পর্যটকের ঢলে ঠাঁই নেই ঝাড়গ্রামে

ঝাড়গ্রামে পর্যটনের পালে হাওয়া লেগেছে। কিন্তু ভরা মরসুমে ঠাঁই নেই অরণ্যশহরের হোটেলে। সরকারি অতিথিশালাগুলির ঘর ভাড়া বেশি। ঘরের সংখ্যাও হাতে গোনা। অন্য দিকে রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি অতিথিশালার আকাশ ছোঁয়া ভাড়া মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে।

Advertisement

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০৩
Share:

ঝাড়গ্রামের প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। ছবিটি তুলেছেন দেবরাজ ঘোষ।

ঝাড়গ্রামে পর্যটনের পালে হাওয়া লেগেছে। কিন্তু ভরা মরসুমে ঠাঁই নেই অরণ্যশহরের হোটেলে। সরকারি অতিথিশালাগুলির ঘর ভাড়া বেশি। ঘরের সংখ্যাও হাতে গোনা। অন্য দিকে রাজবাড়ির ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি অতিথিশালার আকাশ ছোঁয়া ভাড়া মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। বেসরকারি লজ-হোটেলের ভাড়া তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই কম। কিন্তু সেখানেও ঘরের সংখ্যা যথেষ্ট নয়। ঝাড়গ্রামে ঘুরতে এসে হতাশ হচ্ছেন ভ্রমণার্থীরা।

Advertisement

গত কয়েক বছরে বহু পর্যটকরা ঝাড়গ্রামে আসছেন। কিন্তু সেই অর্থে ঝাড়গ্রামে উপযুক্ত পর্যটন পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ পর্যটকদেরই। গড়িয়ার তাপ্তী নাহা, যাদবপুরের অমিতাভ প্রামাণিক, আসানসোলের রৌম্য সরকারদের বক্তব্য, “অরণ্যশহরে সুলভ দামে থাকার জায়গা পর্যাপ্ত নেই। আশেপাশের ও দূরের জায়গাগুলি ঘুরে দেখার জন্য কম দামের কোনও কনডাকটেড বাস সার্ভিস নেই।” ঝাড়গ্রাম শহরের উপকন্ঠে বাঁদরভুলায় জঙ্গলের মাঝে তৈরি হয়েছে বন উন্নয়ন নিগম পরিচালিত ঝাড়গ্রাম প্রকৃতি পর্যটন কেন্দ্র। এখানে মাত্র ৬টি ঘর রয়েছে। প্রতিটি ঘরে দু’জন করে মোট ১২ জন থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কমপ্লিমেন্টরি ব্রেকফাস্ট-সহ দৈনিক ঘর ভাড়া ২,২৮০ টাকা। ঐতিহ্যবাহী ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ির সামনে তৈরি হয়েছে পর্যটন দফতরের সরকারি রাজবাড়ি ট্যুরিস্ট কমপ্লেক্স। এখানে ২২ টি ঘরে ৪৪ জন থাকতে পারেন। কমপ্লিমেন্টরি ব্রেকফাস্ট-সহ দৈনিক ঘর ভাড়া ১,৯১২ টাকা। এ ছাড়া রাজবাড়ির চত্বরের ভিতরে রাজ পরিবারের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি অতিথিশালা রয়েছে। সেখানে ঘর ভাড়া আরও বেশি। রাজবাড়ির ডিল্যাক্স ডবল বেড ঘরের দৈনিক ভাড়া ৩,৫০০ টাকা। সেমি ডিল্যাক্স ডবল বেড ঘর ২,৫০০ টাকা। থ্রি বেড নন এসি ১, ৮০০ টাকা। আপাতত, রাজবাড়ির অতিথিশালার ৬টি ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। বাকিগুলি সংস্কারের কাজ চলছে। ফলে, বেশি টাকা দিয়েও সব পরিষেবা যথাযথ পাওয়া যায় না।

অন্য দিকে, গড়পড়তা সাধারণ পর্যটকদের জন্য ঝাড়গ্রামে সুলভ দরে থাকার জায়গার বড়ই অভাব। শহরে ‘ডুলুং’, ‘ঈশানী’, ‘অরণ্যসুন্দরী’ ‘যশোদা ভবন’-এর মতো হাতে গোনা কয়েকটি সুলভ দরের বেসরকারি গেস্ট হাউস রয়েছে। সেগুলিতে থাকার পরিবেশ বেশ ভালো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এই সব হোটেলে ৬০০-৮০০ টাকার মধ্যে ডবল বেড সাধারণ ঘর পাওয়া যায়। এক হাজার থেকে ১,২০০ ও ১,৪০০ টাকার মধ্যে ডবল বেড এসি ঘর মেলে। কিন্তু বেসরকারি হোটেল গুলির প্রতিটিতে গড়ে ১০-২০ টি ঘর রয়েছে। মরসুমে সেগুলি পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। ঝাড়গ্রামের এক বেসরকারি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুমিত দত্ত বলেন, “ঝাড়গ্রামে এখন প্রচুর পর্যটক আসছেন। কিন্তু সাধারণ পর্যটকদের জন্য সুলভ মূল্যে থাকার জায়গাটা বড়ই সীমিত।” ঝাড়গ্রাম হোটেল ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মধুসূদন কর্মকার বলেন, “এক সময় মাওবাদী অশান্তি পর্বে হোটেল ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তাই বেসরকারি স্তরে নতুন করে ব্যবসা বাড়ানোর ঝুঁকি নিচ্ছেন না অনেকে। ঝাড়গ্রাম জেলা হলে আশা করছি, পর্যটন শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে।”

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিংহ এই প্রসঙ্গে বলেন, “সুলভ সরকারি অতিথিশালা ও ডর্মিটরি তৈরির জন্য রাজ্য সরকারের কাছে আমরা একটি প্রস্তাব পাঠিয়ে দিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন