জেলায় একের পর এক ধর্ষণ, খুনের অভিযোগ! প্রশ্নে নারী নিরাপত্তা।

সুনসান রাস্তায় ভয় নিয়েই চলাচল

কোলাঘাট, হলদিয়ায় গত কয়েক দিনের মধ্যে পর পর নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

Advertisement

কেশব মান্না

কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:১৫
Share:

নির্জন: হলদিয়ার উড়াল মোড় থেকে কদমতলা রাস্তা।

জেলায় একের পর এক জায়গায় আক্রান্ত মহিলারা। ধর্ষণ, গণ-ধর্ষণ চলছে একের পর এক। পথেঘাটে বেরোতে নতুন করে আতঙ্কে ভুগছেন মহিলারা।

Advertisement

শিল্পশহর হলদিয়া থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের অন্যতম মহকুমা শহর কাঁথি, কোলাঘাট থেকে ভগবানপুর—রাস্তাঘাটে আলো না থাকা, সন্ধের পরে পর্যাপ্ত গাড়ির অভাব, সুনসান পথে মহিলাদের কটূক্তি, ‘নিরাপত্তা’ নিয়ে চিন্তা ছিল বরাবরই। গত এক মাসে পর পর ধর্যণ, শ্লীলতাহীনি, খুনের ঘটনায় তা এ বার আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ভয় চেপে বসছে এতটাই যে ঘরের মেয়ে পড়তে গেলে বা বাইরে কাজে গেলে না ফেরা পর্যন্ত দুশ্চিন্তায় থাকছেন পরিজনেরা।

কোলাঘাট, হলদিয়ায় গত কয়েক দিনের মধ্যে পর পর নারী নির্যাতনের ঘটনায় পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। অনেকের অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতীমূলক কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা নেই বললেই নচলে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়েই দুষ্কৃতীরা কলরা তুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

Advertisement

গত ১ সেপ্টেম্বর হলদিয়ার দুর্গাচকে কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পথে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক মহিলা। অভিযোগ-রাস্তার পাশে পুকুর লাগোয়া একটি ঝোপের ভেতর চারজন যুবক ধর্ষণ করেছিল তাকে। তারও কিছুদিন আগে কাঁথির গিমাগেড়িয়া এলাকায় রাস্তা দিয়ে নামাল যাওয়ার পথে এক মহিলার শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছিল। গত দু’মাসে রাস্তায় বেরিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন এরকম মহিলাদের সংখ্যা একাধিক। স্বাভাবিকভাবে, বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট নিয়ে আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন মহিলারাই।

হলদিয়ার ব্রজলাল চক থেকে চৈতন্যপুরের দিকে একটি রাস্তা গিয়েছে। পাশাপাশি দুটি হাই স্কুলের ছাত্রী এবং শিল্প শহরে কাজের সুবাদে যাতায়াত করেন অনেক মহিলারাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুলছাত্রীর দাবি, চৌরাস্তার মোড়ের কাছে সব সময় ‘রোমিও’ দের উপদ্রব। রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় নানা কটূক্তি ভেসে আসে আমাদের লক্ষ্য করে। কখনও কখনও কাগজের ঢেলাও ছুড়ে মারা হয়। রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় বা স্কুল থেকে ফেরার পথে রাস্তার ওই অংশ পেরোতে ভয়ে ভয়ে থাকি।’’ আতঙ্কিত হলদিয়ার বিধানচন্দ্র রায় মেডিক্যাল কলেজের পাশের রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াতকারী এক তরুণীও। কদমতলা থেকে হলদিয়ার একমাত্র বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে পথবাতি বসিয়েছে হলদিয়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু স্থানীয় লোকজনই জানালেন, সন্ধ্যার পর আলো থাকলেো রাস্তা খুব নির্জন হয়ে যায়। সুনসান রাস্তায় আলো থাকলেও হঠাৎ বাইকে করে এসে কেউ মহিলাদের আক্রমণ করলে কী করার আছে! ফলে অনেকেই সন্ধ্যার পর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার দরকার হলে একা নয়, দল বেঁধে যাতায়াত করেন। একই রকম পরিস্থিতি সিটি সেন্টার থেকে পুরসভার দিকে যাওয়ার রাস্তাতেও। সারি সারি পথবাতি লাগানো থাকলেও সন্ধ্যা নামার পর রাস্তায় লোকজন একেবারে থাকে না বললেই চলে। সিটি সেন্টারের রেস্তোরাঁ থেকে রাতে বাড়ি ফেরেন টাউনশিপের এক মহিলা। তাঁর দাবি-রাস্তায় আলো থাকলেও লোকের দেখা মেলে না। ভয়ে ভয়েই প্রতিদিন যাতায়াত করতে হয়।

শুধু হলদিয়া নয়, কাঁথি শহরে ও কলেজ থেকে জালাল খান বাড় রাস্তা ধরে সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড পৌঁছনো যায়। ওই রাস্তা দিয়ে মহাকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীরা যাতায়াত করেন। অভিযোগ, স্থানীয় যুবকদের কটূক্তি এবং অশালীন আচরণের শিকার হতে হয়েছে একাধিক ছাত্রীক। কয়েকজন ইভটিজারকে গ্রেফতারও করেছিল কাঁথি থানার পুলিশ। কিন্তু ওই পর্যন্তই। ওই রাস্তায় পুলিশের নিয়মিত টহলদারি দেখা যায় না বলে অভিযোগ কলেজ ছাত্রীদের। গিমাগেড়িয়ায় ইদানীং পথবাতি বসানো হয়েছে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে। কিন্তু তারপরেও পুরোপুরি আতঙ্ক মুক্ত নন মহিলারা। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ, জেলার যে সব রাস্তায় লোক যাতায়াত কম সেই সব রাস্তায় পুলিশের নজরদারি থাকে না। আর তারই সুযোগ নেয় দুষ্কৃতীরা।

হলদিয়ায় রাস্তাগুলির রাতের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শহরের প্রতিটি রাস্তায় সন্ধ্যার পর থেকে পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। সব গাড়িতেই জিপিএস যন্ত্র লাগানো থাকে। তাই পুলিশের গাড়ি কখন কোন রাস্তায় টহল দেয়, সে খবরও আমাদের কাছে থাকে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন