মেদিনীপুরে চলছে তাঁত মেলা। রবিবারও ভিড় নেই। নিজস্ব চিত্র ।
সামনের রবিবার পঞ্চমী। কিন্তু তার এক সপ্তাহ আগের রবিবারেও জমল না দুর্গাপুজোর বাজার। পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম দুই জেলাতেই ছবিটা কার্যত একই থাকল এদিন।
গতবারের পর এবারও বিক্রির হাল দেখে হতাশ পোশাক ব্যবসায়ীদের অনেকেই। তাঁদের মতে, বাজারে ভিড় না জমার কারণ মূলত দু’টি। এক, করোনা পরিস্থিতিতে কেউ কাজ হারিয়েছেন, কেউ পেশা বদল করেছেন। তাই বহু মানুষের হাতে নগদ টাকা নেই। দুই, টানা বৃষ্টি। জেলার একাংশের মানুষ এখনও জলবন্দি। অনেকে আবার অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায় বলছিলেন, ‘‘এই সময়ে দোকানে দোকানে খদ্দেরের ভিড় লেগে যাওয়ার কথা। আর এখন খদ্দেরের অপেক্ষায় তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে দোকানিদের! বড় দোকানগুলিতে তাও কিছুটা বিক্রি হচ্ছে। ছোট- মাঝারি দোকানগুলির পরিস্থিতি খুব খারাপ।’’ মেদিনীপুর শহরের এক পোশাক দোকানের মালিক অমিত লৌহ বলছিলেন, ‘‘এই সময়ে দিনে যে পরিমাণ টাকার সামগ্রী হেসেখেলে বিক্রি হওয়ার কথা, তার সিকিভাগও তো হচ্ছে না।’’ দোকানিদের মতে, লোকাল ট্রেন চালু হলে কিছুটা অন্তত ভাল হত তাঁদের।
রেলশহর খড়্গপুরের প্রাণকেন্দ্র গোলবাজার কার্যত ফাঁকা ফাঁকাই থাকছে। কেনাকাটা চলছে শপিং মলে। শহরের নিউ সেটলমেন্ট এলাকার একটি শপিং মলের সম্পাদক তথা এক পোশাক বিপণির মালিক প্রদীপ ঘোড়ই বলেন, ‘‘গত বছরের থেকে এ বার শুরুতে ব্যবসা কিছুটা চাঙ্গা হয়েছিল। কিন্তু মাঝে কয়েকদিনের প্রবল বৃষ্টিতে বাজার ফের মার খেয়েছে। অন্য বার পুজোর ১০-১২ দিন আগে যা বিক্রি হয়, এ বার তার ৭০ শতাংশ বিক্রি হয়েছে।’’ সবংয়ের তেমাথানির রেডিমেড পোশাকের ব্যবসায়ী অশোক চাণ্ড্যক বলেন, ‘‘আমার দোকান যেখানে সেখানে জল জমেনি। কিন্তু গ্রাম থেকে তো মানুষ আসলে তবে বিক্রি হবে। সেখানে তো বন্যা। মানুষ আসতে পারছে না। গত বছরের থেকেও এ বার আরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়লাম।’’
গড়বেতাতেও পুজোর বাজার জমেনি। রাধানগরের একটি পোশাকের দোকানের মালিক গৌতম রায় বলেন, ‘‘পুজোর বিক্রিবাটা এ বার কমই হচ্ছে। যাঁরা কেনাকাটা করতে আসছেন, তাঁদের বাজেটও কম।’’ চন্দ্রকোনা রোডের এক পোশাক দোকানি বলছিলেন, ‘‘টানা বৃষ্টি। ফলে আলুরও দাম নেই এবার। এই সব এলাকার অর্থনীতি আলুর উপর নির্ভরশীল। তাই পুজোর বিক্রিও সেভাবে নেই।’’ ঘাটাল শহরের বেশিরভাগ অংশ এখনও জলের তলায়। মলয় পাল নামে সেখানকার এক পোশাক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘চারিদিকে জল। খদ্দের আসবে কী ভাবে! পুজো বাজারের ব্যস্ততা তো বৃষ্টিই কেড়ে নিয়েছে।’’
ঝাড়গ্রাম শহরের পণ্যবীথি মোড়ে পুরুষদের রেডিমেড পোশাকের দোকানের মালিক শঙ্কর মান্নাও জানালেন, গতবার করোনা পরিস্থিতির জন্য পুজোর বাজার যতটা খারাপ ছিল, এবারও ততটাই। রবিবার ঝাড়গ্রামের জুবিলি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ কাপড়ের দোকান কার্যত ফাঁকা। সেখানকার পোশাক ব্যবসায়ী সুবীর কুণ্ডুর দাবি, ‘‘গতবারের চেয়েও পরিস্থিতি এ বার খারাপ।’’ ঝাড়গ্রাম শহরের মেন রোডে পুরুষদের রেডিমেড পোশাকের দোকানের মালিক গৌতম সিংহও বললেন, ‘‘২০১৯ সাল পর্যন্ত পুজোর সময়ে যা ব্যবসা হত, গত বছর তার ৫০ শতাংশ ব্যবসা কমে গিয়েছে। এবার পরিস্থিতি যা তাতে ব্যবসা আরও কমবে বলে মনে হচ্ছে।’’
(তথ্য: বরুণ দে, দেবমাল্য বাগচী, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য, অভিজিৎ চক্রবর্তী ও কিংশুক গুপ্ত)