কথা রেখেছে নারায়ণগড়। কথা রাখলেন দিদিও। প্রাপ্তির তালিকায় হাসপাতাল আছে। আছে কলেজও। তবে হতাশ বেলদার ‘চিৎপুর’।
একসময় যাত্রাশিল্পের রমরমা ছিল বেলদায়। সারাবছরই যাত্রাপালার বুকিং করতে ভিড় জমত যাত্রাপাড়ায়। কিন্তু এখন আর আগের মতো বায়না আসে না। অর্থ সঙ্কটে ধুঁকছে যাত্রাশিল্প। সোমবার নারায়ণগড়ের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী শিল্পের হাল ফেরাতে আশার আলো দেখাবেন, এমনটাই মনে করেছিলেন যাত্রাশিল্পীরা। কিন্তু তিনি কিছু না বলায় হতাশ যাত্রাপাড়া।
একসময় সারা রাজ্যে বেলদার যাত্রার সুনাম ছিল। পঞ্চাশের দশকে স্থানীয় এক চাল ব্যবসায়ী জিতেন্দ্রনাথ দাস শিল্পীচক্র অপেরা নামে একটি যাত্রাদল গঠন করেন। দিন কয়েকের মধ্যেই যাত্রার জগতে সুনাম হয় এই দলের। পরে একে একে অন্য দলও গড়ে ওঠে। বছর পনেরো আগেও বেলদায় প্রায় ১৮টি যাত্রাদল ছিল। এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭টিতে। বায়নার সংখ্যাতেও ভাটার টান। আগে মাসে গড়ে ২৫টি বায়না আসতই। এখন ১০-১২টি যাত্রাপালার বায়না পেতেই কালঘাম ছোটে।
যাত্রাশিল্পীদের দাবি, আগের থেকে পারিশ্রমিক কমে যাওয়ায় অনেকেই আর যাত্রা নিয়ে মাথা ঘামান না। আয় কমে যাওয়ায় অনেকে যাত্রায় অভিনয় করা ছেড়েও দিচ্ছেন। স্থানীয় বাসিন্দা বেলদা গঙ্গাধর আকাদেমীর প্রধান শিক্ষক ননীগোপাল শীট ছোট থেকেই যাত্রার ভক্ত। তিনি বলেন, ‘‘একসময়ে চুটিয়ে যাত্রা দেখতাম। এখন যাত্রাশিল্পের জীর্ণ দশা দেখে খারাপ লাগে।’’ তিনি আরও বলছেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানে যাত্রা পরিবেশিত হলে সাধারণ মানুষের ঝোঁক বাড়বে। আশা করছি, মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে নজর দেবেন।’’
স্থানীয় একটি যাত্রা দলের কর্ণধার তথা প্রবীণ অভিনেতা ভানু সেনাপতি বলেন, ‘‘বায়নার সংখ্যা কম। বিভিন্ন যাত্রা দলের সঙ্গে যোগাযোগ করে বায়না ধরছি। যাত্রাশিল্প বাঁচাতে সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। আশা করেছিলাম, মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণগড়ে এসে এই শিল্প নিয়ে কিছু বলবেন। কিন্তু উনি কিছু না বলায় একটু তো খারাপ লাগছেই।’’
যাত্রাশিল্পীদের একাংশের দাবি, বেলদায় কোনও অডিটোরিয়াম না থাকায় যাত্রা প্রদর্শনে অসুবিধা হয়। বছর চোদ্দো আগে ২০০২ সালে পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে বেলদার সুসিন্দায় অডিটোরিয়াম তৈরির কাজ শুরু হয়। যদিও তা আজও চালু হয়নি। ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অডিটোরিয়াম কাজ অনেকটা এগিয়েছে। তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত সমিতির দাবি, অসমাপ্ত অডিটোরিয়ামের কাজ শেষ করতে গেলে আরও প্রায় ২ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ নিয়ে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মিহির চন্দ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এসে তো মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল, কলেজ-সহ বহু প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। সব কাজ কী একসঙ্গে করা সম্ভব? পরে নিশ্চয় প্রেক্ষাগৃহ নিয়ে ভাবা হবে।’’ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সনাতন মঙ্গলের কথায়, ‘‘অডিটোরিয়াম নিয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। আশা ছিল, অডিটোরিয়াম নিয়েও সভায় মুখ্যমন্ত্রী কিছু বলবেন। তা হয়নি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি অনেক প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন। আমরা ফের মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি জানাব।’’