নজরে মেদিনীপুর

শিকেয় আইন, চিরকুটে ওষুধের নাম

দুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তিকে ভর্তি নিয়ে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের নার্স পরিজনদের হাতে ধরিয়ে দিলেন একাধিক ওষুধের নাম লেখা একটি চিরকুট। সব ক’টি কিনে আনতে হবে বাইরের দোকান থেকে, হাসপাতালে নেই।

Advertisement

অভিজিৎ চক্রবর্তী

ঘাটাল শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০০:৫২
Share:

ওষুধের ব্র্যান্ড নাম লেখা চিরকুট। —নিজস্ব চিত্র

চিত্র ১: দুর্ঘটনায় জখম এক ব্যক্তিকে ভর্তি নিয়ে ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালের নার্স পরিজনদের হাতে ধরিয়ে দিলেন একাধিক ওষুধের নাম লেখা একটি চিরকুট। সব ক’টি কিনে আনতে হবে বাইরের দোকান থেকে, হাসপাতালে নেই। চিরকুটে লেখা নির্দিষ্ট সংস্থার ওষুধের নাম, জেনেরিক নাম নয়। চিরকুটে নেই তাঁর স্বাক্ষরও।

Advertisement

চিত্র ২: মেডিক্যাল কলেজের আইসিসিইউ-তে ভর্তি হৃদরোগে আক্রান্ত এক মহিলা। তাঁর মেয়ের হাতে নার্স গুঁজে দিলেন চিরকুট—ইঞ্জেকশন। চিকিৎসক জানান, প্রতিদিন দু’টি করে ইঞ্জেকশন পড়বে। প্রতিটির দাম ২২০০ টাকা। মেয়ের মুখে অন্ধকার। তা দেখে একটি ফোন নম্বর দেন চিকিৎসক, ‘‘এই ছেলেটি ৫০% কমে দেবে ওষুধটি।’’ মেয়েটি জি়জ্ঞাসা করলেও নাম বললেন না চিকিৎসক। শুধু জানান, হাসপাতালের নাম বললেই হবে। ‘কৃতজ্ঞ’ ওই পরিবার ৭ দিনে ১৪টি ইঞ্জেকশন কিনেছিল চিকিৎসকের বলে দেওয়া মেডিক্যাল রিপ্রেসন্টেটিভের কাছ থেকে।

অভিযোগ মেনে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘জেনেরিক নামে ওষুধ লিখতে চিকিৎসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে হাসপাতালকেও। কিন্তু ওই প্রবণতা এখনও বন্ধ করা যায়নি।”

Advertisement

সরকারি নিয়মে জেনেরিক নামেই চিকিৎসকদের ওষুধ লিখতে হবে— এটাই আইন। হাসপাতালে ওষুধ না-থাকলেও ন্যায্যমূল্যের ওষুধ দোকান থেকে তা পাওয়া যেতে পারে ৫০-৬৫% ছাড়ে। বছর তিনেক আগে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই নিয়ম চালু হয়েছে। তবে সে সবের তোয়াক্কা করেন না চিকিৎসকেরা।

ঘাটাল হাসপাতালের সুপার কুণাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বহুবার লিখিতভাবে চিকিৎসকদের জানিয়েছি। বৈঠকও করা হয়েছে। কিন্তু এই অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব হয়নি।” একই কথা বলেছেন খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ও। জেলার একাধিক গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার আবার বলেছেন, তাঁরা হতাশ। চিকিৎসকদের বলে লাভ হয়নি, তাই বিষয়টি মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিককে জানানো হয়েছে। ‘‘জেনেরিক নাম লিখতে বাধ্য করেছিল সরকার। কিন্তু সে পথ এড়িয়ে চিকিৎসকরা সাদা কাগজে নাম লিখছেন ওষুধের। লাভ বাড়ছে নির্দিষ্ট কিছু সংস্থার। আর সেখান থেকে ‘উপহার’ পাচ্ছেন চিকিৎসকেরা’’— বললেন স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা। তাঁর দাবি, সরকারি হাসপাতালে যত বেশি রোগী আসেন, তত রোগী তো বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যান না। ফলে বেশি লাভের জন্য ওই কোম্পানিগুলি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গেই চুক্তি করে। সবই অবশ্য অলিখিত চুক্তি। এখন প্রশ্ন, কী ভাবে বন্ধ হবে এই অনিয়ম।

গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, “চিকিৎসকদের সচেতন করে বোঝানো সম্ভব নয়। তাই সরকারি নিয়ম না মানলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা চালু করার বিষয়ে উদ্যোগী হচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন