নোটের গুঁতো

ভাঙানি নেই, ধারেই চলছে বাজার

নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল বাজার! অগত্যা ধারই ভরসা। রবিবার সকালে রাজাবাজারে এসেছিলেন মেদিনীপুরের গৃহবধূ সোমা পানিগ্রাহী। ৭০ টাকার মাছ কিনে দোকানিকে ধরালেন ১০০ টাকার নোট।

Advertisement

বরুণ দে ও দেবমাল্য বাগচী

মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৬ ০১:০৭
Share:

খদ্দের নেই মেদিনীপুরের কালেক্টরেট মোড় বাজারে।

নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল বাজার! অগত্যা ধারই ভরসা।

Advertisement

রবিবার সকালে রাজাবাজারে এসেছিলেন মেদিনীপুরের গৃহবধূ সোমা পানিগ্রাহী। ৭০ টাকার মাছ কিনে দোকানিকে ধরালেন ১০০ টাকার নোট। দোকানি সবিনয়ে টাকা ফেরত দিয়ে বললেন, ‘‘বৌদি খুচরো নেই। মাছের দাম খাতায় তুলে রাখছি। পরে দিয়ে দেবেন।’’ মাথা নাড়লেন সোমাদেবী।

তাহলে কি ধারেই সব কেনাকাটা চলছে? মৃদু হেসে এই গৃহবধূর জবাব, ‘‘ঠিকই ধরেছেন। মাছ থেকে মুদি দোকান, সর্বত্র ভাঙানির সমস্যা। বিক্রেতারা প্রায় সবই চেনা-পরিচিত। তাই খাতায় লিখে জিনিস দিয়ে দিচ্ছেন।’’ শহরের মাছ ব্যবসায়ী স্বপন কারকও বললেন, ‘‘খুচরোর বড়ই আকাল। চেনা খদ্দেরদের তো ফেরাতে পারি না। তাই দাম খাতায় তুলে জিনিস দিচ্ছি।’’ একই সুর সব্জি ব্যবসায়ী অজয় সাউয়ের গলায়।

Advertisement

কোতোয়ালি বাজার, রাজাবাজার, গেটবাজার, স্কুলবাজার, মির্জাবাজার— মেদিনীপুরের কোনও বাজারেই চলছে না পুরনো ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট। তবে খড়্গপুরের মাছবাজারে কিছু দোকানে চলেছে পাঁচশো টাকার পুরনো নোট। উল্টো দিকে নতুন ২ হাজারের নোট নিয়ে ভোগান্তির ছবি দেখা গিয়েছে এ দিন। খড়্গপুর গোলবাজারে মাছ দোকানি সুমিত্রা বর্মনের থেকে ১২০ টাকার মাছ কিনে ভবানীপুরের ব্যবসায়ী হরিপদ পোদ্দার ২ হাজারের নোট দিয়েছিলেন। তা দেখেই চটে গেলেন সুমিত্রা। ঝাঁঝিয়ে উঠে বললেন, “কোত্থেকে ১৮৮০ টাকা ফেরত দেব? আমি কি ১০০ টাকার নোটের গাছ পুঁতেছি!” শেষে মাছ না নিয়েই ফিরতে হল হরিপদবাবুকে। তাঁর কথায়, “রবিবার জমজমাট বাজার। কিন্তু ২ হাজারের নোট নিয়ে সারা বাজার ঘুরছি। কেউ নিচ্ছে না। এ বার খাব কী?” দু’হাজার টাকার নোট নিজে নাজেহাল মেদিনীপুরের মানুষও। গৃহবধূ অন্তরা ঘোষের কথায়, ‘‘দোকানে গিয়ে অনেক জিনিস কিনে দু’হাজার টাকার নোট ভাঙানোর চেষ্টা করেছিলাম, হয়নি। ব্যবসায়ীদের কাছেও তো খুচরো নেই।’’

খড়্গপুর গোলবাজারে কিছু মাছের দোকানে চলল পুরনো পাঁচশোর নোট।

নোট বাতিলের জেরে বাজারে ভিড়ও কমেছে। কমেছে জিনিসপত্র কেনা। বেলা গড়ানোর আগেই বাজার প্রায় ফাঁকা। মেচেদা থেকে খড়্গপুরে আসা মাছ দোকানি মায়ারানি বর্মন বলছিলেন, “অন্য রবিবার সকাল ১১টার মধ্যে ৭০ ভাগ মাছ বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু আজ প্রায় সব মাছই পড়ে রয়েছে।”সব্জি ব্যবসায়ী রাজু রক্ষিত বলেন, “মাছের কিছু আড়তদার পাঁচশো টাকার পুরনো নোট নিচ্ছেন। কিন্তু আমাদের পাইকারি ব্যবসায়ীরা অচল নোট নিচ্ছেন না। তাই আমরাও নিতে পারছি না। রবিবারের বাজারেও লোকসান হচ্ছে।’’ মেদিনীপুর ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক মলয় রায়ের কথায়, “খদ্দেরদের হাতে পয়সা কই! ঠিক যতটুকু প্রয়োজন, লোকে ততটুকুই কিনছে।’’ ব্যবয়াসীরা তাই বেশি জিনিস তুলছেনও না। মেদিনীপুরের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সব্জি-মাছ তো দিনের পর দিন মজুত করে রাখা যাবে না। তার উপর খদ্দের নামমাত্র। বেশি জিনিস আনলে তো আমাদেরই ক্ষতি।’’ খড়্গপুরের কিছু ব্যবসায়ী আবার বাড়তি জিনিস নেওয়ার শর্তে পুরনো পাঁচশো টাকা নিয়েছেন।

সব মিলিয়ে দুই শহরের মানুষই এখন আতান্তরে। মেদিনীপুরের গৃহবধূ রুমা মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘বাড়িতে যে টাকা রয়েছে তাতে দিন কয়েক হয়তো চলবে। তারপর তো সংসার চালানোই দায় হবে। আর ব্যাঙ্ক ও এটিএমের সামনে যা লাইন, তাতে একবার দাঁড়ালে দিন কাবার!’’

ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও রামপ্রসাদ সাউ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন