হেলিপ্যাডের জায়গা বদলে বিতর্ক

কতদিনে কালেক্টরেট!

২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে ঝাড়গ্রাম জেলা গঠিত হয়। তারপর থেকে সাবেক এসডিও অফিসটি এখন অস্থায়ী জেলা কালেক্টরেট হিসেবে চলছে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

জেলা কালেক্টরেট ভবনের কাজ শুরুর পরেই বন্ধ। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

আচমকা থমকে গিয়েছে ঝাড়গ্রামে জেলার প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ। গত চার মাস ধরে ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ। নজরদারির অভাবে জিনিসপত্র চুরিও হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ। ওই কাজ বন্ধ রাখার কোনও লিখিত নির্দেশ নেই। অভিযোগ, মৌখিক নির্দেশের ভিত্তিতেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। কাজ কেন বন্ধ সেটি জানতে চেয়ে ঝাড়গ্রাম জেলা পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়রকে দু’বার চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থা। কিন্তু জবাব মেলেনি।

Advertisement

২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ভেঙে ঝাড়গ্রাম জেলা গঠিত হয়। তারপর থেকে সাবেক এসডিও অফিসটি এখন অস্থায়ী জেলা কালেক্টরেট হিসেবে চলছে। জেলা চালানোর জন্য ঝাঁ চকচকে চারতলা অত্যাধুনিক প্রশাসনিক ভবন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সে জন্য ঝাড়গ্রাম শহরের পশ্চিম প্রান্তের সীমানায় রাজ কলেজের হেলিপ্যাড মাঠটি অধিগ্রহণ করে ভূমি দফতর। বছর তিনেক আগে ওই মাঠে হেলিপ্যাড তৈরি করেছিল তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। তারপর থেকে ভিভিআইপি-দের কপ্টার ওই মাঠেই নামত। সেখানে প্রায় ৮ একর জমিতে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে ভবন তৈরির জন্য গত বছরের মাঝামাঝি টেন্ডার ডাকা হয়। গত জুনে হাওড়ার একটি নির্মাণ সংস্থা কাজের বরাত পায়। বরাদ্দ হয় ৪১ কোটি টাকা। গত বছর জুলাইয়ে ভূমি পুজো করে কাজ শুরু হয়। এরপর কাজ কিছুটা এগিয়েও যায়।

গত বছর নভেম্বরে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক বৈঠক করতে আসেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ কলেজের মাঠ জেলা কালেক্টরেট তৈরির জন্য অধিগৃহীত হয়ে যাওয়ায় শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুকুরিয়ার রাজপাড়ায় অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়। গত নভেম্বরে মুখ্যমন্ত্রীর কপ্টার সেখানেই নেমেছিল। সূত্রের খবর, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে দূরে কপ্টার নামায় বিরক্ত হন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ কলেজের স্থায়ী হেলিপ্যাডে প্রশাসনিক ভবন হচ্ছে জেনে খানিকটা উষ্মাপ্রকাশও করেন তিনি। এরপরই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থাকে কাজ বন্ধের মৌখিক নির্দেশ দেওয়া হয়। ২৭ নভেম্বর থেকে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকাদার সংস্থার প্রজেক্ট ম্যানেজার মানিক রায় বলেন, ‘‘২৭ নভেম্বর পূর্ত বিভাগ থেকে আমাকে ফোন করে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে চিঠি দিয়ে কাজ বন্ধ কেন রাখতে হবে কারণ জানতে চেয়েছি। তারপর খুব শীঘ্রই সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হবে বলে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চার মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরুর ব্যাপারে কোনও নির্দেশ পাইনি।’’ তাঁর অভিযোগ, কাজ বন্ধ থাকায় নির্মাণ সরঞ্জামের ক্ষতি হচ্ছে। নির্মাণস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, অনেকটা এলাকা জুড়ে তৈরি কলম অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় রয়েছে। একদিকে তৈরি ছাউনি ঘরে দেখা মিলল সাইট-সুপারভাইজার সনাতন মাইতি ও তরুণ মণ্ডলের। তাঁরা জানালেন, কাজ বন্ধ থাকায় ৭২ জন শ্রমিক ফিরে গিয়েছেন। নির্মাণ সামগ্রী পড়ে থাকায় নষ্ট হচ্ছে। চুক্তি অনুযায়ী দু’বছরের মধ্যে (৭৩০ দিন) কাজ শেষ করতে হবে। এভাবে পিছিয়ে গেলে নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হবে না।

Advertisement

গ্রামীণ হাট লাগোয়া এই জায়গাতেই বিকল্প হেলিপ্যাড তৈরির ভাবনা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ

তাহলে কী হেলিপ্যাড বিতর্কের জন্য জেলা প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ রাজ কলেজের মাঠ থেকে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়ে যাবে? জেলা প্রশাসনের অন্দরে ঘুরপাক খাচ্ছে এমন প্রশ্ন। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজ মাঠের ওই জায়গাটি প্রশাসনিক ভবনের পক্ষে সব দিক থেকে খুব ভাল। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ওই জায়গায় হেলিপ্যাড নিয়ে জানতে চাওয়াতেই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার রবীন্দ্রনাথ দে অবশ্য বলেন, ‘‘যেখানে প্রশাসনিক ভবন তৈরি হচ্ছে তার লাগোয়া একটি হেলিপ্যাড ছিল। সেখানেও ওই ভবনের কাজ হচ্ছিল। পরে ঊর্ধ্বতন মহলের নির্দেশ এল যে কাজ বন্ধ রাখতে হবে। শহরে হেলিপ্যাডের বিকল্প জায়গা দেখা হয়েছে। এখন ঝাড়গ্রামে গ্রামীণ হাট লাগোয়া জায়গায় হেলিপ্যাডের জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে পরীক্ষামূলক ভাবে কপ্টার ওঠা-নামাও করেছে। ওই জায়গায় হেলিপ্যাড চুড়ান্ত হয়ে গেলেই প্রশাসনিক ভবন তৈরির কাজ ফের শুরু হয়ে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন