মমতার আশ্বাসেই শুরু লোধা সমীক্ষা

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় লোধা-সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৪৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।—ফাইল চিত্র।

বেশ কয়েক বছর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রায়শই বলতে শোনা যেত, ‘জঙ্গলমহল হাসছে।’ লোকসভা ভোটে সেই জঙ্গলমহলেই তৃণমূলের আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে ধস নেমেছে। বিধানসভা ভোটের আগে হারানো ভোটব্যাঙ্ক ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছে শাসক দল। ঘটনাচক্রে, তারপরেই পশ্চিম মেদিনীপুরে লোধা-সমীক্ষা শুরু হতে চলেছে।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক রশ্মি কমল বলেন, ‘‘জেলায় লোধা-সমীক্ষা শুরু হচ্ছে। সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’ সম্প্রতি জঙ্গলমহলের জন্য তৈরি হয়েছে আলাদা লোধা সেল। সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সেখানে ঠাঁই হয়েছে লোধা প্রতিনিধিদের। এ বার লোধা সমীক্ষার সিদ্ধান্তকে লোধা সংগঠনগুলি স্বাগত জানিয়েছে। লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির রাজ্য সম্পাদক বলাইচন্দ্র নায়েক বলেন, ‘‘সমীক্ষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট তথ্য উঠে আসবে। লোধাদের প্রকৃত অবস্থান জানা যাবে।’’ লোধা-শবর সমাজের রাজ্য সভাপতি মৃণাল কোটাল বলেন, ‘‘আশা করি, সমীক্ষা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে প্রশাসন লোধাদের উন্নয়নে কার্যকরী পদক্ষেপ করবে। তবেই এই সমীক্ষা সার্থক হবে।’’

জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘সমীক্ষার ফর্মে লোধাদের আর্থ- সামাজিক ৩৬টি বিষয় সম্পর্কিত প্রশ্ন রয়েছে। এর মাধ্যমে জেলায় লোধা-সম্পর্কিত ডাটা ব্যাঙ্কও তৈরি হয়ে যাবে।’’ সম্প্রতি লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির এক প্রতিনিধি দল কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতরের প্রধান সচিব সঞ্জয় থাড়ের সঙ্গে দেখা করেও দলটি তাদের দাবিদাওয়া জানায়। ফিরে এসে দলটি জানিয়েছিল, মুখ্যমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

Advertisement

লোধা-শবর সংগঠনগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৪ সালে বাম-আমলে একবার এমন সমীক্ষা হয়েছিল জেলায়। এখন পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৪৫ হাজার ও ঝাড়গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার লোধা-শবর পরিবার রয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, এ বার সমীক্ষায় লোধা পরিবারের সদস্যদের একশো দিনের কাজের জবকার্ড আছে কি না, তাঁরা একশো দিনের কাজ পেয়েছেন কি না, পরিবারের কতজন বার্ধক্যভাতা পাওয়ার উপযুক্ত, রেশন কার্ড আছে কি না—সে সব দেখা হবে। পরিবারের কেউ জাতিগত শংসাপত্র পেয়েছেন কি না, পরিবারের কোনও শিশু স্কুলে যায় কি না, উপযুক্তরা কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রকল্পের সুবিধে পেয়েছেন কি না—তার খোঁজও নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক জানাচ্ছেন, ‘‘লোধাদের হাঁস-মুরগি- ছাগল দেওয়ার প্রকল্প রয়েছে। তাঁদের প্রাণিপালনে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। প্রাণিপালনের কোনও প্রকল্পের প্রয়োজন আছে কি না, দেখা হবে।’’

তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘লোধাদের উন্নয়নে যত্নশীল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। গত কয়েক বছরে অনেক কাজ হয়েছে। আরও হবে।’’ এই সমীক্ষা নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি শমিত দাশের খোঁচা, ‘‘সমীক্ষার নামে জঙ্গলমহলের মানুষকে ভোলানোর চেষ্টা করছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। মানুষকে এ ভাবে ভোলানো যাবে না!’’

ফের কি জঙ্গলমহল হাসবে, উত্তর দেবে সময়েই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন