ঘাটাল মহকুমা হাসপাতাল

নজরদারি ক্যামেরা বসিয়েও ঠেকানো যায়নি দালাল রাজ

কম খরচে হাসপাতালের চিকিৎসককেই দেখানো যাবে, উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে অযথা দীর্ঘ লাইনেও দাঁড়াতে হবে না— সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে এমনই নানা প্রলোভনের ফাঁদ পাতে দালালরা।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৪
Share:

কম খরচে হাসপাতালের চিকিৎসককেই দেখানো যাবে, উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা পেতে অযথা দীর্ঘ লাইনেও দাঁড়াতে হবে না— সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীকে নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে এমনই নানা প্রলোভনের ফাঁদ পাতে দালালরা। আগুপিছু না ভেবে সেই ফাঁদে পা দিয়ে রোগীর পরিজনেদের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে আকছার। দালালরাজে রাশ টানতে সম্প্রতি ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। তারপরেও দালালদের তাণ্ডব না কমায় উদ্বিগ্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

শুধু অনুরোধ নয়, নার্সিংহোমে যাওয়ার জন্য রোগীর পরিজনেদের দালালরা নানাভাবে চাপ দেয় বলেও অভিযোগ। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঘুরে ‘সস্তায়’ ওষুধ কিনে দেওয়া বা রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেওয়ার অজুহাতে রোগীর আত্মীয়দের হাত থেকে হাসপাতালের টিকিট কেড়ে নেওয়ার অভিযোগও ওঠে। শুধু দালালরাজ নয়, রাত নামলে হাসপাতাল চত্বরের বাইরে অসামাজিক কাজকর্মের আসর বসে বলেও অভিযোগ। তাসের নামে চলে জুয়া খেলা। রাস্তায় সাইকেল রেখে হাসপাতালে ঢুকলে ফিরে এসে নাও মিলতে পারে সেই সাইকেল।

নিরাপত্তা আঁটোসাটো করতে হাসপাতালে চত্বরে ১২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে অপারেশন থিয়েটার, অফিস ঘর, রান্না ঘর, স্টোর রুম-সহ বহিবির্ভাগ কী ঘটছে তার উপর নজরদারি চালাতেই বসানো হয় ক্যামেরা। চিকিৎসক, নার্স সহ বিভিন্ন স্তরের কর্মীরা ঠিকভাবে কাজ করছেন কিনা, ক্যামেরার মাধ্যমে নজর রাখা হয় তাতেও। যদিও ক্যামেরা বসানোর পরও যে পরিস্থিতিতে বিশেষ বদল হয়নি, রোগীর পরিজনেদের অভিযোগের বহরেই তা স্পষ্ট।

Advertisement

সিসি ক্যামেরা, নিরাপত্তারক্ষী থাকা সত্ত্বেও কেন দালালদের ঠেকানো যাচ্ছে না? তাহলে কি সর্ষের মধ্যেই ভূত রয়েছে? চন্দ্রকোনার বসনছড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা এক স্কুল শিক্ষকের কথায়, “শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে মা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সে জন্য টানা তিন দিন হাসপাতাল চত্বরে ছিলাম। তখনই দালালদের উপদ্রব কী, তা টের পেয়েছি।’’ তাঁর অভিযোগ, চিকিৎসকেরা ওয়ার্ডে রোগী দেখতে এলে তাঁর সঙ্গে দিব্যি দালালরাও ঢুকে পড়ে। চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা বা রোগীকে অন্যত্র রেফার করার পরামর্শ দিলেই দালালরাই এগিয়ে আসে। আর তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হয় রোগীর পরিজনেরা।

ঘাটাল হাসপাতালের এক প্রবীণ চিকিৎসকও বলছেন, রোগীর পরিজনেদের আরও সচেতন হতে হবে। হাসপাতালে ভাল পরিষেবা মিলবে না বা নার্সিংহোমে গেলে হাসপাতালের থেকে ভাল পরিষেবা মিলবে— দালালরা এমন প্রলোভন দেখালেই রোগীর পরিজনেদের পাল্টা প্রশ্ন করতে হবে। তাহলেই দালালরা আর বাড়াবাড়ি করার সাহস দেখাবে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নার্সেরও বক্তব্য, “চোখের সামনেই সব ঘটে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয়নি। তাই কিছু বলা বন্ধ করে দিয়েছি। হাসপাতালের কর্মীদের একাংশও তো দালালচক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।”

সমস্যার কথা স্বীকার করছেন ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলছেন, “হাসপাতালের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহের কাজও চলছে। নির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গোপনে তদন্তও চলছে। এখনই আর কিছু বলব না।” সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে সাদা পোশাকের পুলিশও নজরদারি চালাচ্ছে বলে জানান সুপার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন