তৈরি হচ্ছে মাটির রাস্তা। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
ফের লালমাটির পথ ফিরছে চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দির চত্বরে! গাছগাছালি ঘেরা সেই বনপথ উজিয়ে পৌঁছনো যাবে ডুলুং নদীর ধারে। নদীর ধারে অনেকটা জায়গা জুড়ে তৈরি হচ্ছে বনভোজন ক্ষেত্র। তবে শর্ত একটাই, পরিবেশ বান্ধব পিকনিক করতে হবে সেখানে।
জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ে ঐতিহ্যপ্রাচীন কনকদুর্গার মন্দির লাগোয়া জঙ্গলের ভিতরে পাকাপাকি ভাবে বনভোজন বন্ধ করতে চলেছে স্থানীয় প্রশাসন। পরিবর্তে মন্দিরের কাছেই তবে জঙ্গলের বাইরে বনভোজনের বিকল্প জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে। ১ ডিসেম্বর থেকে পাকাপাকি ভাবে বিকল্প বনভোজনের জায়গাটি চালু করে দেওয়া হবে।
আগে চিল্কিগড়ের জঙ্গলের ভিতর দিয়ে মন্দিরে যাওয়ার রাস্তাটি ছিল লালমাটির। কিন্তু উন্নয়নের গেরোয় বছর দেড়েক আগে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের টাকায় সেই লালমাটির রাস্তাটিকে কংক্রিটের ঢালাই রাস্তা করে দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে সরব হন পরিবেশবিদরা। এ বার জঙ্গলের বাইরে বনভোজন ক্ষেত্রে যাওয়ার জন্য একশো দিনের প্রকল্পে পাঁচশো মিটার দীর্ঘ পৃথক একটি মাটির রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। নতুন রাস্তাটি দিয়ে অবশ্য মন্দিরে যাওয়া যাবে না। তবে সরাসরি ডুলুং নদী পর্যন্ত পৌঁছনো যাবে।
কনকদুর্গা মন্দির উন্নয়ন কমিটির সহ-সভাপতি তথা জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সমীর ধল জানান, এতদিন মন্দিরে যাওয়ার মূল রাস্তাটি ব্যবহার করে পিকনিক পার্টির লোকজন জঙ্গলের মধ্যে বনভোজন করতে যেতেন। আগামী ডিসেম্বর থেকে জঙ্গলের ভিতরে বনভোজন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। নতুন মাটির রাস্তাটি দিয়ে গিয়ে জঙ্গলের বাইরে নদীর ধারে বিকল্প জায়গায় বনভোজন করা যাবে। সমীরবাবু বলেন, “নতুন বনভোজন ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে সোলার পাম্পের মাধ্যমে পরিস্রুত জলের ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া শৌচাগার, বিশ্রামাগার, রান্নার শেড-সহ ধাপে ধাপে আরও কিছু পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হবে।”
দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কনকদুর্গা মন্দির লাগোয়া দুষ্প্রাপ্য গাছগাছড়ার জঙ্গলের ভিতরে বনভোজন হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি বাদ সেধেছে পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ। চিল্কিগড়ের জঙ্গল এলাকাটিকে ‘হেরিটেজ-সাইট’ ঘোষণা করার জন্য পর্ষদের তরফে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পর্ষদের মতে, দুষ্প্রাপ্য গাছগাছালির মাঝে আগুন জ্বেলে বনভোজনের ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। পর্ষদের প্রস্তাব মেনে তাই জঙ্গলের ভিতর বনভোজন নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে জামবনি পঞ্চায়েত সমিতির নিয়ন্ত্রণাধীন ‘কনকদুর্গা মন্দির উন্নয়ন কমিটি’।
সাধারণত, শীতের মরশুমে জঙ্গলের মধ্যে জগঝম্প সাউন্ড সিস্টেমে গান বাজিয়ে পিকনিক চলে। দূরদূরান্তের পর্যটকরাও আসেন পিকনিক করতে। বছর খানেক হল, বনভোজনের সময়ে থার্মোকলের থালা, বাটি ও গ্লাস এবং প্লাস্টিক ও পলিব্যাগের ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মন্দির উন্নয়ন কমিটি। বনভোজনের সময় শালপাতার থালা, বাটি এবং কাগজের কাপ, গ্লাস অথবা মাটির ভাঁড়, খুরি ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়। কিন্তু তারপরও পিকনিক-পার্টির ফেলে যাওয়া আবর্জনায় জঙ্গলের পরিবেশ নোংরা ও দূষিত হয়ে যাচ্ছিল বলে অভিযোগ। জঙ্গলের মধ্যে সাউন্ড বক্স বাজানোর ফলে কয়েকশো হনুমান-সহ বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছিল। এই বিষয়টি নিয়ে বারে বারেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশ কর্মীরা।
প্রশাসনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের পরিবেশ কর্মী মৃণ্ময় সিংহ। মৃণ্ময়বাবু বলেন, “দেরিতে হলেও প্রশাসনের বোধোদয় হয়েছে। চিল্কিগড়ের প্রাচীন জঙ্গলে সাড়ে তিনশোর বেশি দুষ্প্রাপ্য গাছপালা ও ভেষজ উদ্ভিদ রয়েছে। ওখানে এতদিন নিয়ম বহির্ভূত ভাবেই বনভোজন হয়ছে।”