বিপদ: মশার লার্ভায় ভরেছে নিকাশি নালা। মেদিনীপুর মেডিক্যালে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড হাবের পিছনে। ছবি: কিংশুক আইচ
প্রাথমিক স্কুলের অদূরে কাঁচা নালা। সেখানে জমা জলে কিলবিল করছে মশার লার্ভা। আশপাশে আবর্জনার স্তূপ।
ছবিটা মেদিনীপুর শহরের পালাবাড়ির। নতুন করে এই এলাকার দুই মহিলা ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। একজন মেদিনীপুরের হাসপাতালে চিকিত্সাধীন, অন্যজন ওডিশার কটকের হাসপাতালে ভর্তি। ডেঙ্গিতে আক্রান্ত দুই মহিলার নাম বাসন্তী বটব্যাল এবং মমতা গিরি। বাসন্তীদেবীর শ্বাশুড়ি পুষ্পরানি বটব্যাল মানছেন, “এলাকায় মশার প্রচুর উপদ্রব।’’ আর মমতাদেবীর শ্বাশুড়ি আরতী গিরি ক্ষোভের সঙ্গে, ‘‘জ্বর ছাড়ছে না দেখে বৌমাকে প্রথমে মেদিনীপুর মেডিক্যালেই ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু কোনও চিকিত্সা হয়নি, সিনিয়র ডাক্তার আসেননি। বাধ্য হয়ে কটকের হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছি।’’
সমস্যা মানছেন পালবাড়ি এলাকার কাউন্সিলর সৌমেন খানও। তাঁর কথায়, “ওই এলাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে। সাফাইয়ের কাজে জোর দেওয়া হচ্ছে। মশা দমনের সব রকম চেষ্টা চলছে।’’ শুক্রবার এলাকায় সচেতনতা মিছিল হয়েছে। তাতে প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়ারাও ছিল। সৌমেনবাবু বলছিলেন, “মশার প্রকোপ কমাতে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি। সব দিক দেখেই সচেতনতামূলক কর্মসূচিতে আরও জোর দেওয়া হচ্ছে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৮।পরিসংখ্যান ব্লক ভিত্তিক (সূত্র: জেলা স্বাস্থ্য দফতর)
ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে। মশাবাহী এই রোগের প্রকোপ বাড়ছে জেলার সদর শহর মেদিনীপুরেও। প্রশাসন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ৪০৮। গত দু’দিনে নতুন করে আরও ৯ জন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মেদিনীপুর শহরে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২। বেসরকারি সূত্রের অবশ্য দাবি, ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেশি। সব হাসপাতাল এবং প্যাথলজি সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট সময়মতো জেলায় পৌঁছচ্ছে না। মেদিনীপুরের বটতলাচক, রাঙামাটি এলাকায় কয়েকজন জ্বরে ভুগছেন। কয়েকজনের ডেঙ্গির জীবাণুও মিলেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরাও মানছেন, “নতুন করে কয়েকজন ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে এতে উদ্বেগের কিছু নেই। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।’’ জেলার অন্য এক স্বাস্থ্যকর্তার সংযোজন, “আক্রান্ত হলেও নতুন করে কেউ ডেঙ্গিতে মারা যাননি।’’ জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তথা পতঙ্গবাহিত রোগের নোডাল অফিসার রবীন্দ্রনাথ প্রধানের কথায়, “কিছু এলাকায় জ্বর হচ্ছে। জ্বরে আক্রান্তদের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে পদক্ষেপ করা হবে।’’
সদর শহরে ডেঙ্গি ছড়ানোয় স্বাভাবিক ভাবেই অস্বস্তিতে পুরসভার। ডেঙ্গি মোকাবিলায় পুরসভার ভূমিকায় একাংশ শহরবাসী ক্ষুব্ধ। নিকাশি নালা, জঞ্জাল নিয়মিত সাফাই হচ্ছে না বলেই অভিযোগ। নিয়মিত ছড়ানো হচ্ছে না ব্লিচিং, মশা মারার তেল। পরিস্থিতি দেখে শুক্রবার মেদিনীপুরে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় সব কাউন্সিলরকে রাস্তায় নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জমা জলা এবং আবর্জনা সাফাইয়ের ব্যাপারে পুরসভাকে আরও তত্পর হওয়ার কথা জানানো হয়েছে। এ জেলা প্রশাসন মনে করছে, কাউন্সিলরেরা নিজেরা কাজে নামলে ডেঙ্গি প্রতিরোধ এবং মশার লার্ভা দমনের কাজ অনেকটা সহজ হতে পারে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্রবাবুর কথায়, “ডেঙ্গি মোকাবিলায় আমরা সকলের সহযোগিতা চাইছি।’’
নিয়মিত সাফাই হয় না, এ কথা অবশ্য মানতে চাইছেন না পুর-কর্তৃপক্ষ। মেদিনীপুরের উপ-পুরপ্রধান জিতেন্দ্রনাথ দাস বলেন, ‘‘জমা জল থেকে জঞ্জাল, সবই নিয়ম করে পরিষ্কার করা হয়। ডেঙ্গি মোকাবিলায় সব ওয়ার্ডেকে মশা মারার তেল আর ব্লিচিংও দেওয়া হয়েছে।’’
সে সবের ব্যবহার কবে হয়, কতটা নিয়মিত হয়— সে দিকেই তাকিয়ে শহরবাসী।