবে? প্রশাসন সূত্রের খবর, বন দফতর পুরসভা ও পূর্ত দফতরের সঙ্গে সমন্বয়ে ছাড়গ্রামের হারানো সবুজ ফেরানোর চেষ্টা শুরু করছে। ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, “ঝাড়গ্রাম শহরে সবুজায়নের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। শহরের রাস্তার দু’ধারে আগের মতো সৌন্দর্য ফেরানোর জন্য বন দফতরের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ করা হবে।”
(চলবে)