রাম নামের টক্কর

মিছিলের প্রস্তুতি ঘিরে ইতিমধ্যে তেতে উঠতে শুরু করেছে যুযুধান দুই শিবির— তৃণমূল ও বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share:

রামনবমীর ব্যানারে বিজেপি নেতাদের নাম। নিজস্ব চিত্র

লোকসভা নির্বাচনের এক মাসও বাকি নেই। ভোটের মুখে জেলায় এ বার রামনবমীর ঝাঁঝ যেন আরও বেশি!

Advertisement

মিছিলের প্রস্তুতি ঘিরে ইতিমধ্যে তেতে উঠতে শুরু করেছে যুযুধান দুই শিবির— তৃণমূল ও বিজেপি। জানা গিয়েছে, ১৩ এপ্রিল মেদিনীপুরে বাইক মিছিল করবেন বিজেপি-ঘনিষ্ঠেরা। থাকতে পারেন দলের প্রার্থী তথা দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও। ১৭ এপ্রিল মেদিনীপুরের পথে পাল্টা বাইক মিছিল করবেন তৃণমূল-ঘেঁষারা। থাকতে পারেন দলের প্রার্থী মানস ভুঁইয়া। দুই শিবিরই শহরে নিজেদের কর্মসূচির ফেস্টুন ঝুলিয়েছে।

রামনবমীর প্রস্তাবিত মিছিল চিন্তা বাড়াচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের অন্দরে। মিছিল ঘিরে কোথাও যাতে অশান্তি না হয়, সেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে পুলিশ। ইতিমধ্যে এক বৈঠক হয়েছে। রামনবমীতে কোথায় কী ধরনের পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সেই খোঁজখবর নিয়েছেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া। বৃহস্পতিবার জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া কোনও মিছিল করা যাবে না। মিছিলে কোনও ভাবেই অস্ত্র ব্যবহার করা যাবে না। অস্ত্র থাকলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Advertisement

পুলিশের এক সূত্রে খবর, শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখতে প্রতিটি মিছিলের সঙ্গে থাকতে পারে পুলিশ এসকর্ট। অনুমতি দেওয়ার সঙ্গে মিছিলের সময় এবং পথ ঠিক করে দেওয়া হবে। প্রতিটি মিছিলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভিডিয়ো রেকর্ডিং করা হতে পারে বলেও পুলিশের ওই সূত্রে খবর। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অশান্তি যাতে না হয় সে জন্য আগেভাগে প্রস্তুত হচ্ছে পুলিশ।’’ সামনে নির্বাচন থাকায় রাজনৈতিক দলগুলো রামনবমীকে প্রচারের হাতিয়ার করতে চাইছে। কেউ কাউকে বিনাযুদ্ধে এক ইঞ্চিও মাটি ছাড়তে চাইছে না। মিছিলের আয়োজক কমিটিগুলো অরাজনৈতিক বলে দাবি করা হলেও কমিটিগুলোর পিছনে কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের ‘মদত’ থাকে।

রামনবমীর ব্যানারে তৃণমূল নেতাদের নাম। নিজস্ব চিত্র

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

১৩ এপ্রিল দুপুরে যেমন মেদিনীপুরে যে বাইক মিছিল হবে, তার উদ্যোক্তা ‘শ্রী রামনবমী উৎসব সমিতি’। সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আশীর্বাদ ভৌমিক এবং মলয় দাস। আশীর্বাদ বিজেপির যুব সংগঠন যুবমোর্চার জেলা সভাপতি। অন্য দিকে, ১৭ এপ্রিল বিকেলে মেদিনীপুরে যে বাইক মিছিল হবে সেই মিছিলের উদ্যোক্তা ‘মেদিনীপুর শহর ক্লাব সমন্বয় কমিটি’। এই মিছিলের ব্যবস্থাপনায় রয়েছেন স্নেহাশিস ভৌমিক। স্নেহাশিস শহর তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি। রামনবমীর মিছিল ঘিরে জেলা জুড়েই যে জোর টক্কর হতে চলেছে, তা যুযুধান দুই দলের দুই জেলা ‘সেনাপতির’ কথাতেই স্পষ্ট। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ বলেন, ‘‘উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গেই রামনবমী পালন হবে। কেউ ঠেকাতে পারলে ঠেকাক!’’ তৃণমূলকে তাঁর খোঁচা, ‘‘আগে তৃণমূল কখনও রামনবমী পালন করত না। ভোটের জন্য রাম নাম শুরু করেছে ওরা!’’ বিজেপিকে ফাঁকা মাঠ না ছাড়ার বার্তা দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘রামনবমী পবিত্র উৎসব। বিভিন্ন ক্লাব, সংগঠন উৎসবের আয়োজন করবে। আমরা থাকব।’’ বিজেপিকে বিঁধে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘রামনবমী কারও একার কিংবা কোনও দলের উৎসব নয়! আমরা বলেছি, রামনবমী উৎসবে সামিল হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব পালন করতে।’’

সবুজ- গেরুয়া দুই শিবিরেই রামনবমীর মিছিলের প্রস্তুতি এখন তুঙ্গে। টক্কর হবে সেয়ানে- সেয়ানে। সব দেখে মেদিনীপুরের বাম নেতা বিপ্লব ভট্টের কটাক্ষ, ‘‘আসলে তৃণমূল-বিজেপি যাত্রামঞ্চে রাম-রাবণের যুদ্ধ খেলছে। সাজঘরে দু’জনের মধ্যেই সমঝোতা হয়ে গিয়েছে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন