নেই নিষেধাজ্ঞা

প্লাস্টিকের ফাঁসে বাড়ছে দুর্ভোগ

মেদিনীপুর পারে, খড়্গপুর পারে না! প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মেদিনীপুর শহরে সাফল্য এসেছে। যদিও প্লাস্টিকে রাশ টানতে এখনও পরিকল্পনাতেই আটকে খড়্গপুর পুরসভা। যার ফল ভুগছে শহরবাসী।

Advertisement

দেবমাল্য বাগচী

খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৬ ০১:৩৯
Share:

প্লাস্টিকে অবরুদ্ধ নিকাশি নালা। খড়্গপুরের গোলবাজারে।

মেদিনীপুর পারে, খড়্গপুর পারে না!

Advertisement

প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে মেদিনীপুর শহরে সাফল্য এসেছে। যদিও প্লাস্টিকে রাশ টানতে এখনও পরিকল্পনাতেই আটকে খড়্গপুর পুরসভা। যার ফল ভুগছে শহরবাসী।

দিন কয়েক আগে পাড়ার দোকান থেকে মিষ্টি কেনেন খড়্গপুরের ছত্তিসপাড়ার সুনীতি কুমারী। বাড়িতে এসেই মিষ্টির বাক্স বের করে সুনীতিদেবী প্লাস্টিক ফেললেন রাস্তায়। ঘণ্টা খানেক বাদে বৃষ্টি শুরু হতেই প্লাস্টিক গিয়ে নর্দমায় আটকাল। ফল, কিছুক্ষণ বৃষ্টির পরেই জল থইথই রাস্তা। সুনীতিদেবীর সঙ্গে সঙ্গে এলাকার বাসিন্দাদেরও তখন নাজেহাল দশা। পরিস্থিতি দেখে সুনীতিদেবী বলছেন, “দোকান থেকে প্লাস্টিকের প্যাকেট দিলে আমাদের কী করার আছে। ভ্যাট না থাকায় রাস্তাতেই আবর্জনা ফেলতে হয়। কে জানত এমনটা হবে!”

Advertisement

২০১৩ সালে ঘটা করে খড়্গপুর পুরসভার তৃণমূল পুরবোর্ড প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে শহর জু়ড়ে প্রচার চালায়। যদিও প্রচারের ঢক্কানিনাদ কয়েকদিনেই শেষ। মাস ঘুরতেই চুপচাপ পুরসভাও। তৎকালীন উপ-পুরপ্রধান বর্তমান পুর পারিষদ তুষার চৌধুরী বলেন, ‘‘প্লাস্টিক নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছিলাম। কিন্তু প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে পারিনি।’’ তিনি বলছেন, ‘‘মানুষের সদিচ্ছা তৈরি না হলে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। প্লাস্টিকে রাশ টানতে চেষ্টা করব।’’


নিষেধাজ্ঞার বালাই নেই। খড়্গপুরে চলছে প্লাস্টিকের ব্যবহার।

গত ১ মে থেকে শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে অভিযানে নামে মেদিনীপুর পুরসভা। প্রথম দিকে একের পর এক বাজারে হানা দেন পুরকর্মীরা। বেশ কিছু প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করা হয়। কম ঘনত্বের প্লাস্টিক রাখার জন্য দোকান পিছু ৫০ টাকা করে জরিমানা আদায় শুরু হয়। এখন মেদিনীপুর শহরে ৪০ মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিকের ব্যবহার ও মজুত সম্পূর্ণ ভাবে নিষিদ্ধ। নির্দেশ অমান্য করা হলে পুর- আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে পুরসভা। পুরসভার পদক্ষেপে খুশি শহরবাসী।

মেদিনীপুর শহরের বাসিন্দা সোমনাথ মণ্ডল, অনিন্দিতা অধিকারীরা বলেন, “প্লাস্টিক থেকে নানা সমস্যা দেখা দেয়। প্লাস্টিক দূষণ নিয়ন্ত্রণে আগেই তৎপর হওয়া উচিত ছিল। দেরিতে হলেও পুরসভা পদক্ষেপ করছে। এটা ভাল দিক।” শহরের ব্যবসায়ী অজয় সাহুর বক্তব্য, “বাধ্য হয়েই ক্যারিব্যাগ রাখতে হয়! অনেক ক্রেতা থলে নিয়ে বাজারে আসেন না। এলেও জিনিসপত্র প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগে নেন। এখন ৪০ মাইক্রোনের বেশি ঘনত্বের ক্যারিব্যাগ রাখছি।”

মেদিনীপুরের পাশের শহরেই অবশ্য উল্টো ছবি। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় খড়্গপুর শহরে চলছে দেদার প্লাস্টিকের ব্যবহার। পোশাক বিপণি, মুদির দোকান— বাদ নেই কোথাও। আর নর্দমা-নিকাশি নালার মুখে জমে থাকছে প্লাস্টিক। সামান্য বৃষ্টিতেই নিকাশি নালার জল উপচে ভাসছে রাস্তা। প্লাস্টিকের ব্যাগ জমে দৃষিত হচ্ছে পুকুরের জলও। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে শহরবাসীর সচেতনতার অভাবের কথা বলে যখন দায় সারছে খড়্গপুর পুরসভা। তখন শহরের একাংশ বাসিন্দা অবশ্য পুরসভার কড়া হওয়ার দাবিই জানাচ্ছে।

খড়্গপুর শহরের পুরাতনবাজারের মিষ্টির দোকানের ম্যানেজার কার্তিক ভঞ্জ বলেন, “শহরে প্লাস্টিক বন্ধ হোক আমরাও চাই। অন্য দোকান থেকে প্লাস্টিক দিলে ক্রেতারা আমাদেরও প্লাস্টিক দিতে চাপ দিচ্ছেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘পুরসভা আরও কড়া মনোভাব নিলে তবেই শহরে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব।’’ এ নিয়ে খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের দাবি, “মেদিনীপুর পুরসভা প্ল্যাস্টিক বন্ধ করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। কারণ এ জন্য মানুষের সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘প্লাস্টিক নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে কথা বলছি। প্লাস্টিক নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের সচেতন করতে ওই সংস্থার মাধ্যমে প্রচার করা হবে। পুরসভার কর্মী কম। ভবিষ্যতে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে বিধি জারি করে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইব।’’

ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন