দেহ শনাক্ত বাবা-মার

দিঘায় ‘নিহত’ কিশোরীই দাসপুরের নিখোঁজ মাম্পি

দু’দিন আগেই গত শনিবার নিউ দিঘার ঝাউবন থেকে উদ্ধার হয় এক কিশোরীর দেহ। প্রথমে ওই কিশোরীর পরিচয় জানা যায়নি। রবিবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছবি-সহ এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। তা দেখে ওই দিন রাতেই দিঘা থানায় গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন মৃতের বাবা-মা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩১
Share:

শোকার্ত মা, নিহত মাম্পি দোলই (ইনসেটে)। —নিজস্ব চিত্র।

দু’দিন আগেই গত শনিবার নিউ দিঘার ঝাউবন থেকে উদ্ধার হয় এক কিশোরীর দেহ। প্রথমে ওই কিশোরীর পরিচয় জানা যায়নি। রবিবার বিভিন্ন সংবাদপত্রে ছবি-সহ এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশিত হয়। তা দেখে ওই দিন রাতেই দিঘা থানায় গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন মৃতের বাবা-মা। জানা যায়, মৃত ওই কিশোরীর নাম মাম্পি দোলই (১৫)। দাসপুরের ধানখালের বাসিন্দা ওই কিশোরী গত ৮ অগস্ট থেকে নিখোঁজ ছিল।

Advertisement

কাঁথির এসডিপিও ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাম্পি দোলই নামে ওই কিশোরী নিখোঁজ ছিল। শনিবার ওর দেহ মেলে দিঘার ঝাউবন থেকে। মেয়েটির পরিবারের তরফে তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।’’

৮ অগস্ট বিকেলেই মাম্পিকে পাচার করার অভিযোগে টুম্পা পাল নামে এক তরুণীকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয় স্থানীয়রা। টুম্পা বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে রয়েছে। তারপরেও এতদিন মাম্পির সন্ধান পায়নি পুলিশ। মৃতের পরিজনেদের অভিযোগ, টুম্পাকে ধরিয়ে দেওয়ার পরেও মাম্পির সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ। মাম্পির মা রেখা দোলইয়েরও অভিযোগ, “পুলিশ তৎপর হলে আমার মেয়েকে খুন হতে হত না।” পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘ধৃতদের জেরা চলছে।” যদিও মাম্পি কী ভাবে দিঘায় পৌঁছল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী মাম্পির বাড়িতে টুম্পার যাতায়াত ছিল। ধানখালের পাশের দামোদরপুরেই বাড়ি টুম্পার। অভিযোগ, গত ৮ অগস্ট সকালে কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ওই কিশোরীকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আসে টুম্পা। দুপুরেও বাড়ি না ফেরায় টুম্পাকে ফোন করেন মাম্পির বাবা। তখন টুম্পা ফোন কেটে দেওয়ায় সকলের সন্দেহ হয়। ওই দিন বিকেলেই টুম্পাকে দাসপুরের বকুলতলায় ঘোরাফেরা করতে দেখে স্থানীয়রা তাঁকে আটকে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে গ্রেফতার করে।

বছর বাইশের টুম্পা বিবাহিত। ইদানীং সে বাপের বাড়িতেই থাকত। টুম্পা কোনও মেয়ে পাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িত বলেও পুলিশের অনুমান। পুলিশ সূত্রে দাবি, জেরায় টুম্পা জানায়, আগে দেওয়া কথামতো গত ৮ অগস্ট টুম্পা পাঁশকুড়ার দেবু পাল নামে এক যুবকের কাছে মাম্পিকে পৌঁছে দেয়। যদিও পুলিশ দেবু পাল নামে কারও সন্ধান পায়নি। জানা গিয়েছে, মাম্পির সঙ্গে পাশের গ্রামের যুবক পেশায় কাঠ মিস্ত্রি বাচ্চু আলির সম্পর্ক ছিল। টুম্পার সঙ্গেও বাচ্চুর যোগাযোগ ছিল।

রবিবার মাম্পির দেহ শনাক্ত হওয়ার পর সোমবার সকালে বাচ্চু আলি, টুম্পার মা ও ভাই দেবাশিস পালকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পুলিশ জানতে পারে, গত ৮ অগস্ট মাম্পিকে গাড়িতে করে প্রথমে চন্দ্রকোনা রোডের পরিমল কানন পার্কে নিয়ে যাওয়া হয়। গাড়িতে টুম্পা ছাড়া বাচ্চুও ছিল। গাড়িতে ছিল আরও একজন যুবক। যদিও ওই যুবকটি কে তা জানতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের দাবি, জেরায় টুম্পা স্বীকারও করেছে, টাকার বিনিময়েই সে কাজ করেছিল। গাড়ির চালক সুমিত পালকে আটক করেছে পুলিশ।

টুম্পার বাবা মধুসূদন পাল বলেন, “আমার মেয়ে মাঝেমধ্যেই ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। রাতে বাড়ি ফিরত।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ঘটনায় আমার মেয়ে জড়িত থাকতেই পারে। আমি চাই, পুলিশি তদন্তে ঘটনার কথা প্রমাণিত হলে মেয়ে শাস্তি পাক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন