বিকিয়ে যাওয়া শানু ঘরে ফিরল মকর পরবে

মাংসের চাহিদা থাকে তুঙ্গে মকর পরবে। তাই শনিবার ভালই দামে বিক্রি হয়েছিল শানু। তারপর ঝাড়গ্রাম শহরের শক্তিনগরের তারাপদ পাত্রের বাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড বেধে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৭:৪০
Share:

সঙ্গী: শানুর সঙ্গে দিদি-বোন। নিজস্ব চিত্র

শান বাঁধানো উঠোন। রবিবার সেখানে এক মনে বট পাতা চিবোচ্ছে শানু। উমা আর পদ্মাবতী ছলছল চোখে শানুর গলায়-পিঠে গলায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে, ‘‘রাগ করিস না ভাই। তোকে আর চোখের আড়াল করব না।’’ শিং নেড়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রয়েছে শানু। জবাইখানার দরজা থেকে ফিরে এসেছে বছর তিনেকের এই খাসি।

Advertisement

মাংসের চাহিদা থাকে তুঙ্গে মকর পরবে। তাই শনিবার ভালই দামে বিক্রি হয়েছিল শানু। তারপর ঝাড়গ্রাম শহরের শক্তিনগরের তারাপদ পাত্রের বাড়িতে হুলুস্থুল কাণ্ড বেধে গিয়েছিল।

মকর পরবের জোগাড়ের জন্য শনিবার শানুকে দশ হাজার টাকায় বেচে দিয়েছিলেন উমা-পদ্মাবতীর বাবা পেশায় কাঠমিস্ত্রি তারাপদ পাত্র। শহরের একটি কাঠের আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করেন তিনি। স্ত্রী, দুই মেয়ে, দুই ছেলে আর শানুকে নিয়ে অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থা। বছর তিনেক আগে মা-হারা সদ্যোজাত ছাগলছানা শানুকে কোলে-পিঠে করে মানুষ করে তুলেছিল উমা আর পদ্মাবতী। উচ্চ মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ বছর আঠারোর উমা আর পড়াশোনা করেনি। বছর তেরোর পার্বতী অষ্টম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলেও এখনও টাকার অভাবে স্কুলে ভর্তি ফি দিতে পারেনি। স্কুলের খাতায় নাম ওঠেনি। উমার ভাই বছর ষোলোর নেপাল গাড়ির খালাসির কাজ করে।

Advertisement

শনিবার শানুকে এক ছাগল পাইকারের হাতে দিয়ে কাজে চলে যান তারাপদ। তার পরে দুই বোন বলে, শানুকে জবাই করে ফেলা হলে তারাও বাঁচবে না। শনিবার দুপুরে বাড়িতে আর হাঁড়ি চড়েনি। উমা-পদ্মাবতীর সঙ্গে চৌকিতে ঘুমোয়, চা-বিস্কুট, ডাল-ভাত-মাছের ঝোল খায়। শনিবার সন্ধ্যায় নেপাল কাজ থেকে ফিরে দিদি-বোনের কান্নাকাটি দেখে স্থির থাকতে পারেনি। বাবার কাছ থেকে ছাগল বিক্রির টাকা নিয়ে সটান ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দেয় নেপাল। তারাপদও সেখানে হাজির হন। কিন্তু ব্যবসায়ী জানিয়ে দেন ছাগল ফেরত পেতে গেলে অতিরিক্ত টাকা আরও ১ হাজার টাকা দিতে হবে। নেপাল মকর পরবের জন্য গাড়ির খালাসির কাজ করে পাঁচশো টাকা পেয়েছিল। সাড়ে দশ হাজার টাকায় রফা করে রাতে ছাগল ছাড়িয়ে আনেন তারাপদ। তারপর রাতে বাড়িতে ডাল-ভাত-আলুসেদ্ধ রান্না হয়। ছাগল ফিরে পেয়ে উমা-পদ্মাবতী বলছে, শানু চলে গেলে আমরা বাঁচবো না। তারাপদ বলেন, ‘‘শানুকে আর বিক্রির কথা কোনও দিন ভাবব না। ও আমাদের কাছেই থাকুক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন