মান ভাঙাতে মরিয়া তৃণমূল আলোচনায়

গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে না পেরে ক্ষোভে কেউ নির্দল প্রার্থী লড়াই করেছেন। কেউ বিপক্ষ শিবিরে চলে গিয়েছেন। কেউ আবার দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন কিংবা ‘নিষ্ক্রিয়’।

Advertisement

আনন্দ মণ্ডল

তমলুক শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৯ ০০:০৬
Share:

তমলুকে দিব্যেন্দুর সমর্থনে প্রচার। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রার্থী হতে না পেরে ক্ষোভে কেউ নির্দল প্রার্থী লড়াই করেছেন। কেউ বিপক্ষ শিবিরে চলে গিয়েছেন। কেউ আবার দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন কিংবা ‘নিষ্ক্রিয়’।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের মুখে এইসব বিক্ষুদ্ধস্থানীয় নেতা-কর্মীদের দলের কাজে ফেরাতে উদ্যোগী হলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। আগামী ২০ মার্চ তমলুকের নিমতৌড়িতে দলের জেলা কমিটির সভাও ডাকা হয়েছে। লোকসভা ভোটে দলের প্রচার কৌশল নিয়েই আলোচনা হবে ওই সভায়। সভায় পঞ্চায়েত প্রতিনিধি সহ দলের ব্লক, অঞ্চল ও বুথ সভাপতিদেরও ডাকা হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, ওই সভায় স্থানীয় বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদেরও ডাকা হয়েছে। এর জন্য জেলার প্রতিটি ব্লকেই স্থানীয় নেতারা বিক্ষুদ্ধ ও নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক দফা আলোচনাও সেরে নিয়েছেন।

জেলায় দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ঘটনা বার বার অস্বীকার করা হলেও লোকসভা ভোটের আগে জেলা নেতৃত্বের এমন উদ্যোগ নিয়ে কী বলছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী?

Advertisement

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

শিশিরবাবুর দাবি, ‘‘নানা কারণে মান-অভিমান করে একাংশ নেতা-কর্মী দলের কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন। দলকে মজবুত করতে, সবাইকে দলের কাজে, প্রচারে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে আমরা তাঁদের সঙ্গে কথা বলছি। তাঁদের নিয়ে আলোচনার ব্যবস্থাও হয়েছে।’’

দলীয় সূত্রে খবর, গত বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে মহিলা ও জাতিগত সংরক্ষণের জন্য বিদায়ী পঞ্চায়েতের বিভিন্ন পদাধিকারী তৃণমূলের একাংশ স্থানীয় নেতা-কর্মী প্রার্থী হতে পারেনি। আবার দলের স্থানীয় নেতাদের কোন্দলের জেরে একাংশ পদাধিকারী প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়েন বলে দলের ভিতরেই অভিযোগ ওঠে। এমনকী জেলায় অধিকারী পরিবারের ঘনিষ্ঠ না হওয়ায় বঞ্চনার অভিযোগও তোলেন দলীয় নেতাদের একাংশ। এই সব নেতা-কর্মীদের অনেকেই বিক্ষুদ্ধ হিসেবে নির্দল প্রার্থী হয়ে পঞ্চায়েতে লড়াই করেছিলেন। কিছুক্ষেত্রে আবার বিরোধী শিবিরের প্রার্থী হয়েও লড়াই করেন। অনেকে এ সবের মধ্যে গেলেও দলের কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। উদাহরণ হিসাবে, ময়নার বাকচা পঞ্চায়েতে তৃণমূলের সদস্য হিসেবে জয়ী হওয়ার পর প্রধান পদের দাবি নিয়ে কোন্দলের জেরে একাংশ সদস্য দলের বিরুদ্ধে চলে যান।

এই অবস্থায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে সামগ্রিকভাবে জেলায় বিপুল জয় হলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীদের অনেকে বিরোধী বিজেপি শিবিরে চলে যেতে পারেন বলে তৃণমূল আশঙ্কা, এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তাই জেলায় অধিকারী পরিবারের বিরুদ্ধে দলের একাংশের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে তৃণমূলকে বিরোধীরা বেগ দিতে পারে। সে সব কথা চিন্তা করেই বিক্ষুদ্ধ ও নিষ্ক্রিয় নেতা-কর্মীদের লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে সক্রিয়ভাবে প্রচারে নামাতে উদ্যোগী হয়েছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব।

গত রবিবার তমলুক শহর সংলগ্ন একটি বেসরকারি অতিথিশালায় তমলুক লোকসভা এলাকার তৃণমূলের সমস্ত বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ-সহ জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি বৈঠক হয়। সেখানে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারী, জেলা কোর কমিটির আহ্বায়ক অর্ধেন্দু মাইতি উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকেই দলের ব্লক নেতাদের সকলকে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক, শহিদ মাতঙ্গিনী, ময়না ও নন্দকুমার ব্লকে দলের বিক্ষুদ্ধ ও নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে ইতিমধ্যেই ফোনে যোগাযোগ করে তাঁদের দলের কাজে যুক্ত করতে কথা বলা হচ্ছে।

দলের এক ব্লক সভাপতি বলেন, ‘‘বিক্ষুদ্ধ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের দলের প্রার্থীর হয়ে প্রচারের জন্য নির্বাচনী কমিটিতে রাখার প্রস্তাব দিয়েছি। তবে অনেকদিন ধরে তাঁদের দলের কর্মসূচীতে না ডাকায় প্রথমে ক্ষোভ জানালেও দলীয় প্রার্থীর হয়ে প্রচারে যেতে তাঁরা রাজি হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন