প্রতীকী ছবি
আনাজ ও আলুর দাম ঊর্ধ্বমুখী অনেকদিন ধরেই। এবার বাড়ছে অক্সিজেনের দামও!
উপসর্গহীন ও মৃদু উপসর্গ থাকা করোনা রোগীদের বাড়িতে থেকে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাই অক্সিজেন সিলিন্ডার, অক্সিমিটার-সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনে বাড়িতে মজুতের হিড়িক শুরু হয়েছে। সুযোগ পেয়ে বাড়ছে কালোবাজারিও।
ঘাটালে এখন অক্সিজেন সিলিন্ডার, পালস্ অক্সিমিটার কেনার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন অনেকে। পরিস্থিতি বুঝে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রির প্রতিষ্ঠানগুলিও চড়া দাম হাঁকছে। অভিযোগ, ব্যবসায়ীদের একাংশ বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অক্সিমিটারের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছেন। ফলে অনেক সময়ে সেগুলির সত্যি প্রয়োজন থাকলেও বাজারে মিলছে না ।
অক্সিজেন বিক্রয়কারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। শ্বাসকষ্ট হলে কখন কী ভাবে অক্সিজেন ব্যবহার করতে হবে, তা অনেকেই জানেন না। প্রয়োজন ছাড়া অক্সিজেন ব্যবহারে শরীরে অন্য সংক্রমণ হতে পারে। এছাড়া বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার মজুত রাখার নির্দিষ্ট নিয়মও রয়েছে। মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডারের অক্সিজেন শরীরে গেলে অসুস্থতা বাড়তে পারে।
কিন্তু সে সব নিয়ম অবশ্য এখন অনেকটাই খাতায়-কলমে। ঘাটালের অনেক জায়গাতেই আলু, পেঁয়াজের মতোই খোলা জায়গায় বিক্রি হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার। সেটি বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি প্রয়োজনীয় সরকারি অনুমতি না নিয়েই অনেকে এই ব্যবসা শুরু করেছেন। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্তই নন। ফলে কোনও ক্রেতাকে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারের নিয়ম বলে দেওয়া তাঁদের পক্ষে সম্ভবও নয়।
কী ভাবে মহার্ঘ হচ্ছে অক্সিজেন সিলিন্ডার?
ঘাটাল মহকুমার বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গিয়েছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে সেখানে একটি বড় অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম ছিল ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। সেই সিলিন্ডারই এখন বিকোচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায়। লকডাউনের আগে যে ছোট সিলিন্ডারের দাম ঘোরাফেরা করত ৫ হাজারের মধ্যে। তার দাম এখন হয়েছে কমবেশি ৭ হাজার। শরীরে অক্সিজেন মাপার জন্য পালস্ অক্সিমিটারের দামও অনেক বেড়ে গিয়েছে। আগে এটির দাম ঘোরাফেরা করত ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকার মধ্যে। এখন মজুতের তুলনায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সেটিও বিক্রি হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ টাকায়।
ঘাটাল শহরে অক্সিজেন সিলিন্ডার বিক্রয়কারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার দেবাশিস চক্রবর্তী মানছেন, “এখন অনেকেই আমাদের থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। কিনেও রাখছেন। এখন নতুন সিলিন্ডার সরবরাহ নেই। তাই সবসময়ে অনেককে দিতেও পারছি না।” পেশায় সার্জিক্যাল ব্যবসায়ী অনুপকুমার সামন্ত মানছেন, “সিলিন্ডার ও অক্সিমিটারের চাহিদা আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গিয়েছে। এত বরাত আসছে যে সময়ে দেওয়া যাচ্ছে না।”
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল বলেন, ‘‘অক্সিমিটার কেউ বাড়িতে রাখতেই পারেন। তবে প্রয়োজন ছাড়া অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখার যৌক্তিকতা নেই। স্বাস্থ্য সামগ্রীর দাম কোথাও বেশি নেওয়া হলে প্রশাসন নিশ্চয় ব্যবস্থা নেবে।’’ ঘাটালের মহকুমা পুলিশ অফিসার অগ্নীশ্বর চৌধুরী জানান, অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম নিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ উঠেছে। তবে এখনও এই নিয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তাঁর আশ্বাস, কালোবাজারি রুখতে পদক্ষেপ করা হবে।