বন্ধ: খড়্গপুরে রেলের প্রিন্টিং প্রেস। —নিজস্ব চিত্র।
কর্মীরা এলেন। হাজিরা দিয়েই ফিরলেন বাড়ি। আজ থেকে যে ঝাঁপ প়ড়ছে ছাপাখানায়।
গত কয়েকবছর ধরে কোনওরকমে চলার পর অবশেষে বন্ধই হয়ে গেল খড়্গপুরের নিউ সেটেলমেন্টে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের একমাত্র ছাপাখানা! শনিবার থেকে ছাপার কাজ বন্ধ ছিল। রবিবার ছিল অর্ধদিবস। তাই কর্মীরা উপস্থিতি দিয়েই বাড়ির পথ ধরলেন। বিষয়টি নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ছাপাখানার সিনিয়র ম্যানেজার এম ধনশেখর বলেন, “আমি এই বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে পারব না। আপনি জনসংযোগ বিভাগে কথা বলুন।” আর দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, “সোমবার বিষয়টি ভাল করে জেনে বলতে পারব।”
নিউ সেটেলমেন্টের ছাপাখানায় ৭১জন কর্মী ছিলেন। দক্ষিণ পূর্ব এবং ইস্ট কোস্ট — রেলের এই দুই জোনের ছাপার কাজ হত সেখানে। ইতিমধ্যেই তাঁদের সেফটি বিভাগে স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন কর্মীরা। এতদিন ছাপাখানায় কাজ করার পরে কীভাবে রেলের সেফটি বিভাগে কাজ করবেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। ছাপাখানার সিনিয়র টেকনিশিয়ান তথা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের স্টোরস শাখার সভাপতি শুভ্র চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের সেফটি বিভাগে পাঠালে আরও বিপদে পড়তে হবে। তাই চাইছি আমাদের স্টোর বিভাগে ১৩১টি যে শূন্যপদ রয়েছে সেখানে স্থানান্তর করা হোক।” দক্ষিণ-পূর্ব রেলে আর কোনও ছাপাখানা না থাকাতেই কর্মীদের স্থানান্তর নিয়ে সমস্যা বেড়েছে।
রেল সূত্রে খবর, ১৯৬৭ সাল থেকে খড়্গপুরের ওই নিউসেটলমেন্ট এলাকাতে চলছে এই ছাপাখানা। এত দিন বিভিন্ন ধরনের ফর্ম, টিকিট পরীক্ষকদের রসিদ বই, গার্ড-ড্রাইভারদের মেমো-সহ প্রায় তিনশো রকমের সামগ্রী ছাপা হত এখানে। তার মধ্যে ছিল কর্মীদের দেওয়া রেলের পাস-সহ একশো ধরনের গোপন জিনিস। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩৭৫ জন কর্মী ছিলেন ছাপাখানায়। কিন্তু ক্রমেই কর্মী সঙ্কটে ধুঁকতে শুরু করে এই ছাপাখানা। অবশেষে ছাপাখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। কর্মীদের অভিযোগ, কী কারণে এই ছাপাখানা বন্ধ হয়েছে রেলের তরফে তার ব্যাখ্যা মেলেনি।
রেলের কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, রেলে ক্রমেই বিভিন্ন কাজকর্মে ফর্ম ও কাগজের বদলে অনলাইন ব্যবস্থা চালু হচ্ছে। ফলে ছাপাখানার প্রয়োজনীয়তা কমছে। তার উপরে নিজস্ব কর্মী কমিয়ে বিভিন্ন দফতরে অস্থায়ী ঠিকাকর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে। একই কারণে ছাপাখানায় পড়েছে প্রকোপ। শুভ্রবাবুর মন্তব্য, ‘‘যেভাবে বেসরকারিকরণ ও অনলাইন ব্যবস্থার পথে রেল হাঁটছে তার কোপেই ছাপাখানা বন্ধ হয়ে গেল। ’’
ধীরে ধীরে সহকর্মীর সংখ্যা কমছিল। বাড়ছিল কাজের চাপ। দু’টি জোনের কাজ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন কর্মীরা। এখন সবই অতীত।