একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অধরা!
কোনও দলই পুরবোর্ড গঠনের জন্য ম্যাজিক ফিগার ১৮-তে পৌঁছতে পারেনি। ফল, পুরসভা ত্রিশঙ্কু। তাই ভোট গণনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও রেলশহরে জল্পনা অব্যাহত। সব দলই প্রয়োজনীয় সংখ্যা জোগাড় করতে ময়দানে নেমেছে। তবে প্রকাশ্যে তুরুপের তাস দেখাতে রাজি নয় কেউই।
বুধবার খড়্গপুরে বিজেপির শহর কার্যালয়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে পুরসভা সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক করেন জেলা নেতৃত্ব। বৈঠকে চূড়ান্ত কিছু সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বিজেপির এক সূত্রে খবর, দল আপাতত পুরবোর্ড গঠনের জন্য কাউকে সমর্থনের পরিবর্তে বিরোধী দলের ভূমিকা পালনকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ দিন এক বৈঠকে বসেন বাম নেতৃত্বও। এক বাম নেতার কথায়, ‘‘বৈঠকে তৃণমূলকে সমর্থনের বিষয়ে সকলেই এক বাক্যে না বলেছেন।’’
খড়্গপুরে ২০১০ সালের পুরভোটের ফলেও কেউ ম্যাজিক ফিগারের কাছে পৌঁছতে পারেনি। গত পুরভোটে কংগ্রেস ১২টি ও তৃণমূল ১৫টি আসন পেয়েছিল। বৃহত্তর সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে পুরবোর্ড গড়ে তৃণমূল। সাড়ে তিন বছর পরে অনাস্থা ভোটে বোর্ড হাতছাড়া হয় শাসক দলের। তাই এ বার প্রথম থেকেই স্থায়ী পুরবোর্ড গড়াকেই প্রচারের হাতিয়ার করেছিল ঘাসফুল শিবির। যদিও বাস্তবে সব দলকেই ম্যাজিক ফিগারের আগেই থামতে হয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এ বার পুরভোটে কংগ্রেস ১১টি ও তৃণমূল ১১টি আসন পেয়েছে। বামেরা পেয়েছে ৬টি আসন। বিজেপিকেও ৭টি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বামেরা কংগ্রেস বা তৃণমূলকে সমর্থন করলেও সংখ্যাটা দাঁড়াবে ১৭। ফলে তাতেও ম্যাজিক ফিগার ১৮তে পৌঁছতে পারবে না যুযুধান হাত বা ঘাসফুল শিবির। একমাত্র বিজেপির সমর্থন পেলেই কংগ্রেস বা তৃণমূলের পক্ষে পুরবোর্ড গঠন সম্ভব। যদিও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “এখনও সংখ্যার বিচারে এগিয়ে থাকা দু’টি দল থেকে সমর্থনের জন্য কোনও প্রস্তাব পাইনি। মানুষ আমাদের বিরোধী দল হিসেবে দেখতে চেয়েছে, তখন সেই ভূমিকাই পালন করব।”
বুধবার সিপিএমের জোনাল কার্যালয়ে এ বিষয়ে এক দফা আলোচনাও হয়। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য মনোজ ধর বলেন, “পুরবোর্ড গড়তে তৃণমূলকে সমর্থনের কোনও প্রশ্নই নেই।” যদিও কংগ্রেস বামেদের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে তৎপর- রেলশহরে এই জল্পনা ছড়িয়েছে। এ বিষয়ে সিপিএমের শহর জোনাল সম্পাদক অনিতবরণ মণ্ডল বলেন, “বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই থাকবে। তবে শহরের স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্ব সমর্থন নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘ওরা আমাদের সমর্থন পাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছে। তবে এখনও এই বিষয়টি আলোচনার স্তরে রয়েছে।’’ তাঁর কৌশলী মন্তব্য, ‘‘এখনও কোনও সিদ্ধান্ত না হলেও আমরা চাইব শহরে স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত, স্থায়ী পুরবোর্ড গড়ে উঠুক।”
কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই বামেদের এক শীর্ষ স্থানীয় রাজ্য নেতার থেকে সমর্থনের ইঙ্গিত মিলেছে। এ ক্ষেত্রে কংগ্রেস বামদের সমর্থন পেলে বৃহত্তর জোট হিসেবে খড়্গপুরে তাদের পুরবোর্ড গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ নিয়ে কংগ্রেসের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডে বলেন, “পুরবোর্ড গড়তে দলের সকলের সঙ্গে আলোচনা করব। তবে বোর্ড গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছি।” কংগ্রেসের এক সূত্রে খবর, কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বিজেপির এক কাউন্সিলর সুযোগ বুঝে কংগ্রেসে ভিড়তে পারে। অন্য আর এক কাউন্সিলরের সঙ্গে তৃণমূল শিবিরের সম্পর্ক ভাল নয়। তাই বিজেপি তৃণমূলকে সমর্থন করলেও ওই দুই কাউন্সিলর বেঁকে বসতে পারে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, পুরবোর্ড গঠনের জন্য কাউন্সিলর ভাঙানোর খেলা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। বিজেপি সূত্রে খবর, এ দিনের বৈঠকে দলের সমস্ত কাউন্সিলরদের জোটবদ্ধ থাকার কথা বলা হয়েছে। কোনও প্রলোভনে পা না দেওয়ার ইঙ্গিতও দেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে খবর। যদিও বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায় বলেন, “দলের কাউন্সিলরদের সতর্ক করার প্রয়োজন নেই। ওদের প্রতি আমাদের বিশ্বাস রয়েছে। শুধু ৭ জন কাউন্সিলরকে একসঙ্গে থাকার কথা বলা হয়েছে।”
তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, পুরবোর্ড গঠনের জন্য অন্য দলের কাউন্সিলরকে দলে টানার খেলায় নেমেছে শাসক দলও। এ বিষয়ে জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক অজিত মাইতিও বলেন, “বোর্ড গড়ার বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। সে জন্য বাম বা বিজেপির সমর্থন নেওয়ার প্রয়োজন হবে বলে মনে হয় না। তবে দলে যদি কেউ আসে, স্বাগত জানাব।”