হঠাৎ ফোনে আগুনের আঁচ

শিল্প সংস্থার তরফে পাশে থাকার সব রকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবু জখমদের পরিজনেদের ক্ষোভ, আগুন লাগার পরে মরণ-বাঁচনের সেই মুহূর্তে সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

হলদিয়া শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৩৮
Share:

শোকাচ্ছন্ন: কারখানার বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আহত কর্মীদের পরিজন। শুক্রবার হলদিয়ায়। নিজস্ব চিত্র

রোজকার মতোই ব্যস্ত দিন। তার মধ্যে হঠাৎ একটা ফোন। আর তাতেই চোখের সামনে ঝপ করে নেমে এল অন্ধকার।

Advertisement

হলদিয়া পেট্রোকেমে শুক্রবারের আগুন চোখে জ্বালা ধরিয়েছে অনেকের। উৎসবের মরসুমের মুখে হঠাৎই তছনছ হয়ে গিয়েছে অনেকগুলি পরিবার।

এ দিন হলদিয়া পেট্রোকেমের অগ্নিকাণ্ডে জখম হয়েছেন আধিকারিক, স্থায়ী কর্মী, ঠিকাকর্মী মিলিয়ে ১৩জন। তাঁদের উদ্ধার করে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য পাঠাতে তৈরি হয়েছে ‘গ্রিন করিডর’। শিল্প সংস্থার তরফে পাশে থাকার সব রকম আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবু জখমদের পরিজনেদের ক্ষোভ, আগুন লাগার পরে মরণ-বাঁচনের সেই মুহূর্তে সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের ঘটনাস্থলে দেখা যায়নি।

Advertisement

হলদিয়ার ক্ষুদিরাম কলোনির বাসিন্দা প্রদীপ ভৌমিক সংস্থার ঠিকা‌কর্মী। এ দিন পেট্রোকেমের ন্যাপথা ক্র্যাকার ইউনিটে ভাল্‌ভ মেরামতির কাজে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সুপ্রীতি ভৌমিক বলেন, ‘‘হঠাৎ একটা ফোন আসে মোবাইলে। পেট্রোকেম কারখানার তরফে বলা হয় আমার স্বামী নাকি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। পরিবারের অন্যদের জানিয়ে তড়িঘড়ি বেরিয়ে পড়ি। গিয়ে দেখি, তখনও ধিকিধিকি আগুন জ্বলছে। চার দিকে ধোঁয়া। আমার স্বামীর মতো অন্য যে সব কর্মী জখম হয়েছে, তাঁদের পরিজনেরাও চলে এসেছেন।’’— বলতে বলতে গলা ধরে আসে মহিলার।

কর্মরত অবস্থায় জখম ক্ষুদিরাম কলোনির আরেক বাসিন্দা দাউদ আলির পরিবারের এক সদস্যের ক্ষোভ, ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষের তরফে আমাদের ফোন করা হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর পরে কর্তৃপক্ষের তরফে কারও দেখা মেলেনি। আহতরা কে, কী অবস্থায় রয়েছেন তাও জানতে পারছিলামনা। উৎকন্ঠা বাড়ছিল।’’

প্রায় একই বক্তব্য দীপক সামন্ত, বুদ্ধদেব করণের মতো জখম কর্মীদের পরিজনেদের। অভিযোগ, আহতদের নাম পরিবারের সদস্যদের দ্রুত জানানো হয়নি। বেশ কিছুক্ষণ পরে ভবানীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক আহতদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। ডামাডোল মেটাতেই কেটে যায় বহু সময়। তারপর ‘গ্রিন করিডর’ করে ১৩টি অ্যাম্বুল্যান্সে জখমদের পাঠানো হয় কলকাতায়।

এইচপিএল কর্তৃপক্ষের অবশ্য আশ্বাস, কর্মীদের সুরক্ষা ও কারখানার পরিবেশ রক্ষায় যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সংস্থার ইতিবাচক ভূমিকা যে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে স্বীকৃত, তা-ও জানাতে ভোলেননি কর্তৃপক্ষ।

অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়েই এ দিন পৌঁছন হলদিয়ার মহকুমাশাসক কুহুক ভূষণ, এসডিপিও তন্ময় মুখোপাধ্যায়, হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান শ্যামল আদকেরা। পুরপ্রধান শ্যামল বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। আমরা স্থানীয় ভাবে অ্যাম্বুল্যান্সে করে অগ্নিদগ্ধদের কলকাতা পৌঁছনোর ব্যবস্থা করেছি। চিকিৎসায় যাতে অসুবিধা না হয় তা দেখতে আমি নিজেও কলকাতা যাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন