ঘরের-পথে। নিজস্ব চিত্র
আন্দামানের এক যুবতীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিল সুতাহাটা থানার পুলিশ। বুধবার নিমতৌড়ির একটি হোম থেকে লক্ষ্মী মণ্ডল নামে বছর একুশের ওই যুবতীকে নিয়ে যান তাঁর দাদু চিত্ত নন্দী। প্রায় একমাস পর নাতনিকে ফিরে পেয়ে খুশি চিত্তবাবু, শোনালেন লক্ষ্মীর হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি। তাঁর অনুমান, পাচার করে দেওয়ার জন্যই লক্ষ্মীকে মেদিনীপুরে নিয়ে আসা হয়েছিল। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। খোঁজ চলছে লক্ষ্মীর স্বামী অমল মণ্ডলের।
চিত্তবাবু জানিয়েছেন, মা মরা লক্ষ্মীকে ছোটবেলাতেই দাদু-দিদিমার হাতে তুলে দিয়ে চলে যান তাঁর বাবা। তারপর থেকে আন্দামানের নীল আইল্যান্ডের বাসিন্দা চিত্তবাবু আর তাঁর স্ত্রীই মানুষ করেছেন মেয়েটিকে। বছর পাঁচেক আগে সেখানে শ্রমিকের কাজ করতে আসে অমল। জানায় তার বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে। কিশোরী লক্ষ্মীর সঙ্গে গ়ড়ে ওঠে সখ্য। তারপর বিয়ে। তাঁদের দু’টি মেয়েও রয়েছে। আন্দামানেই ছিল তাঁদের সংসার।
বছর খানেক আগে অমল দেশের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরে ফেরার কথা বলতে শুরু করে। তবে সে জানায়, বেশি দিনের জন্য নয়। তাই মেয়েদের নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। দুই-তিন বছরের দুই মেয়েকে দিদিমার জিম্মায় রেখে অমল-লক্ষ্মী পাড়ি দিয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুরের উদ্দেশে। লক্ষ্মীর কথায়, ‘‘৩০ জুন চৈতন্যপুর বাসস্ট্যান্ডে আমাকে বসিয়ে রেখে কোথায় চলে গেল অমল। কিছুক্ষণ পর ফিরে এল। সঙ্গে অন্য একজন লোক। কাছে আসেনি। কিছু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলছিল। সবটা শুনতে পাইনি। শুধু বুঝেছি— হবে না, হবে না। কালো, কালো। তারপর ওরা আবার কোথায় চলে গেল।’’ সেই থেকে খোঁজ নেই অমলের। বন্ধ তার মোবাইল ফোন। আশপাশের লোকজনকে বলে সুতাহাটা থানায় পৌঁছন লক্ষ্মী। ‘স্বামী নিখোঁজ’— এই মর্মে অভিযোগও দায়ের করেন। কিন্তু সুতাহাটা আর অমল মণ্ডলের নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারেননি তিনি। পরে আদালতের নির্দেশে লক্ষ্মীকেই নিমতৌড়ির হোমে পাঠায় পুলিশ। খোঁজ খবর শুরু হয় নীল আইল্যান্ডে তাঁর পরিবারের।
অমল কি তবে কোনও আন্তঃরাজ্য পাচার চক্রের সদস্য। নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল তার? এ দিন জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেন, ‘‘মেয়েটি স্বামীর নামে কোনও অভিযোগ দায়ের করেননি। তা ছাড়া আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল ওই যুবতীকে তাঁর পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া। অমলের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এটি পাচারের ঘটনা নাকি প্রতারণার তা তদন্তে জানা যাবে।’’
পাঁচ বছরের ভরা সংসার হঠাৎ একদিন এ ভাবে ভেঙে যাওয়ায় হতভম্ভ লক্ষ্মী। অবাক চোখে সে শুধু একটাই প্রশ্ন করছে, ‘‘ওর কি তবে অন্য সংসার ছিল মেদিনীপুরে? আমাকে লুকিয়ে কাকে যেন ফোন করত! আমি তো বুঝিনি।!’’ আপাতত মেয়েদের কাছে ফিরতে চান তিনি। তাই শুক্রবার জাহাজে উঠবেন দাদুর সঙ্গে।