বিপ্লবীদের স্মৃতিরক্ষায় যত্ন নেই, আক্ষেপ মন্ত্রীর

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিবিজড়িত বহু এলাকাই অনাদরে পড়ে। সংরক্ষণের অভাবে ধুলো জমছে সেই ইতিহাসে। বিপ্লবের সূতিকাগার মেদিনীপুরে এসে সেই প্রসঙ্গেই ফিরলেন কেন্দ্রের অসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিংহ।

Advertisement

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

মোহবনি ও মোহনপুর শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:০০
Share:

মোহবনিতে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী। রবিবার। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্মৃতিবিজড়িত বহু এলাকাই অনাদরে পড়ে। সংরক্ষণের অভাবে ধুলো জমছে সেই ইতিহাসে। বিপ্লবের সূতিকাগার মেদিনীপুরে এসে সেই প্রসঙ্গেই ফিরলেন কেন্দ্রের অসামরিক বিমান প্রতিমন্ত্রী জয়ন্ত সিংহ।

Advertisement

গত ১৫ অগস্ট থেকে দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে ‘তেরঙ্গা যাত্রা’। ৭০তম এই স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বীর যোদ্ধাদের কর্মভূমিতে গিয়ে তাঁদের স্মরণ করা হবে। সেই মতো বিভিন্ন রাজ্যে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদেরা। শহিদদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছেন। মেদিনীপুরের শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতেই রবিবার জেলায় আসেন জয়ন্ত সিংহ। সঙ্গে ছিলেন বিজেপি সাংসদ মীনাক্ষি লেখি। মোহনপুর, কেশপুর, সবং একাধিক এলাকায় ঘোরেন তাঁরা।

কেশপুরের মোহবনিতে ক্ষুদিরামের জন্মভিটে পরিদর্শন করে প্রতিমন্ত্রী জয়ন্তের আক্ষেপ, “ইতিহাস সংরক্ষণের তেমন উদ্যোগ নেই এখানে। ক্ষুদিরামের মতো বহু শহিদের আত্মত্যাগে দেশ স্বাধীন হয়েছে। এঁদের স্মরণ রাখা প্রয়োজন।’’ মোহবনিতে অনেক কিছুই অনাদরে পড়ে রয়েছে বলে মত মন্ত্রীর। একই দাবি সাংসদ মীনাক্ষিদেবীরও। তাঁর কথায়, “মোহবনিতে যে কাজ হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। সব বাড়িতে শৌচাগার পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত নেই। নেই ভাল পার্ক।’’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে কাছে পেয়ে ক্ষুদিরামের পরিবারের সদস্য তিলক বসু, অলোক বসুরা জানান, সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অর্থ সাহায্যে কিছু উন্নয়ন হয়েছে। আরও উন্নয়ন প্রয়োজন। মন্ত্রী জানান, দিল্লি ফিরে গিয়ে বিষয়টি পর্যটন মন্ত্রকের নজরে আনবেন।

Advertisement

এ দিন প্রথমে মন্ত্রী পৌঁছন মোহনপুরে। মোহনপুর মোড়ে আবক্ষ মূর্তি রয়েছে কাঁথির ভূমিপুত্র বিপ্লবী বীরেন্দ্র শাসমলের। কিন্ত এই মূর্তির রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনের তেমন গা নেই। শুধু যুবক সঙ্ঘ ক্লাবের তরফে সাধারণতন্ত্র দিবস ও স্বাধীনতা দিবসে মূর্তি ঝাড়পোঁছ হয়। স্থানীয়দের ক্ষোভ, মূর্তির চারপাশে লোহার গ্রিল ঘেরা অংশে আবর্জনা জমে থাকে। গ্রিলও বেহাল। ক্লাব সদস্য মধুসূদন পলমল, শক্তি রায় বলেন, “পাঁচ-ছ’বছর অন্তর পূর্ত দফতর মূর্তি ও চারদিকের লোহার গ্রিল রং করে। প্রশাসনের এ ব্যাপারে আরও নজর দেওয়া উচিত।’’ এ দিন ওই মূর্তিতে মালা দেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তারপর সভায় স্বাধীনতা আন্দোলনের নানা দিক তুলে ধরে দেশের সরকার মানুষের জন্য কীভাবে কাজ করছে তার ব্যখ্যা দেন। সাংসদ মীনাক্ষি বলেন, “বীরেন্দ্র শাসমল ব্রিটিশ সরকারের করের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম নরেন্দ্র মোদীর সরকার জিএসটি ব্যবস্থা চালুর জন্য বিল এনেছে। এতে কর ব্যবস্থা সহজ হবে। আমরা চাইছি সারা ভারতে একই কর জারি হোক।’’

মোহনপুর থেকে মন্ত্রী পৌঁছন কেশপুরের মোহবনিতে। ক্ষুদিরামের জন্মভিটের এই এলাকায় অবহেলার ছাপ স্পষ্ট। অথচ, ভাল সংগ্রহশালা হলে তা কেশপুরে পর্যটনের আকর্ষণ হতে পারত। মীনাক্ষিদেবী বলছিলেন, “মোহবনির ইতিহাস নিয়ে আমরা গর্ব বোধ করি। কিন্তু, এই ইতিহাসকে ধরে রাখার কোনও উদ্যোগ নেই।’’

আর মন্ত্রী জয়ন্তর কথায়, “কেশপুরের এই এলাকার আরও উন্নয়ন হতে পারত। রাজ্য সরকারের উচিত, উন্নয়নের দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া।’’ মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়, দলের জেলা সভাপতি ধীমান কোলে প্রমুখ। কেশপুর থেকে ফিরে মেদিনীপুরে আসেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। সেখানে বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তের মূর্তিতে মাল্যদান করেন বিজেপি নেতৃত্ব। শেষে সবংয়ে গিয়ে অনাথবন্ধু পাঁজার মূর্তিতে মালা দেওয়া হয়। সেখানে স্বাধীনতার বীর যোদ্ধাদের স্মরণে সভাও হয়।

বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তাঁরা এ দিন মাইক ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন। কেন ‘তেরঙ্গা যাত্রা’ তা মানুষকে বোঝাতে চেয়েছিলেন। তবে মাইক পাওয়া যায়নি। বিজেপির অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে। তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য জানিয়েছেন, কে মাইক ভাড়া দেবেন, কে দেবেন না, এটা মাইক ব্যবসায়ীদের ব্যাপার। এতে দলকে জড়ানো ঠিক নয়।

আর ইতিহাস সংরক্ষণ নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পাল্টা বিঁধতে ছাড়েননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির কথায়, “ইতিহাসের নানা নিদর্শন কী ভাবে সংরক্ষণ করা যায় তা রাজ্য সরকার দেখিয়ে দিয়েছে। তা থেকে ভারত সরকার শিখুক!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন