লড়াই শেষ মারধরে জখমের

বছর পঁয়ত্রিশের শিক্ষিত যুবক থাকতেন তমলুক শহরে। সাইকেলে লাগোয়া একটি গ্রামে যেতেই বিপদের মুখে পড়তে হয়েছিল। ছেলেধরা সন্দেহে ধরে ক্লাবঘরে আটকে বেঁধে শুরু হয়েছিল মারধর।শুক্রবার রাতে মারাই গেলেন গণপিটুনিতে জখম সঞ্জয় চন্দ্র।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৮ ০১:১৪
Share:

নিহত সঞ্জয়ের মা। নিজস্ব চিত্র

বছর পঁয়ত্রিশের শিক্ষিত যুবক থাকতেন তমলুক শহরে। সাইকেলে লাগোয়া একটি গ্রামে যেতেই বিপদের মুখে পড়তে হয়েছিল। ছেলেধরা সন্দেহে ধরে ক্লাবঘরে আটকে বেঁধে শুরু হয়েছিল মারধর। পুলিশ উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেছিল। ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) গত সাতদিন চলেছে মরণপণ লড়াই। তবে শেষরক্ষা হল না। শুক্রবার রাতে মারাই গেলেন গণপিটুনিতে জখম সঞ্জয় চন্দ্র। ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। খুনের অভিযোগে শুরু হয়েছে মামলা।

Advertisement

তমলুক পুরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পদুমবসানের বাসিন্দা সঞ্জয় গত ১৬ জুন সকালে বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে মথুরি গ্রামের দিকে গিয়েছিলেন। স্থানীয়দের একাংশ তাঁকে ছেলেধরা ঠাওরে ঘিরে ধরে। ক্লাবঘরে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় বেধড়ক মার। নিরীহ এক যুবকের এই পরিণতিতে গোটা তমলুক স্তব্ধ। ছড়িয়েছে ক্ষোভও।

তমলুক শহরের চন্দ্রপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয়ের পরিবারের সবাই উচ্চ-শিক্ষিত। পাঁচভাইয়ের ছোট সঞ্জয় বাণিজ্যের স্নাতক (বিকম)। বড়দা অশোক রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ১২ বছর আগে বাবা মারা গিয়েছেন। বৃদ্ধা মা ও বড়দার সঙ্গে থাকতেন সঞ্জয়। আগে বিদ্যুৎ দফতরের অধীনে ঠিকাদার সংস্থার হয়ে মিটার রিডিংয়ের কাজ করতেন এই যুবক। বছর তিনেক আগে সেই কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরে তেমন কিছু করতেন না সঞ্জয়। তাঁর সেজদা তাপস চন্দ্র বলেন, ‘‘অন্য দিনের মতো ইদের সকালেও ৭ টা নাগাদ সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল ভাই। কোথায় যাচ্ছে বলে যায়নি। মোবাইলও নিয়ে যায়নি।’’

Advertisement

সেই রাতে ফেরেননি সঞ্জয়। পরদিন পরিজনেরা জানতে পারেন ছেলেধরা সন্দেহে সঞ্জয়কে মারধর করা হয়েছে। তাপসবাবুর অভিযোগ, ‘‘মারধরের সময় সঞ্জয় নিজের পরিচয় দিয়েছিল, স্থানীয়র কাউন্সিলরের নামও বলেছিল। কেউ শোনেনি।’’ এই ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি করেছেন সঞ্জয়ের পরিবারের লোকজন। চন্দ্র পরিবারের প্রতিবেশী মৃন্ময় পালও বলছিলেন, ‘‘নিরীহ সঞ্জয়কে স্রেফ সন্দেহের বশে মেরে ফেলা হল। পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ করতে হবে।’’

পুলিশ জানিয়েছে, মথুরি গ্রামের ঘটনায় ইতিমধ্যে স্থানীয় চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে সচেতনতামূলক প্রচারে জোর দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ-প্রশাসন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement