ঘটা করেই বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন হল সোমবার। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে মেদিনীপুরে পদযাত্রা হয়েছে। পরে সচেতনতা সভাও হয়। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা-সহ সব স্বাস্থ্য কর্তারাই সচেতনতার উপরেই জোর দেন। বুঝিয়ে দেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা গেলেই এই রোগ ঠেকানো সম্ভব।
এই সব সচেতনতার বার্তা বছরভর দেওয়ার পরেও জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ কিন্তু বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের সবস্তরে সমন্বয়ের অভাব এবং দুর্বল পরিকাঠামোর জন্যই জঙ্গলমহলের জেলায় এই পরিস্থিতি। ক’দিন আগে যেমন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে লুধি মাণ্ডি নামে গোয়ালতোড়ের ধামচার এক মহিলার মৃত্যু হয়। ওই মহিলা যে জ্বরে ভুগছেন, সেই খবর ছিল স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে। তবে মহিলার রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। ফলে, জানাও যায়নি যে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্র এর সতত্য স্বীকার করেছে। পাশাপাশি ওই সূত্রের বক্তব্য, কিছু ফাঁক থাকছে, গলদ থাকছে। কোথায় গলদ লুকিয়ে থাকছে এবং কী ভাবে তা দূর করা যাবে তা দেখা হচ্ছে। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বক্তব্য, “মানুষের মধ্যে মশাবাহিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার সব রকম চেষ্টা চলছে।’’
রাজ্যের মধ্যে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। গত দু’মাসে জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, জেলায় বছরে গড়ে ৪,০৬,৮৮৯ জন মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে গড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ১,৩৬১। এর মধ্যে আবার প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামে আক্রান্ত প্রায় ২৩৩।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা মানছেন, রোগ নিবারণে দ্বিমুখী ব্যবস্থা চাই। প্রথমত, সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সচেতন করতে হবে এলাকার স্বাস্থ্যকর্মীদেরই। কমবেশি জেলার সর্বত্র মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়ে গিয়েছে। ম্যালেরিয়া কী, এই রোগে আক্রান্ত হলে কী করা উচিত, গ্রামাঞ্চলে অনেকেই তা ভাল ভাবে জানেন না। তাই এই রোগ ছড়াতে শুরু করে। দফতরের এক কর্তার স্বীকারোক্তি, “এ নিয়ে বিস্তর প্রচার চলে। হয়তো সেই প্রচার দাগ কাটে না! ফলে, বহু এলাকাই মশার আঁতুড়ঘর। দেদার দাপট বাড়ছে মশার। ম্যালেরিয়ার দাপটও কমছে না!’’ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাই স্বাস্থ্য দফতরের বড় কর্তব্য হওয়া উচিত। সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ছে তারা। পরিস্থিতি কবে পাল্টায়, সেটাই দেখার।