ভোট মরসুমে রামনবমীর মিছিল ঘিরে পারদ চড়ছিল। প্রশাসন সাফ জানিয়েছিল, অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা যাবে না। শনিবার বিকেলে মেদিনীপুরে বিজেপি ঘনিষ্ঠদের বাইক মিছিলে অবশ্য অস্ত্র চোখেও পড়েনি। তবে সকালে খড়্গপুর শহরের বিভিন্ন আখড়ায় গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হাতে অস্ত্র তুলে নিলেন। কখনও হাতে নিলেন তরোয়াল, কখনও আবার গদা।
দিলীপ এ বার মেদিনীপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী। তাঁর প্রতিপক্ষ তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়ার খোঁচা, ‘‘অস্ত্র নিয়ে কার মাথা কাটতে চাইছে কে জানে! তবে আগামী ১২মে দিলীপ ঘোষের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সংসদীয় গণতন্ত্রে কাটা পড়ে যাবে।"
গদা কেন, কার মাথা ফাটাবেন? দিলীপের জবাব, ‘‘পশ্চিমবাংলার সুস্থ সংস্কৃতিকে যারা কলুষিত করছে, হিংসার প্লাবন বইয়ে দিচ্ছে, রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিচ্ছে, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে হরণ করছে, মা- বোনেদের সম্মানহানি করছে, দরকার হলে গদা-তরোয়াল তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করব।’’ দিলীপের আরও ব্যাখ্যা, “অস্ত্র নিয়ে রাস্তায় ঘোরাফেরা করা, ভয় দেখানো বেআইনি। কিন্তু আখড়ার অস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে। রামনবমীর দিনে যদি আমাকে কেউ অস্ত্র দান করে নিশ্চয় সেটা গ্রহণ করব। খালি রসগোল্লা খাব, আর হাতিয়ার ধরব না সেটা হয় না।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
গত বছরও অস্ত্র মিছিলে প্রশাসনিক নিষেধ ছিল। তবে রেলশহরে এসে রামনবমীর শোভাযাত্রায় হাতে তরোয়াল, গদা তুলে নিয়েছিলেন দিলীপ। এ বার অবশ্য নির্বাচন থাকায় অস্ত্র মিছিলে নিষিদ্ধ করতে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। জেলাশাসক পি মোহনগাঁধী বলেন, “রামনবমীর শোভাযাত্রা হতেই পারে। তবে মিছিলে কোনও অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। ১৪৪ ধারা জারি করে রাম নবমী উদযাপনে অস্ত্র ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।” খড়্গপুরের মহকুমাশাসক সুদীপ সরকার জানিয়েছেন, নির্দেশ পালন হচ্ছে কিনা সেটা দেখবে পুলিশ।
পথে রামনবমীর বাইক মিছিল। মেদিনীপুর শহরে শনিবার। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
এই অবস্থায় প্রশাসনিক নির্দেশ মেনেই মেদিনীপুরের বাইক মিছিলে অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘মিছিলে গদা, ত্রিশূল, তরোয়ালের রেপ্লিকা ছিল। ওগুলো কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছে। পুলিশ-প্রশাসন অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে না বলেছিল। আমরা করিওনি।’’ এ দিন গোটা মিছিলের ভিডিয়োগ্রাফি করেছে পুলিশ। মেদিনীপুরের আকাশে উড়তে দেখা গিয়েছে ড্রোন ক্যামেরা।
এ দিন সকালেই খড়্গপুরে পৌঁছন দিলীপ। ঝুলি, সোনামুখী, তালবাগিচা, মালঞ্চ, মন্দিরতলা, ইন্দার একাধিক আখড়ায় রামনবমীর প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন তিনি। ওই পরিদর্শনের মাঝেই ঝুলি ও তালবাগিচায় গদা, তরোয়াল, তির-ধনুক হাতে তুলে নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। সন্ধ্যায় আখড়ার শোভাযাত্রায় পা মেলান তিনি। প্রথা মেনে লাঠি খেলতেও দেখা যায় বিজেপি প্রার্থীকে। এই নিয়ে তৃণমূল সরব হয়েছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা তৃণমূল নেতা প্রদীপ সরকার বলেন, “আমি শহরের প্রায় প্রতিটি আখড়ায় গেলেও অস্ত্র ধরিনি। দিলীপ ঘোষ রামনবমীর সঙ্গে রাজনীতিকে জড়িয়ে প্রচারের আলোয় আসতে অস্ত্র ধরেছেন। আমরা কমিশনে জানাব।”
শনিবার বিকেলে মেদিনীপুরে ‘শ্রী রামনবমী উৎসব সমিতি’র উদ্যোগে বাইক মিছিল বেরোয়। সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আশীর্বাদ ভৌমিক এবং মলয় দাস। আশীর্বাদ বিজেপির যুব সংগঠন যুবমোর্চার জেলা সভাপতি। মিছিলে ছিল জাতীয় পতাকাও। ‘জয় শ্রীরাম’-এর পাশাপাশি ‘হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ, পাকিস্তান মুর্দাবাদ’- স্লোগানও শোনা যায়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘রামনবমীর মিছিলে জাতীয় পতাকা থাকা অন্যায়।’’ বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘দেশপ্রেমের প্রচারেই উৎসাহী যুবকেরা জাতীয় পতাকা রেখেছিলেন।’’