—প্রতীকী চিত্র।
কোন ধর্মমতে এবং কী ভাবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে, এই টানাপড়েনের মধ্যেই দেহ পড়ে থাকল প্রায় দেড় দিন ধরে। শেষে প্রায় ৩৬ ঘন্টা পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবং গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় সমাধিস্থ করা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার জালিমান্দা অঞ্চলের গোপালপুর গ্রামের যুবক সুবল বেসরাকে। আদিবাসী পরিবারটির অভিযোগ, ধর্ম পরিবর্তন করার ফলেই এই সমস্যা হয়েছে।
বছর চারেক আগে আদিবাসী ওই পরিবার খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে। শনিবার সকালে ঘুমের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৪২ বছরের সুবলের। বাড়িতে সুবলের বৃদ্ধা মা এবং স্ত্রী রয়েছেন। শনিবার বেলা গড়িয়ে গেলেও ছেলে ঘুম থেকে উঠছে না দেখে, সুবলের মা দুলি দেবী এবং তাঁর স্ত্রী কান্নাকাটি শুরু করে দেন। তাঁদের কান্নাকাটি শুনে ছুটে আসেন এক প্রতিবেশী। তিনিই জানান, সুবলের মৃত্যু হয়েছে।
এর পরেই দুলি গ্রামে খ্রিস্টান ধর্মের প্রধান রবি সোরেনের বাড়িতে যান। অভিযোগ, রবির পরিবার কোনও সহযোগিতা করেনি। তার পরেই গ্রামের আদিবাসী সমাজের প্রধান রবীন্দ্রনাথ কিস্কুর বাড়িতে ছুটে যান দুলি। রবীন্দ্রনাথ আলোচনা শুরু করেন তাঁদের সমাজের যুব নেতা সুনীল বেসরা-সহ অন্যদের সঙ্গে। এ সব করতে করতেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়। আলোচনায় বসে আদিবাসী সমাজ। সন্ধ্যায় আদিবাসীদের সংগঠন সিদ্ধান্ত হয়, রবিবার সকালে আরও একবার খ্রিস্টান ধর্মের লোকজনদের অনুরোধ করা হবে। তাঁরা এগিয়ে না এলে আদিবাসী সমাজের তরফেই শেষকৃত্য করা হবে। রবিবার সকালে ওই গ্রামের আদিবাসী সমাজের লোকজন খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী রবি, রতন সোরেনদের বাড়িতে যান। রবি, রতনদের দাবি, সুবলের পরিবার আগে নিয়মিত প্রার্থনা ও ধর্মাচরণ করলেও এখন তা ঠিকঠাক করেন না। তাই তাঁরা শেষকৃত্যে সহযোগিতা করতে পারবেন না। রবিবার দুপুরে গ্রামে এই নিয়েই শুরু হয় বাদানুবাদ।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোন পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন। পৌঁছোন জেলা পরিষদের শিশু ও নারী কল্যাণ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শান্তি টুডুও। সকলের মধ্যস্থতায় স্থির হয়, গ্রামের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরাই সুবলকে সমাধিস্থ করবেন। তবে, সহযোগিতা করবেন আদিবাসী সমাজের লোকজনও। সেই মতো রবিবার সন্ধ্যা নাগাদ সুবলের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। ডেবরার জনপ্রতিনিধি তথা জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তি বলেন, ‘‘এই প্রত্যন্ত এলাকার আদিবাসী সমাজের লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এ নিয়ে গ্রামে মাঝেমধ্যেই মতপার্থক্য তৈরি হচ্ছে। সুবলের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। শেষপর্যন্ত প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এবং আদিবাসী সমাজের সহযোগিতায় সব কিছু সুষ্ঠু ভাবে মিটেছে।’’