বাগদেবীতে বাক-যুদ্ধ

সম্প্রতি রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছেন, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত হলে ভয় কিসের?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৮
Share:

কলেজ মোড়ের একটি পুজোয় রাজনীতির তরজা। নিজস্ব চিত্র

কে চোর, কে চৌকিদার—রাজ্য এবং দেশের রাজনীতি এখন সেই নিয়েই সরগরম। মেদিনীপুরের কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোর থিমেও এ বার সেই চোর-চৌকিদারের তাল ঠোকাঠুকি হতে চলেছে।

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছেন, চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্ত হলে ভয় কিসের? মুখ্যমন্ত্রীর ধর্না নিয়েও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘স্বাধীনতার পরে এই প্রথম কোনও মুখ্যমন্ত্রী প্রতারক- লুটেরাদের বাঁচাতে দিনদুপুরে ধর্নায় বসেছেন। গরিব মানুষের টাকা যারা লুট করেছে, প্রতারণা করেছে, চৌকিদার তাদের কাউকে ছাড়বে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।’ পাল্টা দিয়েছেন মমতাও। মোদীর তোলা দুর্নীতির অভিযোগ নস্যাৎ করে তিনি বলেছেন, ‘‘চোরের মায়ের বড় গলা’’। মমতাকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘যিনি ও সব বলছেন, তিনি নিজেই তো দুর্নীতির গুরুঠাকুর। এত বড় দুর্নীতিগ্রস্ত ভারতে জন্মায়নি। এই ব্যক্তি দেশের প্রধানমন্ত্রী, ভাবতে লজ্জা হয়।’’

কলেজ মোড়ের সরস্বতী পুজোয় রাজনীতির থিম নতুন নয়। বলা ভাল, এখানে এটাই ঐতিহ্য। শহরের এই এলাকায় নয় নয় করে ২০টিরও বেশি সরস্বতী পুজো হয়। কলেজ মোড়ের প্রায় প্রতিটি সরস্বতী পুজোর পিছনেই রয়েছে কোনও না- কোনও রাজনৈতিক দলের ছাত্র-যুব সংগঠন। প্রতি বছরই পুজোয় উঠে আসে সাম্প্রতিক বিভিন্ন বিষয়। যে বিষয়গুলো নিয়ে দেশে- রাজ্যে চাপানউতোর চলে। রাজনৈতিক চাপানউতোরের আবহে পুজো জমে ওঠে। বিভিন্ন মডেলের পাশে নানা লেখা থাকে। সেগুলিই পুজোর মূল আকর্ষণ। প্রায় প্রতিটি লেখাই ব্যাঙ্গাত্মক কোথাও পুজোর নেপথ্যে থাকে টিএমসিপি, ছাত্র পরিষদ। কোথাও বা এসএফআই, এবিভিপি। সামনেই লোকসভা ভোট। তাই এ বারের পুজোতে জাতীয় রাজনীতিই উঠে এসেছে বেশি। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর টানাপড়েনের কথাই তুলে ধরছে বেশিরভাগ পুজো মণ্ডপ।

Advertisement

একটি পুজোর উদ্যোক্তা, যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরি বলেন, ‘‘কলেজ মোড়ের পুজো সত্যিই অন্য রকম হয়।’’ আরেক পুজোর উদ্যোক্তা, যুব কংগ্রেসের জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুলের কথায়, ‘‘থিমে রাজনীতির বিষয় উঠে আসে বলেই তো এখানে এত ভিড় হয়।’’ জানা যাচ্ছে, ছাত্র পরিষদ প্রভাবিত এক পুজোর থিমে ভোট লুট নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ করা হবে। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের আদলে তৈরি মণ্ডপের সামনে লেখা থাকবে, ‘‘ভেতরে সিভিক টিচার আর বাইরে সিভিক পুলিশ, চটিপিসি বিয়াল্লিশে বিয়াল্লিশ!’’ কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া মানস ভুঁইয়াকে বিঁধে লেখা থাকবে, ‘মাগো, আমায় একটু জায়গা দাও দিদির চটিতলে বসি।’ টিএমসিপি প্রভাবিত এক পুজোয় বিজেপি নেতাদের ‘চোর’ তকমা দেওয়া হচ্ছে। ওই মণ্ডপে প্রশ্নোত্তরের আকারে লেখা থাকবে, ‘‘প্রশ্ন: চোর থেকে সাধু হওয়ার উপায় কী? উত্তর: তাড়াতাড়ি বিজেপিতে যোগদান।’’ মোদীর ব্যঙ্গচিত্রের পাশে লেখা থাকবে, ‘‘আমার চেহারা কি চোরের মতো দেখতে? আমি যেখানে যাই সবাই চোর চোর চিৎকার করে যে।’’ এক জায়গায় লেখা থাকবে, ‘জেটলি আছে কেটলি ভরে যাও!’ বিজেপি প্রভাবিত পুজোও রয়েছে কলেজে মোড়ে। সেরকমই একটি পুজোর আয়োজক বিজেপির যুব মোর্চার জেলা সভাপতি আশীর্বাদ ভৌমিকের কটাক্ষ, ‘‘কে চোর, ধর্নাতেই স্পষ্ট হয়েছে।’’

শুক্রবার গভীর রাতে মেদিনীপুরে খানিক বৃষ্টি হয়েছে। তাতে কি! শনিবার দিনভর কলেজ মোড়ে ছিল প্রস্তুতি সারার শেষ মুহূর্তের ব্যস্ততা। শনিবার পর্যন্ত কোনও পুজোই তাদের পুরো থিম প্রকাশ্যে আনেনি। প্রস্তুতি চলেছে গোপনে। কার আস্তিনে কী তাস রয়েছে, সেটা জানা যাবে আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন