ফাঁকা মাথায় ঝুঁকির স্কুল-যাত্রা

হেলমেট পরার পুলিশি কড়াকড়ি এখন অনেক শিথিল। নিজেরা হেলমেট পড়লেও সন্তানের কথা অনেক ক্ষেত্রেই ভুলে যান মা, বাবা। একাদশ, দ্বাদশের পড়ুয়ারা নিজেরাও ব্যবহার করে স্কুটি, মোটর বাইক। পরে না হেলমেট। মেদিনীপুর, খড়্গপুরে কতটা সুরক্ষিত স্কুল-যাত্রা। সচেতনতাই বা কতটা, খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ মেদিনীপুর। ‘নো হেলমেট, নো ক্লাস’। পড়ুয়াদের জন্য এমন নিদান দিয়েছে কলকাতার কয়েকটি স্কুল। মেদিনীপুরে অবশ্য এমন নজির নেই! স্কুটি, মোটর বাইকে করে শহরের স্কুলগুলোয় যে সব পড়ুয়া আসে, তাদের বেশির ভাগের মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই।

Advertisement

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৩২
Share:

মেদিনীপুর শহরের বিভিন্ন স্কুলের প়ড়ুয়ারা এ ভাবেই স্কুলে যায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

‘নো হেলমেট, নো ক্লাস’।

Advertisement

পড়ুয়াদের জন্য এমন নিদান দিয়েছে কলকাতার কয়েকটি স্কুল। মেদিনীপুরে অবশ্য এমন নজির নেই! স্কুটি, মোটর বাইকে করে শহরের স্কুলগুলোয় যে সব পড়ুয়া আসে, তাদের বেশির ভাগের মাথাতেই হেলমেটের বালাই নেই।

অথচ ছেলেমেয়েকে স্কুলে পৌঁছে দিতে শহরবাসী অনেকেই বেছে নেন নিজেদের মোটর বাইক। এমনকী মহিলারাও স্কুটিতে চাপিয়েই স্কুলে দেওয়া নেওয়া করেন সন্তানকে। দুর্ঘটনার সম্ভাবনা সত্ত্বেও শিশুকে হেলমেট পরানো কথা ভাবেনই না বেশিরভাগ সময়। অনেক বাবা, মা-ই নিজেরা হেলমেট পরলেও সন্তানকে পরান না।

Advertisement

শহরের স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, সচেতনতা প্রয়োজন অভিভাবকদের মধ্যে। সেই সচেতনতা প্রসারে স্কুলগুলি যে একেবারেই উদাসীন তা কিন্তু নয়। মেদিনীপুরের রয়্যাল অ্যাকাডেমি স্কুল কর্তৃপক্ষ মাস কয়েক আগেই অভিভাবকদের এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ করলেন, তখনই স্কুলের নোটিস বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিল, ছেলেমেয়েদের হেলমেট পরিয়েই স্কুলে নিয়ে আসতে হবে।

অভিভাবকের জবানি

“মাথায় হেলমেট থাকা যে ভাল, সেটা জানি। কিন্তু তাড়াহুড়োর সময় ভুলে যাই!’’ ইন্দ্রজিৎ পাণিগ্রাহী

রয়্যাল অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ সত্যব্রত দোলুই বলেন, “অনেকে ছেলেমেয়েকে হেলমেট পরিয়ে নিয়ে আসেন। তবে এটা ঠিক অভিভাবকরা সকলে সমান সচেতন নন। তাই এখনও একাংশ পড়ুয়ার মাথায় হেলমেট থাকে না।” তবে তিনি মনে করেন, এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করতেই পারে স্কুল। কিন্তু হেলমেট না-থাকায় যদি ছাত্রদের ক্লাসে ঢুকতে না দেওয়া হয়, তবে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগ হবে ছোটদেরই। ফলে সন্তানের সুরক্ষার বিষয়ে বাবা, মায়ের আরও বেশি সচেতন হওয়া জরুরি। প্রায় একই কথা বলেছেন মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুলের (বালক) শিক্ষক দীপঙ্কর ষন্নিগ্রাহী। তিনি বলছিলেন, “বেশির ভাগ অভিভাবকই ছেলেমেয়েদের হেলমেট পরান না। রাজ্য সরকারের নির্দেশ সত্ত্বেও একাংশের অভিভাবকের কোনও সচেতনতা নেই।”

রয়্যাল অ্যাকাডেমির ক্যাম্পাসে অবশ্য ফ্লেক্সও ঝুলিয়ে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। সেখানে পুলিশের তৈরি করা স্লোগান— ‘বাবার মাথা ভীষণ দামী হেলমেটেতে ঢাকা/ ছোট্ট মাথার নেই কোনও দাম, আমার মাথা ফাঁকা’।

মেদিনীপুরের অলিগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি সুব্রত সরকারও বলেন, “অভিভাবকেরা সচেতন না-হলে এ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ করেও বিশেষ কিছু হবে না।’’ তবে তাঁরা এ বিষয়ে পড়ুয়াদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়ার কথা ভাবছেন বলে জানিয়েছেন।

গত জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পর হেলমেট ব্যবহার নিয়ে মানুষকে সচেতন করতে এক সময় পথে নেমেছিল পুলিশ। ধরপাকড়ও শুরু হয়েছিল। কিন্তু মাস দুই কাটতে না-কাটতে সে ছবি বদলে গিয়েছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুলিশি অভিযানে ঢিলেমি এসেছে। ফলে আবার সেই উদাসীনতা। হেলমেট ছাড়াই দৌড়ে যাচ্ছে মোটর বাইক।

‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’, ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’ কর্মসূচির আওতায় পেট্রোল পাম্পগুলোকে কড়া নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন— হেলমেট না থাকলে পেট্রোল দেওয়া যাবে না। তবে এখন তা অনেকটাই শিথিল।

পুলিশি অভিযান শুরুর পর এক ধাক্কায় হেলমেট বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল অনেকখানি। অগস্টে প্রায় ৭০ শতাংশ বাইক আরোহী হেলমেট ব্যবহার করতেন। এখন তা নেমে এসেছে ৫০ শতাংশে। হেলমেট না থাকলে সাধারণ পথ দুর্ঘটনাও বড় ক্ষতি করতে পারে। অবশ্য এ নিয়ে মেদিনীপুরের সর্বত্র সমান সচেতনতা নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement