পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে বঞ্চনাকেই হাতিয়ার বিরোধীদের

লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতেই রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে ইতিহাস বিজড়িত এই এলাকায়। গেঁওখালি বাজার, নদীঘাট, পুরাতন বাজার সহ আশপাশের পাড়া ঘুরলেই দেখা যাবে রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন আর পতাকা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গেঁওখালি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৯ ০০:৫০
Share:

সেজে উঠছে পার্ক।

হুগলি, রূপনারায়ণ আর হলদির সঙ্গমস্থলে গেঁওখালি রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে বলতে গেলে একেবারে দুয়োরানি। অথচ এখানে পর্যটনের সম্ভাবনা বরাবরই সরব হয়েছেন এলাকার মানুষ। কিন্তু আজ পর্যন্ত পর্যটন পরিকাঠামোর সে ভাবে এখানে গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ। লোকসভা ভোটে এ বার গেঁওখালিই অন্যতম বড় ইস্যু শাসক এবং বিরোধী দলগুলির কাছে।

Advertisement

রাজ্যের শাসকদলের দাবি, দীর্ঘদিনের ‘বঞ্চনা’ ঘুচিয়ে উন্নয়নের আলো দেখছে ত্রিবেণি সঙ্গমের বিস্তীর্ণ এলাকা। রাস্তাঘাট, সৌন্দর্যায়ন, পানীয় জল, পারাপারের জেটি তৈরির কাজ চলছে বলে ভোটে প্রচার করছে শাসক দল। শাসক দলের দাবি, ৪ কোটি টাকা খরচ করে পল্টুন জেটির কাজ শুরু হয়েছে। ত্রিবেণি সঙ্গম নামে একটি অতিথি নিবাস সংস্কারে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। এলাকার সৌন্দর্যায়নে সুদৃশ্য পার্ক গড়ে তোলা হয়েছে। বন্দোবস্ত করা হয়েছে পানীয় জলের। এছাড়াও গেঁওখালি থেকে কুকড়াহাটি পর্যন্ত পিচ রাস্তার কাজ শেষ হয়েছে। হনুমান মন্দির থেকে কুকড়াহাটি পর্যন্ত আর একটি পিচ রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

Advertisement

লোকসভা ভোটের দিন ঘোষণা হতেই রাজনীতির ছোঁয়া লেগেছে ইতিহাস বিজড়িত এই এলাকায়। গেঁওখালি বাজার, নদীঘাট, পুরাতন বাজার সহ আশপাশের পাড়া ঘুরলেই দেখা যাবে রাজনৈতিক দলের দেওয়াল লিখন আর পতাকা। স্থানীয়দের দাবি, সিপিএমের প্রচার ছিটেফোঁটা চোখে পড়লেও, সিংহভাগ শাসকের দখলে। গেঁওখালি বাজারের ব্যবসায়ী তথা মীরপুরের বাসিন্দা সুরজিৎ লঘুর কথায়, ‘‘আগে কিছুই ছিল না। এখন তবু আলো জ্বলে। রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে। যে পল্টুন জেটি বানানো হচ্ছে, তা শেষ হলে অনেক সুবিধা হবে।’’ স্থানীয়দের দাবি, গেঁওখালি থেকে নদীপথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নুরপুর, হাওড়ার বাগনানে যাতায়াত করেন বহু মানুষ। কিন্তু মান্ধাতা আমলের জেটি পেরিয়ে লঞ্চ ধরতে গিয়ে বহুবার দুর্ঘটনায় পড়েছেন যাত্রীরা। ফেরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত শেখ নেজাবুল জানান, এই পথে অনেক পর্যটকেরাও আসা যাওয়া করেন। পল্টুন জেটির কাজ শেষ হলে যাত্রীর পাশাপাশি পর্যটকও বাড়বে। এলাকার মানুষের আর্থিক অবস্থা অবস্থা কিছুটা ভাল হবে।’’

উত্তরপ্রদেশ থেকে এসে কয়েক বছর ধরে এখানে হোটেল ব্যবসা চালাচ্ছেন এমনই একজনের দাবি, ‘‘যতক্ষণ পর্যন্ত না পরিকাঠামোর উন্নতি হচ্ছে, ততদিন এখানে পর্যটনের উন্নতি হওয়া দুষ্কর।’’ উন্নয়ন নিয়ে শাসক দলের দাবির প্রসঙ্গে স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায় যুক্ত প্রবীণ সুব্রত সামন্ত বলেন, ‘‘ধীরে ধীরে পরিকাঠামো গড়ে উঠছে ঠিকই। কিন্তু আজও বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়নি।’’ শুধু বাসস্ট্যান্ড নয়, এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়েও ক্ষোভ জানালেন অনেকে। অভিযোগ, শাসক দলের মদতে গোটা এলাকা দুষ্কৃতীদের আখড়া হয়ে গিয়েছে। গাঁজা, সাট্টা থেকে বেআইনি ব্যবসায়িক লেনদেন সবই চলছে রমরমিয়ে।

গেঁওখালির উন্নয়ন প্রসঙ্গে তমলুকের তৃণমূল প্রার্থী দিব্যেন্দু অধিকারীর দাবি, ‘‘হলদিয়া উন্নয়ন পর্যদের সহযোগিতায় এখানে আগের চেয়ে পরিকাঠামোর উন্নতি হয়েছে। গেঁওখালিকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ হচ্ছে।’’ পাল্টা বিজেপি জেলা সভাপতি (তমলুক) প্রদীপ কুমার দাসের দাবি, ‘‘এই এলাকা অপরাধীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকাঠামোর অভাবে গেঁওখালি পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে গড়ে ওঠেনি।’’ তিনি জানান, মানুষের সমর্থন পেলে গেঁওখালিকে তাঁরাই প্রকৃত পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তুলবেন।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য শ্যামল কুমার মাইতি বলেন, ‘‘সাংসদ তহবিলের অর্থে কিছুই কাজ হয়নি। মানুষ সব দেখেছে। শাসক দলের প্রচারে কেউ কান দেবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন