সোনার হাতে ছুটছে টোটো

নোটবন্দি থেকে জিএসটি, মোদী সরকারের জোড়া সিদ্ধান্তের কী প্রভাব পড়তে পারে ভোটে? কী বলছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে স্বর্ণশিল্পী? খোঁজ নিল আনন্দবাজার পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ও ঘাটাল সোনার কারবারের অন্যতম কেন্দ্র। এখানকার কয়েক হাজার মানুষ স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

সোনা ছেড়ে তামার কাজে ব্যস্ত কারিগর। দাসপুরে। নিজস্ব চিত্র

বছর তিনেক আগে রাজ্য বা দেশের বাইরে থাকা সোনা কারিগরেরা কবে দেশে ফিরবেন তার অপেক্ষায় থাকত গোটা গ্রাম। তাঁরা ফিরলে গ্রামে উৎসবের পরিবেশ তৈরি হতো। মুখে হাসি ফুটত ব্যবসায়ীদের। তাঁদের কেউ জমি-বাড়ি কিনতেন, কেউ কিনতেন গাড়ি। কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার সময়ে কেউ কেউ আবার সেই গাড়ি বিক্রিও করে দিতেন। এসবের ‘মিডলম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন অনেক বেকার যুবক। কিন্তু নোটবন্দির পরে সেই সব এখন শুধুই অতীত।

Advertisement

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ও ঘাটাল সোনার কারবারের অন্যতম কেন্দ্র। এখানকার কয়েক হাজার মানুষ স্বর্ণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। কেউ এলাকাতেই সোনার কারবার করেন। কেউ মুম্বই, সুরাত, দিল্লিতে সোনার কারিগর হিসেবে কাজ করেন। ২০১৬-র নভেম্বরে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিলের পরে ভিন্‌ রাজ্য থেকে বহু সোনা ব্যবসায়ী ও কারিগর ঘাটাল ও দাসপুরে গ্রামের বাড়িতে ফিরে এসেছিলেন। জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, ফিরে আসার সেই সংখ্যা লক্ষাধিক। তারপর ধীরে ধীরে ওই এলাকায় সোনার ব্যবসার সুদিন চলে যায়। সে আর ফিরে আসেনি।

নোটবন্দির আগে ঘাটাল-দাসপুরের মতো রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, বন্যা হওয়া জনপদে রাস্তার ধারে কাঠা প্রতি জমির দাম ছিল ২০ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা। কোথাও সেই দাম ৪০ লক্ষ টাকা ছুঁয়ে যেত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সোনার কারবারিরা একই জমি বার বার কিনে ও বেচে জমির দাম বাড়িয়ে দিতেন। নোটবন্দির পরে জমি কেনাবাচা প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এখন পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক হলেও দাম ওঠেনি। নোটবন্দির পরে কাজ হারানো যুবকদের পাশে দাঁড়াতে সমর্থন প্রকল্প চালু করে রাজ্য সরকার।

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

দিল্লির স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের অন্যতম সদস্য দাসপুরের বাসিন্দা তাপস মাঝি জানান, যাঁরা সোনার কাজে যুক্ত, তাঁদের অনেকে অন্য ব্যবসাতেও বিনিয়োগ করতো। নোটবন্দির পরে মূল ব্যবসায় রোজগার কমেছে। অন্য ব্যবসায় বিনিয়োগের প্রশ্নই নেই। তাঁর দাবি, ‘‘নোটবন্দির সময়ে নগদ না থাকায় পুরো ব্যবসাই বন্ধ হয়েছিল। অনেক দোকানের ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাজার হাজার কারিগর পথে বসেছিলেন।’’ দাসপুরের মণিময় দাসের সোনার ব্যবসা রয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায়। তাঁর দাবি, নোটবন্দির পরে যাঁরা গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২০ শতাংশ কর্মস্থলে ফেরেননি। অনেকে সোনার কাজ ছেড়ে তামা কিংবা রুপোর ব্যবসা শুরু করেন। দাসপুর-২ ব্লকে সরকারি ভাবে তামার হাব হয়েছে। এখানে কয়েক হাজার শিল্পীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কেউ কেউ পুরোপুরি পেশা পরিবর্তন করেছেন। তেমনই একজন হলেন দাসপুরের অয়ন হুতাইত। তিনি এখন টোটো চালান। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘১৪ বছর বয়স থেকে সোনার কাজে যুক্ত। টোটো চালিয়ে পেট চালাতে হবে স্বপ্নেও ভাবেনি।’’ তিন বছর কেটে গেলেও সোনা ব্যবসায়ীদের মনে সেই ভোগান্তির স্মৃতি এখনও টাটকা। ঘাটাল লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের অন্যতম ইস্যুও নোটবন্দি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, মোদী সরকারের জন্যই ঘাটাল ও দাসপুরের সোনার দিন গিয়েছে। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলছেন “যে সিদ্ধান্তের জন্য মানুষের রুজি- রুটি, সংসার বিপন্ন হয়, সেটা আর যাই হোক ভাল সিদ্ধান্ত হতে পারে না।” তাঁর সংযোজন, “বিজেপি মানুষের সর্বনাশ করেছে। আমাদের সরকার সমর্থন প্রকল্পের মাধ্যমে সেই অসহায় মানুষ, পরিবার গুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। তফাৎ এটাই।”

প্রচারে বিজেপিও বলছে নোটবন্দির কথা। তাঁদের দাবি, নোটবন্দি হয়েছে দেশের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার কথা ভেবে। সাধারণ মানুষের জন্য। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের দাবি, “যা হয়েছে মঙ্গলের জন্য হয়েছে। সব সিদ্ধান্তের ভাল ফল রাতারাতি মেলে না। অপেক্ষা করতে হয়। মানুষ সেটা বুঝবেন। ২৩ মে সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবে তৃণমূল।” (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন