রাতের শহরে অমিল অ্যাম্বুল্যান্স

রাতে বাড়ির কেউ অসুস্থ হলেই বিপদ! অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে হিমসিম অবস্থা। জরুরি পরিষেবার ১০২ নম্বরে ফোন করলেও উত্তর মেলে না বলে অভিযোগ। রাত বাড়তেই বন্ধ হতে থাকে একের পর এক ওষুধের দোকানের ঝাঁপ। মেলে না চিকিৎসকও। রাতে মেদিনীপুর শহরে চিকিৎসা পরিষেবার হাল ঠিক কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ প্রথম কিস্তি।‘আপনার ডায়াল করা নম্বরটি আপাতত বিকল রয়েছে’! রাতে বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি, সেই সময় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার ‘১০২’ নম্বরে ডায়াল করলে অধিকাংশ সময়ে এমন উত্তরই মেলে বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share:

‘আপনার ডায়াল করা নম্বরটি আপাতত বিকল রয়েছে’!

Advertisement

রাতে বাড়ির কেউ অসুস্থ হলে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি, সেই সময় অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবার ‘১০২’ নম্বরে ডায়াল করলে অধিকাংশ সময়ে এমন উত্তরই মেলে বলে অভিযোগ। রাতের মেদিনীপুর শহরে এটাই দস্তুর!

দিন কয়েক আগেই মাঝ রাতে মেদিনীপুরের কোতবাজারের বাসিন্দা বরুণ বিশ্বাসের বুকে প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হয়। পরিজনেরা পড়শি তরুণ ঘোষকে ডাকেন। তরুণবাবুর ওষুধের দোকান থাকায় অনেক চিকিৎসকের সঙ্গে পরিচয় রয়েছে। রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার অ্যাম্বুল্যন্স জোগাড় করতে হিমসিম খান তরুণবাবু। তাঁর কথায়, “রাতে দরকার হলেই হঠাৎ অ্যাম্বুল্যান্স পাব সেই সুযোগ নেই। বরুণবাবুকে দেখার জন্য একজন গ্রামীণ চিকিৎসককে যখন নিয়ে এলাম ততক্ষণে উনি মারা গিয়েছেন!”

Advertisement

সম্প্রতি একই অভিজ্ঞতা হয় সৈয়দ ফারুকের। তাঁদের বাড়ি এসে মাঝরাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন শাশুড়ি। কোথাও অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। অগত্যা এক অটোচালককে বাড়ি থেকে তুলে অসুস্থ শাশুড়িকে হাসপাতালে নিয়ে যান সৈয়দ ফারুক।

অথচ অ্যাম্বুল্যান্স যে নেই, তা নয়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিশ্চয় যান প্রকল্পে ২০টি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ক্লাব, সংস্থা, নার্সিংহোম, পুরসভা থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যাও প্রায় ৪৫টি। এই সব অ্যাম্বুল্যান্সের উপর সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। ফলে রাত হলেই শহর থেকে উধাও হয়ে যায় অনেক অ্যাম্বুল্যান্স।

অনেক খোঁজাখুঁজি করে যদি বা অ্যাম্বুল্যান্স মেলে, চালক দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করে। বিপদের সময় বাধ্য হয়ে সেই ভাড়াই দিতে হয়। তবে যাঁদের এত টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই, তাঁরা পড়েন সঙ্কটে। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘মেদিনীপুর থেকে কলকাতা যেতে যে অ্যাম্বুল্যান্সের ভাড়া ২৭০০ (সাধারণ) থেকে ৩৫০০ (বাতানুকুল) টাকা। রাতে সেই অ্যাম্বুল্যান্সই ৫ হাজার টাকার কমে কলকাতা যেতে রাজি হয় না।’’ তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দেওয়ার জন্যই আম্বুল্যান্সে কর ছাড় দেয় সরকার। তাহলে কেন সাধারণ মানুষ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হবে।’’

রাতে অ্যাম্বুল্যান্স না মেলার কারণ কী? অ্যাম্বুল্যান্স মালিক অনুপম নায়েকের দায়সারা জবাব, “চালক যদি মাদকাসক্ত হয়ে ফোন বন্ধ রাখে আমাদের কী করার আছে। গাড়ি চললে তো আমাদেরই লাভ। কিন্তু চালক না পেলে কী করব?” অ্যাম্বুল্যান্স চালক শেখ মাকসুদ ও আইএনটিটিইউসি সমর্থিত চালক সংগঠনের নেতা রামু সাউও স্বীকার করেছেন, “কয়েকজন নেশাগ্রস্ত চালকের জন্যই মানুষকে হয়রানির শিকার হতে হয়।” মাকসুদের কথায়, “মেডিক্যাল কলেজ থেকে মা ও সদ্যোজাতকে বাড়ি ছেড়ে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু অনেক সময় গ্রামের দায়িত্বে থাকা অ্যাম্বুল্যান্স চালককে ফোনে পাওয়া যায় না। তাই অনেক সময় মাঝ রাতে গ্রাম থেকে প্রসূতিকেও আনতে হয়েছে।”

১০২ নম্বর চালুর পাশাপাশি একসময় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, অ্যাম্বুল্যান্সগুলিতে জিপিএস বসানো হবে। গাড়িতে জিপিএস থাকলে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স কোথায় রয়েছে সেটা সহজেই বোঝা যাবে। যদিও জিপিএস ব্যবস্থা এখনও চালু করা যায়নি।

একশ্রেণির অ্যাম্বুল্যান্স চালকের সঙ্গে কয়েকটি নার্সিংহোমেরও যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু রোগী মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁদের অনেকেরই কলকাতার হাসপাতাল সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই। মেদিনীপুর থেকে কলকাতা যাওয়ার সময় অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা ক্রমাগত বোঝাতে থাকেন সরকারি হাসপাতালের পরিবর্তে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা ভাল। কম খরচেও ভাল চিকিৎসা মিলবে। এই প্রলোভনে পা দিয়ে অনেকে তাতেই রাজি হয়ে যান। অনুপমবাবুর অভিযোগ, “এ ভাবে বেসরকারি হাসপাতালে মাসে দু’তিনটি রোগী ভর্তি করতে পারলেই মোটা টাকা কমিশন। দিনে কাজ করে রোজগার, সঙ্গে উপরি পাওনা। কিছু বললেই কাজ ছেড়ে দিচ্ছে। আমরাও সঙ্কটে রয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন